কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০২০-০৪-০৯ ০৭:২৫:০২ || আপডেট: ২০২০-০৪-০৯ ০৭:২৫:০৭
কাইছার হামিদ| করোনা ভাইরাসের প্রভাবে মহাসংকটে পড়েছে প্রিন্ট মিডিয়া। চট্টগ্রামে ৯০ ভাগ পত্রিকা বিক্রি হয়নি এমন সংবাদ চোখে পড়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে এই আতঙ্কে অনেকে পত্রিকা কেনা ও পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন। প্রিন্ট বন্ধ হয়ে অনলাইনে চলছে মানবজমিন, আলোকিত বাংলাদেশ, বাংলাদেশের খবর, ইন্ডিপেন্ডেন্টসহ অসংখ্য পত্রিকা। চট্টগ্রামে তিনটি পত্রিকা ছাড়া বাকীসব পত্রিকা প্রিন্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
অন্যদিকে, পাঠক বেড়েছে অনলাইনে। সংবাদপত্র পড়ে এমন ৯০ ভাগ মানুষ অনলাইন ও টিভির খবর নির্ভর। করোনার প্রভাবে বেড়েছে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার। ঘরে অলস সময় পার না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পড়ে রয়েছে বেশিরভাগ যুবক। অনলাইনে ঘরে বসে অফিস করছেন এমন স্যংখাও কম নয়।
করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্র শিল্পে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের পত্রিকাগুলো বন্ধের পর্যায়ে চলে গেছে। শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রকাশ সংকুচিত অথবা শুধু অনলাইন ভার্সন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। এমন খবর মিডিয়া পাড়ায়।
অনেক দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে লাশের মিছিল লম্বা হচ্ছে। এ কারণে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া অধিকাংশ দেশের সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠান লকডাউন করে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও একই পরিস্থিতি।
প্রভাব পড়েছে দেশের সংবাদপত্রেও। ছোট সংবাদপত্র প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। শীর্ষ দৈনিকগুলো সংকুচিত হওয়ার পথে।
করোনাভাইরাস একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এর প্রভাব চরমভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর পড়বে। এর প্রভাব সব শিল্পের মধ্যেই পড়বে। সংবাদপত্র শিল্পেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে।’
‘ইতোমধ্যে দেশের অনেক শিল্প-প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব কিছু বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ অবস্থায় পত্রিকার পাঠক ও হকাররা বাড়ি চলে গেছে। এতে পত্রিকা বিক্রি কমে যাচ্ছে। অপরদিকে বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে পত্রিকা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এ কারণে অনেকে ছাপানোর সংখ্যা, পত্রিকার নির্ধারিত পাতা কমিয়ে দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার পত্রিকা ভার্সন বন্ধ করে শুধু অনলাইন ভার্সন চালানোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এতে অনেক সংবাদকর্মী বেকার হয়ে পড়বে।’
লোহাগাড়া সংবাদপত্র এজেন্ট কাশেম বলেন, সব প্রতিষ্টান বন্ধ। পত্রিকা পড়ার লোক নেই। অনলাইন ও টিভি নির্ভর হয়ে গেছে লোকজন। সব হকার বিদায় করে দিয়েছি। আমি নিজে যা পারি তাই বিক্রি করছি। তিনি ১০ ভাগেরও নিচে পত্রিকা বিক্রি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
পত্রিকা এজেন্ট লোকমান হাকিম বলেন, পত্রিকার কাগজের মাধ্যমে ভাইরাস ছড়ায় এমন গুজবের কারনেও পত্রিকা বিক্রি হচ্ছে না। খুব খারাপ অবস্থা পার করছি।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্তের পর সব পত্রিকা ছাপানোর সংখ্যা কমে গেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে এই আশঙ্কায় মানুষ কাগজের তৈরি পত্রিকা হাতে নিচ্ছেন না। সব কল-কারখানা ও দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে পত্রিকা বিক্রি কমে যাওয়ায় ছাপানোর সংখ্যা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। পত্রিকা ছাপা ও পাতা সংকুচিত করা হচ্ছে। শুধু করোনাভাইরাসের সংবাদ দিয়ে একটি পত্রিকা তৈরি করা কঠিন।
মূলত, করোনাভাইরাসের এমন পরিস্থিতিতে মানুষ চাল-ডাল কিনবে নাকি সংবাদপত্র কিনবে? এমন পরিস্থিতিতে মানুষের সুষ্ঠুভাবে পরিবার নিয়ে বাঁচার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেখানে মানুষ সংবাদপত্র কেনার কথা ভাবছে না।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যারা চালু রাখবেন তারা কতদিন নিয়মিত করতে পারবেন তা বলা যাচ্ছে না। সংবাদপত্র বন্ধের ফলে অনেক সংবাদকর্মী চাকরিচ্যুত হবে। এখনো অনেক সংবাদকর্মী মানবেতর জীবন যাপন করছেন।