এডমিন বীর কন্ঠ
প্রকাশ: ২০২০-০৮-০১ ১৯:০০:৩৮ || আপডেট: ২০২০-০৮-০১ ১৯:০০:৪৩
ডেস্ক রিপোর্ট, বীর কন্ঠ :
ত্যাগ আর উৎসর্গের আদর্শে মহিমান্বিত পবিত্র ঈদুল আজহা আজ শনিবার। এবার ঈদ এসেছে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। করোনা মহামারির সঙ্গে বন্যার আঘাতে বিপর্যস্ত দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অগণিত মানুষ। তাদের জীবনের ওপর নেমে আসা এ দুঃসময়ের অন্ধকার কবে কাটবে, তাও অজানা।
এবারের রোজার ঈদের মতো এই ঈদের সঙ্গেও আসেনি ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়া চিরায়ত খুশির আমেজ। গত মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনা মহামারি তিন হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়েছে। লাখো মানুষের জীবিকা ছিনিয়ে নিয়েছে। রোজগার হারানো মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামমুখী হয়েছে। সঞ্চয় ভেঙে, ত্রাণে কিংবা ধারদেনায় যাদের জীবন চলছে তাদের ঘর থেকে ঈদ দূর আকাশের চাঁদের মতোই দূরের বিষয় হয়ে গেছে।
তবুও জীবনের গতি থেমে থাকে না কোনো বাধাতেই। যত দুর্যোগই থাকুক, ঈদ বলে কথা! সবকিছুর পরও এই দিনটিতে একে অন্যকে শুভেচ্ছা জানাবে মানুষ। সাধ্যমতো দান, খয়রাত, কোরবানির মাংস বিলি, খাওয়া-দাওয়া হবে। দুঃসহ দিনে কিছুটা হলেও আনন্দের সুযোগ তৈরি হবে।
মহামারীর এই দুঃসময়ে ঈদুল আজহা যেন সব আঁধার সরিয়ে মানুষের মধ্যে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসে সেই প্রত্যাশা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে ঈদ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সারা বিশ্বকে আতঙ্কিত ও স্থবির করে দেওয়া করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই মাস দুয়েক আগে এসেছিল মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ভাইরাস আতঙ্কের সেই সময়ের ঘরবন্দি দশা ঘুচলেও এখনও প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন বহু মানুষ।
এই সঙ্কটের দিনেও ঈদ ঘিরে উজ্জীবিত হওয়ার চেষ্টা করছে মানুষ, সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোরবানির জন্য সামর্থ্যবান অনেকে পশু কিনেছেন।
ঢাকার হাটগুলোতে গরুর দাম কম ওঠায় শুরুতে ক্রেতারা খুশি ছিলেন, বিক্রেতাদের মধ্যে ছিল হাহাকার। তবে শেষ দিনে অনেক হাটে গরুর সঙ্কট দেখা যায়, দাম বাড়ায় বিক্রেতারাও ছিলেন খুশি।
এই মহামারীতে সরকারি-বেসরকারি সব চাকরিজীবীকে যারা যার কর্মস্থলের এলাকায় ঈদ করতে বলেছে সরকার। তারপরও সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ির পথ ধরেছেন অনেকে।
পদ্মায় তীব্র স্রোতে পারাপার ব্যাহত হওয়ায় শুক্রবার ঈদের আগের দিন শিমুলিয়ায় ছিল ব্যাপক ভিড়, পাটুরিয়ায় ছিল দীর্ঘ জট। ঢাকা থেকে উত্তরের পথে টাঙ্গাইল মহাসড়কের থেমে থেমে যানজট চলে সারাদিন।
আজ সকালে জাতীয় ঈদগাহে কোনো ঈদ জামাত হচ্ছে না। রোজার ঈদের মতই খোলা ময়দান বাদ দিয়ে সারা দেশে মসজিদে মসজিদে ঈদ জামাতের আয়োজন হয়েছে।
জামাতে একসঙ্গে নামাজ আদায়ের সুযোগ হলেও কোলাকুলি করা যাবে না, হাত মেলানোও বন্ধ। করোনাভাইরাস অতি ছোঁয়াচে বলেই এ ব্যবস্থা। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, সব ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, “এ বছর এমন একটা সময়ে ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন মহামারী করোনার ছোবলে বিশ্ববাসী বিপর্যস্ত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অনেক মানুষই মানবেতর জীবনযাপন করছে। এসব মানুষের কল্যাণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
“করোনা মোকাবেলায় সকলকে সচেতন হতে হবে এবং জীবনযাপনে ও চলাফেরায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজে সুস্থ থাকি, অন্যকেও সুস্থ রাখি- এটাই হোক এবারের ঈদুল আজহায় সকলের অঙ্গীকার।”
সবাইকে সরকার নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি দিতে এবং কোরবানির বর্জ্য অপসারণসহ সব কাজে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, “প্রিয় দেশবাসী, আসসালামু আলাইকুম। বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনাভাইরাস মহামারীর এই দুঃসময়ে সকল আঁধার কাটিয়ে ঈদুল আজহা আমাদের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ।
“আসুন কোরবানির ত্যাগের মহীমায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করি। দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সকল বাংলাদেশি ভাইবোনকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সুস্থ থাকুন, নিরাপদ থাকুন, ঈদ মোবারক।”
শিমুলিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ভিড়শিমুলিয়ায় ঘরমুখো মানুষের ভিড়পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এবার আমরা এক সঙ্কটময় সময়ে ঈদুল আজহা উদ্যাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। আমাদের সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমরা জনগণেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
“আল্লাহ বিপদে মানুষের ধৈর্য্য পরীক্ষা করেন। এসময় সকলকে অসীম ধৈর্য্য নিয়ে সহনশীল ও সহানুভূতিশীল মনে একে অপরকে সাহায্য করে যেতে হবে।”
এই বিপদের সময় স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, ব্যাংকার ও পরিচ্ছন্নতাকামীসহ যারা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন, তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান সরকারপ্রধান।
এ ছাড়াও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরসহ শীর্ষ রাজনীতিকরা।
ধর্মীয় চিন্তাবিদরা বলেছেন, কোরবানির ঈদ যতটা না আনন্দের তার চেয়ে বেশি উৎসর্গের। পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, চার হাজার বছর আগে আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু নিজ সন্তান হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নেন। কিন্তু আল্লাহর কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর এই ত্যাগের মনোভাবের কথা স্মরণ করে প্রতিবছর মুসলমানরা কোরবানি করে থাকেন।
কোরবানির মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করার বিধান রয়েছে। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোনো দিন পশু কোরবানি দেওয়া যায়। সে হিসেবে রবি ও সোমবারও কোরবানি করা যাবে।
রাজধানীতে প্রধান ঈদের জামাত হবে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৭টায়। রমজানের ঈদে রাজধানীর ছাদে ছাদে ঈদ জামাত হয়। এবারও একই আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।