চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বেলাল আহমদ বিশেষ প্রতিনিধি

লামায় লকডাউন পরিস্থিতিতে তামাক চাষীদের মাথায় হাত

প্রকাশ: ২০২০-০৪-০২ ১৯:৪১:৩৪ || আপডেট: ২০২০-০৪-০২ ১৯:৪১:৫৪

বেলাল আহমদ: বান্দরবানের লামায় তামাক কোম্পানীদের নিবন্ধনকৃত তামাক চাষীরা তামাক ঘরে তুলতে শুরু করে মার্চ মাস থেকে। নিয়ম অনুযায়ী তামাক পুড়িয়ে বিক্রির উপযোগী করে বাড়িতে স্তুপ করে রেখেছে তামাকের ব্যাল। করোনা ভাইরাস সংক্রমনের আশংকায় সরকার ঘোষিত সারা দেশব্যাপী হোম কোয়ারেন্টাইন ও লকডাউন কার্যক্রমে অর্থ সংকটে পড়েছে। তামাক বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হলেও, নেই কোন ক্রেতা।

ফলে নব্বই শতাংশ তামাক চাষীর মাথায় হাত পরেছে। চাষীরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে বলে জানাগেছে। বিষয়টি নিয়ে তামাক চাষীদের পক্ষে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানীর নিবন্ধনকৃত চাষী মোঃ রবিউল্লাহ সাংবাদিকদের কাছে লিখিত আবেদনের মাধ্যমে জানান, লামা উপজেলা ও বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের বেশির ভাগ আবাদী জমিতে বোরো মৌসুমে তামাক কোম্পানী গুলো চাষিদের নিবন্ধন করে তামাক চাষ করায়। তাদের তামাক কোম্পানীদের অর্থ ও তামাকের উপকরণ সামগ্রী দিয়ে চাষীরা তামাক চাষ করে থাকে।

উপজেলার নব্বই শতাংশ মানুষ এ তামাকের সাথে কোননা কোন ভাবে জড়িত। সে হিসাবে লামার প্রধান অর্থকারী ফসল হলো তামাক। তিনি আরো বলেন, এ তামাক চাষ করেই চাষীরা একটু লাভবান হয়। তামাক চাষ করতে গিয়ে চাষীরা অন্যের কাছ থেকে প্রচুর টাকা কর্য করতে হয়। তামাক নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে রোপন শুরো করে। এ তামাক মার্চ- এপ্রিলের দিকে প্রতি বছর তামাক কোম্পানী গুলো চাষিদের কাছ থেকে ক্রয় করে নেয়। তামাক বেশি দিন ঘরে রাখলে তার গুণগতমান নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ তামাক কোন কাজে আসেনা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাক বিক্রয় করতে না পারলে তামাক আর কেউ ক্রয় করেনা। পরে তামাক গুলো যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় পঁচে যায়। অন্যান্য বছর তামাক কোম্পানী গুলো মার্চ মাসের মধ্য সময় থেকে চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় শুরু করতো।

কিন্তু এ বছর দেশের সার্ভিক দূর্যোগময় পরিস্থিতির জন্য তামাক কোম্পানী গুলো এখনো তামাক ক্রয় শুরু করেনি এবং তামাক ক্রয় করবে কিনা এ ব্যাপারে চাষীদের কিছুই বলছেনা। চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয়ের ব্যাপারে আমরা তামাক কোম্পারীর ম্যানেজারদের সাথে কথা বলেছি। তামাক কোম্পানীর ম্যানেজারা আমাদেরকে জানিয়েছেন, ২০২০সালের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করার জন্য হেড অফিস থেকে এখনো অর্ডার আসেনি। সে জন্য চাষিদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করবো কিনা এখনো বলতে পারছিনা। এখন বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস প্রকোপের মধ্যে আপাতত তামাক ক্রয় বন্ধ রয়েছে। এদিকে আরেক চাষী মোঃ রুহুল আমিন জানিয়েছেন,আমরা তামাক চাষীদের ধারোনা, তামাক কোম্পানী গুলো করোনা ভাইরাসের সুযোগ নিয়ে স্বল্প মূল্যে তামাক ক্রয় করার জন্য বর্তমান সময়ে চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় করছেননা। এখন তামাক ক্রয় না করার মানে হলো চাষীদের জিম্মি করে রাখা। করোনা ভাইরাসের লকডাউনের কারণে তামাক চাষীরা অর্থ সংকটে পড়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করছে। চলছে চাষীদের ঘরে ঘরে কান্নার রোল।

এদিকে রূপসী পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য ও ব্রিটিশ টোবাকোর চাষী মোঃ আবু তাহের এবং জাপান টোবাকোর চাষী মোঃ আবু শামা জানিয়েছেন, ৯৯শতাংশ তামাক চাষী ধার কর্য করে এ তামাক ফলিয়েছে। পাওনাদাররা প্রতিদিন পাওনা টাকা খোঁজতে অাসছেন চাষীদের ঘরে ঘরে। আবার এ সময়ের মধ্যে করোনা ভাইরাসে সারা দেশের লকডাউনের কারণে তামাক চাষীদের ঘরে ঘরে খাদ্যের অভাবে হাহাকার চলছে। তাই চাষীদের জীবন বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত তামাক পাতা ক্রয় করার জন্য তামাক কোম্পানীর কাছে অনুরোধ করছি। এ ব্যাপারে তামাক কোম্পানীর লামার দ্বায়িত্বরতদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের কারণে জনসমাগম এড়াতে আমরা আপতত তামাক ক্রয় করছিনা। নতুন করে তামাক ক্রয়ের আদেশ আসলে আমরা চাষীদের কাছ থেকে তামাক ক্রয় শুরু করবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *