চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

কাইছার হামিদ

ঘরআটক: তবু আনন্দ, তবু শান্তি, তবু বাংলা নববর্ষ!

প্রকাশ: ২০২০-০৪-১৪ ১৩:২৬:৩৮ || আপডেট: ২০২০-০৪-১৪ ১৩:২৬:৪২

কাইছার হামিদ|

আজ আমাদের প্রাণের পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষ। ঐতিহ্যবাহী এ দিনটিতে বাঙালি তার প্রাণের আবেগ ঢেলে দেয়। মেতে ওঠে নানা উৎসবে। তবে স্মরণকালের ইতিহাসে এবারই সে আবেগে ভাটা পড়েছে। গোটা বিশ্বকে গ্রাস করেছে করোনাভাইরাস। করোনা ছোবল দিয়েছে বাংলাদেশেও। যার কারণে প্রাণের বৈশাখে নেই আনন্দ, নেই উৎসব। ঘরআটক সবাই। তবু আনন্দ, তবু শান্তি। কারন আজ বাংলা নববর্ষ। গোটা দেশ এখন লকডাউনে। কালো ছায়ায় ঢেকে গেছে। তবুও আজ আমাদের প্রাণের পহেলা বৈশাখ।

আজ আর রমনার বটমূলসহ কোথাও প্রাণের উচ্ছাস নেই। ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ সংগীতের সুর ছুঁয়ে যাওয়া নেই। চারুকলার শিল্পীদের রংতুলির আঁচড় নেই। অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলে জীবনকে ভরিয়ে দেয়ার জন্য নেই মঙ্গল শোভাযাত্রা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সেই চিরচেনা দৃশ্য আজ আর দেখা যাবে না। না দেখা আর না পাওয়ার মধ্যে তবুও আশা জেগে থাকবে, প্রত্যাশা ডানা মেলে থাকবে। ঘরে ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে আনন্দের সেই বাঁধভাঙার জোয়ার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, আমরা ঘরে বসেই এবারের নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করব।

কবিগুরুর কালজয়ী গান ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/ অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’ গেয়ে আহ্বান করবো নতুন বছরকে।

অতীতের সকল জঞ্জাল-গ্লানি ধুয়ে-মুছে আমরা সামনে দৃপ্ত-পায়ে এগিয়ে যাবো; গড়ব আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যত।

চৈত্রসংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৬ সালকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৭। সকালে ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। স্বাভাবিকভাবেই সে স্বপ্ন, করোনাভাইরাসমুক্ত নতুন বিশ্ব-নতুন বালাদেশ। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বাঙালি করোনা মহামারি থেকে সহসা মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই আজ প্রথমবারের মতো নতুন বছরকে বরণ করে নেবে তেমন কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই। একটু পেছনে! কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। হিজরি চান্দ্রসন ও বাংলা সৌর সনের ওপর ভিত্তি করে প্রবর্তিত হয় নতুন এই বাংলা সন।

১৫৫৬ সালে কার্যকর হওয়া বাংলা সন প্রথমদিকে পরিচিত ছিল ফসলি সন নামে, পরে তা পরিচিত হয় বঙ্গাব্দ নামে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলাবর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। উৎসবের পাশাপাশি স্বৈরাচার-অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও এসেছে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে বের হয় প্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রা। যা ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।

বর্তমানে নববর্ষ উদযাপন পরিণত হয়েছে বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে। পহেলা বৈশাখের ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে-সঙ্গে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আয়োজনে মেতে ওঠে সারাদেশ। আজ ঘরআটক। তারপরও ঘরে ঘরে উৎসব হোক। আনন্দ হোক। বয়ে আসুক সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি। প্রার্থনা করি, অন্ধকার কেটে দেখা পাবো আলোর।

সম্পাদক – বীর কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *