চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

মিজবাউল হক চকরিয়া অফিস

‘গরুচোর’ অপবাদে মা-মেয়েকে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান

প্রকাশ: ২০২০-০৮-২৩ ১৬:৫৬:০৫ || আপডেট: ২০২০-০৮-২৩ ১৬:৫৬:১১

মিজবাউল হক, চকরিয়া :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় বয়ষ্ক মা ও তরুণী মেয়েকে ‘গরুচোর’ আখ্যা দিয়ে অমানষিকভাবে পিটিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। পরে কোমরে রশি বেঁধে মা-মেয়েকে প্রকাশ্যে কয়েক কিলোমিটার রাস্তা হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় উপজেলা হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে। সেখানে চেয়ারম্যান নিজেও তাদের আবার প্রহার করেন বলে অভিযোগ উঠে। একপর্যায়ে তাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে পুলিশ এসে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে চকরিয়া সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে।


তারা হলেন, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শান্তিরহাট কুসুমপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের স্ত্রী পারভীন আক্তার (৫৫), মেয়ে সেলিনা আক্তার (২৮), রোজিনা আক্তার (২৫) ছেলে মো. আরমান (৩০) ও পেকুয়া উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের মো. ছুট্টু (৩৮)।


শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর এটি শনিবার সবখানে জানাজানি হয়। পরে তাদের বিরুদ্ধে পহরচাঁদা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মাহমুদুল হক বাদী হয়ে ৫জনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় গরু চুরি মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ আহতদের হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।


তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘটনার ছবি প্রকাশের পর শনিবার রাতে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে যায়। নিন্দার ঝড় উঠে সবমহলে। স্থানীয় চেয়ারম্যান সহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার এবং দল থেকে বহিস্কারের দাবী উঠে।


অভিযোগ উঠেছে, হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চৌকিদার এবং দূবৃর্ত্তরা মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেধে নির্দয়ভাবে পিঠিয়েছেন। ওইসময় হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলের পাশে থাকার পরও উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি। মা-মেয়ে মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তখন পুলিশের হাতে তুলে দেন চেয়ারম্যানের লোকজন।

স্থানীয়রা জানান, তদন্ত কেন্দ্রের আইসি পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম কোন ধরণের ঘটনার যাচাই বাচাই না করে তাদেরকে আটক করেছে। পরে মা-মেয়ে সহ আরও দুইজনকে গরুচুরির মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

এবিষয়ে চকরিয়া থানার হারবাং তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার স্থানীয়রা ফাঁড়িতে খবর দিলে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। পুলিশ গিয়ে গুরুতর অবস্থায় মা-মেয়েকে উদ্ধার করে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে আসে।

তিনি আরও জানান, স্থানীয় একব্যক্তির দায়ের করা গরু চুরির মামলায় তাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে মা-মেয়েসহ চার জনের বাড়ি পটিয়ার শান্তির হাটে। অপরজনের বাড়ি পেকুয়া লালব্রিজ এলাকায়। তবে তাদের সঠিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে তাদের উপর নির্যাতন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন অভিযোগ কেউ করেনি। পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে যায় তখন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। আগে বিপদাপন্ন মা-মেয়েকে হেফাজতে নিয়ে আসাটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি। কী হয়েছে তা তখন জানতে চাইনি। আর ভুক্তভোগী কিংবা অন্য কেউ এখনও অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, একদফা মা-মেয়ের ওপর নির্যাতন চলার পর হারবাং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম চৌকিদার পাঠিয়ে তাদেরকে রশিতে বেঁধে তার কার্যালয়ে এনে আবার নির্মমভাবে নির্যাতন করেন। উপর্যুপরি নির্যাতন শেষে চেয়ারম্যানের লোকেরাই পুলিশ এনে তাদের হাতে মা-মেয়েকে মুমূর্ষু অবস্থায় তুলে দেন।


অভিযোগ সম্পর্কে জানতে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে স্থানীয় লোকজন জানায়, মা-মেয়েসহ সিএনজির ৫ যাত্রী কোথা থেকে আসছে, কোথায় যাচ্ছিলেন ও সিএনজি থেকে গরু উদ্ধারের বিষয়টি এখনো ধোঁয়াশা রয়ে গেছে।


চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ভুক্তভোগী কেউ যদি অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখার পর তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে চকরিয়া থানাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *