চট্টগ্রাম, , বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

মিজবাউল হক চকরিয়া অফিস

চকরিয়ায় চর দখলে নিতে ৩০টি বসতবাড়িতে অগ্নিসংযোগ আগুনে পুড়ে অঙ্গার বৃদ্ধা, গুলিবিদ্ধসহ আহত অর্ধশত নারী-পুরুষ, কোটি টাকার সম্পদ লুট

প্রকাশ: ২০২০-০৫-১৪ ১৭:৩৯:৩২ || আপডেট: ২০২০-০৫-১৪ ১৭:৩৯:৩৭


চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের জায়গার দখল নিতে বৃহস্পতিবার ভোররাতে সাহরি খাওয়ার পর একযোগে সশস্ত্র ৩শতাধিক গ্রামবাসী গিয়ে একটি পাড়ায় নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় একান্নবর্তী পরিবারের অন্তত ৩০টি বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। লুট করে নেওয়া হয়েছে নগদ টাকা গবাদিপশু, মূল্যবান মালামালসহ অন্তত ২ কোটি টাকার সম্পদ।


এ সময় আগুনে পুড়ে মারা গেছে পঞ্চাশোর্ধ এক নারী। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন বৃদ্ধ নারী-পুরুষসহ অন্তত ৫০ জন ব্যক্তি। তাদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।


উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের মাতামুহুরী নদী তীরের খিলছাদক গ্রামের ডাংগারচর এলাকায় এই নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাটের ঘটনাটি ঘটে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া বৃদ্ধার নাম মনোয়ারা বেগম (৫৫)। তিনি ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী।


সন্ত্রাসীদের এলাপাতাড়ি গুলি ও পিটুনিতে ২৬ পরিবারের ৫০ সদস্য কমবেশী আহত হয়েছে। আহতরা হলেন, মো. আলম (৪৫), আজিজুল হক (২২), রফিকুল ইসলাম (৪০), মর্জিনা বেগম (২০), সাজ্জাদ হোসেন (২১), মুরাদ (২৩), মোজহের আহমদ (৬৫), আবু ছালেক ((৪৫), জান্নাত আরা বেগম (২২), মর্জিনা বেগম (২০), মনোয়ারা বেগম (৪৫), ছেনু আরা বেগম (২৮), শাহানা বেগম (৩৫), আবদুল জব্বার (৪০), মো. হানিফ (৬৫), আলী আকবর (৫০) জেবুন্নেছা বেগম (৪৫), জনু আরা বেগম (৪৫)। অপর আহতদের নাম পাওয়া যায়নি।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে তাদের গ্রামের বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। তবে কয়েকবছর ধরে নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা দিনদিন সিকিস্তি হয় তথা জেগে উঠে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু নদীর ওপার তথা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপারে এসে বার বার জেগে ওঠা জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।


প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার ভোররাতে সাহরি খাওয়ার পর পরই বরইতলী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর দক্ষিণ পাড়ার মো. ছালু, মো. বাবুল, বেলাল উদ্দিন ও ইরফান উদ্দিনের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক সশস্ত্র সন্ত্রাসী এসে একযোগে এপারের খিলছাদক গ্রামের ডাঙ্গারচরের অন্তত ২৬টি বসতবাড়িতে একযোগে হামলা ও লুটপাট চালায়। এসময় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অন্তত অর্ধশত রাউন্ড ফাঁকা গুলিও ছোড়ে। ফাঁকা গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। পরে একযোগে সবক’টি বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে সব বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় কোটি টাকার মালামাল লুট ছাড়াও বেশ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করে তারা।
ক্ষতিগ্রস্থ লোকজনের দাবী বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন সিকদার ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার দিদারুল ইসলামের ইন্দনে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. হানিফ নামের একব্যক্তি বলেন, ১৫ বছর বিদেশে ছিলাম। নগদ ১ লক্ষ ২০হাজার টাকাসহ জীবনের অর্জিত সবকিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
নবী হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার মেয়ের বিয়ের জন্য ঘরে রাখা ১লক্ষ ৬০হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।


ক্ষতিগ্রস্ত নুরুল মোস্তফা বলেন, গত ৭ মে বিকালে একই কায়দায় সন্ত্রাসীরা ওই জমি দখলে নিতে হামলা চালিয়েছিলেন। এসময় তাদের গুলিতে ৫জন আহত হয়। এ ঘটনায় নুরুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১১ মে চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় ২০ জনকে আসামী করা হয়।
তিনি আরো বলেন এ মামলায় পুলিশের নিস্ক্রয়তার কারণে সন্ত্রাসী ফের এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে।
এদিকে এই নারকীয় তাণ্ডবের খবর পেয়ে কক্সবাজার-১ আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ুয়া, বরইতলী ও কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও মক্কী ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, কৈয়ারবিলের খিলছাদক অংশে মাতামুহুরী নদী সিকিস্তির জায়গার দখল নিতে এই নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একদল গ্রামবাসী। যারা এই তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত রয়েছে তাদেরকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। যারাই এই অমানবিক ঘটনায় জড়িত থাকুক তাদেরকে কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, অমানবিক এই ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করে জমা দিতে এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এ ছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। ##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *