কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০২০-০৪-১৩ ০১:০৫:৫৬ || আপডেট: ২০২০-০৪-১৩ ০১:০৬:০২
কাইছার হামিদ|
সারা দেশ লকডাউন। এমন সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কার্যত ধস নেমেছে দেশের পোলট্রি ও ডেইরি শিল্প।
এ বিষয়ে জানতে কথা বলেছি পোল্ট্রি ফিড ব্যবসায়ী সমিতির চট্টগ্রাম দক্ষিণ, বান্দরবান ও কক্সবাজার আঞ্চলিক কমিটির আহ্বায়ক ও পোল্ট্রি খামারী সমন্বয় জাতীয় কমিটি’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক তৈয়ব তাহেরের সাথে। তিনি বলেছেন, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি তার ভাষণে ও ভিডিও কনফারেন্সে এ শিল্পকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। (২এপ্রিল) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নিজেও প্রেস কনফারেন্স করে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন এ শিল্প রক্ষায়।
তারই ধারাবাহিকতায়, পোলট্রি ও ডেইরির বিপণন, পরিবহন ও বিক্রিকে অন্যান্য কাঁচামালের সঙ্গে তুলনা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি বলে জানান তিনি।
যে তিমিরে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে উল্লেখ করে তৈয়ব তাহের বলেন, পোলট্রি মুরগি, ডিম ও বাচ্চা বিক্রি করতে পারছে না খামারিরা। এদিকে ডেইরি মালিকরা পারছেন না দুধ বিক্রি করতে। এতে পথে বসার উপক্রম হয়েছে দেশের কয়েক হাজার খামারি।
বিভিন্ন স্থানে পোলট্রি ও ডেইরি খামারের মালিকদের সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বাজারে বিক্রি করার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তাদের পণ্য বাজারজাত করার বিষয়ে মন্ত্রী জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা খামারিরা খবরের কাগজে পড়েছেন এবং টেলিভিশনের খবরে দেখেছেন। কিন্তু মাঠে এর কোনো বাস্তবায়ন নেই। যার কারনে পোলট্রি পন্যবাহী গাড়ি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছে।
খামারীরা জানান, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১১৫-১২০ টাকা,যা দীর্ঘদিন থেকে বিক্রয় মূল্য ছিল ৯০/৯৫ টাকা, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতিতে দাম চট্টগ্রামে ৭৫/৮০ টাকা, কক্সবাজারে ৭০/৭২ টাকা।
প্রতি ডিমের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা ৮০ পয়সা, বিক্রয় মূল্য বর্তমানে ৫ থেকে ৫টাকা ৫০ পয়সা। দেশের অনেক জায়গায় ৪ টাকায় নেমেছে। পোল্ট্রি খাদ্যের কাঁচামাল ৮০ শতাংশ আমদানি নির্ভর হওয়ায় মারাত্মক কাঁচামাল সংকট শুরু হয়েছে দামও উর্ধমুখী।
তাছাড়া প্রতিটি বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮/৩০ টাকা হলেও বিক্রি হচ্ছে ৪/৫ টাকায়, অবিক্রীত থাকছে ৫০% বাচ্চা, একমাস পর স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে চরম সংকট হবে পোল্ট্রি মার্কেটে।
এদিকে দুধ কিনছে না কেউ। পাড়ায় পাড়ায় হকারি করে ৩০/৪০টাকা লিটার দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। প্রতিষ্টান লকডাউন থাকায় দুধ কিনছে না। হকারি করেও বিক্রি না হওয়ায় পথে বসবে ডেইরী ফার্ম মালিক।
তারা বলছেন, আর কিছু দিন এই অবস্থা থাকলে মুরগি, ডিম ও দুধ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ব্রয়লার মুরগির ব্যবসা যারা করেন তারা অনেকে ইতোমধ্যে চালান হারিয়ে বাড়িতে বসে আছেন। এদিকে হেচারির মালিকরা কম দামে বাচ্চা দিবে (৩২ টাকার বাচ্চা ৪/৫ টাকা) তবুও তারা ব্যবসা করতে রাজি হচ্ছেন না।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম পোলট্রি এবং ডেইরির আর যেন কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ মতে, করোনা সংকটকালীন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। তাই প্রাণিজ পুষ্টির উৎস দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং এ সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয় থেকে পোলট্রি-ডিম, একদিন বয়সী মুরগির বাচ্চা, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশুর খাদ্য, দুগ্ধজাত পণ্য, অন্যান্য প্রাণী ও প্রাণিজাত পণ্য, মাছ, মাছের পোনা ও মৎস্য খাদ্য সরকার ঘোষিত ছুটিকালীন নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন, পরিবহন ও বিপণন সচল রাখার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেয়া হয়েছে।
সূত্রে প্রকাশ, সরকার যে প্রণোদনা দিয়েছে বা সাড়ে ৪ ভাগ হারে যে ঋণ দেয়ার কথা বলছে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন হলে খামারিরা খুশি হবে। এ ছাড়া খামারীরা যে পণ্য উৎপাদন করছে তা ঠিকমতো বাজারজাত করতে পারলে খামারিরা লাভবান হবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত স্বাভাবিক দামে দুধ বিক্রি করতে পারছে না খামারীরা।
এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কিন্ত মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। লোকজন দোকান খুলতে পারছেন না। গাড়ি চলাচলে পুলিশ বাধা দিচ্ছে। খামারিরা মুগির বাচ্চা কিনছেন না। ঢাকায় মুরগি পাঠাতে চাইলে গাড়ির ড্রাইভার রাজি হচ্ছেন না। রাস্তায় খেতে না পারা এবং পুলিশের নানা ধরনের হেনস্তায় ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চায় না। এ অবস্থায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে এই পোলট্রি শিল্পে। খামারীরা আশা করেন এ সংকট নিরসনে সরকার অতি দ্রুত একটি উদ্যোগ নেবেন।