কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০২০-০৫-২৫ ০১:২৭:২৩ || আপডেট: ২০২০-০৫-২৫ ০১:২৭:৩৮
কাইছার হামিদ| পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ ঈদের সওগাত নিয়ে এলো। আজ ঈদ। বন্দিদশার ঈদ। নেই উচ্ছ্বাস, নেই আনন্দ। নেই নতুন কাপড়ের সুগন্ধী।
সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেয় সবাই। যারা সারা বছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরায়। ঈদের আনন্দ কেবল সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়। কিন্তু না?
এবারের ঈদ আমাদের কাছে ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে কালো ছায়া। ঈদ আনন্দ নেই! ঘরে থেকেই ঈদ উদযাপন। সাম্য নেই এখন। সবার মনে ক্লান্তির চাপ।
অন্যরকম একটি ঈদ উদযাপন করছি আমরা। বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের জন্য এমন ঈদ আগে কখনো আসেনি। এবারের ঈদ কষ্টের, এবারের ঈদ হচ্ছে বেদনার। এবারের ঈদ স্বজন হারানোর এবং বন্দিদশার মধ্যেই ঈদ।
করোনায় প্রাণ গেলো। আম্পানে প্রাণ গেলো। লাশের মিছিল দীর্ঘ হলো। না জানি আর কতো দীর্ঘ হবে। আমি আমার রক্তের দু’ই ভাইকে হারালাম। আমার মা-বাবা দু’ই সন্তানকে হারালো। আমাদের ঘরে কিসের ঈদ? আমাদের অশ্রু ঝরে ফোঁটায় ফোঁটায় আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টির মতোই ঝরে। কি আনন্দ! কি বেদনা! কি কষ্ট! কিছুইতো বুঝি না! ঘর থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে! খাটে শুয়ে থাকলে ভিজে একাকার হয়ে যায় বালিশ।
ঈদের দিনের প্রবাসীরা একাকী রুমে শুয়ে নীরবে নিভৃতে অশ্রু ঝরায়। তাদের কষ্ট যাতনাগুলো চোখের পানিতে বের হয়ে আসে। না পারে কাউকে কইতে, না পারে সইতে।
শুয়ে শুয়ে প্রবাসীরা ভাবে মা-বাবার কথা। ভাবে জীবনসঙ্গীনির কথা। আদরের খোকা খুকির কথা। যতোই ভাবে ততই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে। শত চেষ্টা করেও চোখের নদীর অশ্রুবন্যাকে বাঁধ দিতে পারে না। পারে না নিজেকে শান্ত করতে। ঈদের আনন্দঘন দিনে তাদের এই কষ্টের কথা কেউ জানে না একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। সৌদি আরবে একবার ঈদ করেই বুঝতে পেরেছি।
প্রতি বছর ঈদ আসে আমাদের জীবনে আনন্দ আর সীমাহীন প্রেম প্রীতি, ভালবাসা ও কল্যাণের অপার বার্তা নিয়ে। তবে এবারের ঈদ আমাদের কাছে ভিন্ন। বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব এর কারণে জনজীবনে নেমে এসেছে এক কালো ছায়া। তারপরও ঈদ মানে আনন্দ।
মহান আল্লাহর নেয়ামক হিসেবে আমাদের মাঝে এসেছে অপার সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে ঈদ-উল-ফিতর। এ ঈদ-উল-ফিতরে এটিই কামনা করি বিশ্ব থেকে ধুয়ে, মুছে যাক করোনা। করোনায় যাদের মৃত্যু হয়েছে, যেন তারা শহীদি মার্যাদা পায়। অসুস্থরা সুস্থ হোক। সবার জীবন আনন্দে ভরে উঠুক।
বীর কণ্ঠের সকল পাঠক, শুভ্যানুধায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা, বীর কণ্ঠ পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।