চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

admin

চসিক নির্বাচনে থামছে না উত্তাপ-আতঙ্ক

প্রকাশ: ২০২১-০১-২২ ১৪:২৫:৫০ || আপডেট: ২০২১-০১-২২ ১৪:২৫:৫৬

আরমাত্র ৫ দিন পরই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন। নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। গত বুধবার নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সহিংস ঘটনায় গরম হয়ে উঠেছে ভোটের মাঠ। এতে ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকেরাও। বিএনপি মেয়র প্রার্থী ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরা শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

গত ৮ জানুয়ারি থেকে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। সহিংসতা দিয়ে শুরু হয় প্রচারণা। প্রচারণা শুরু থেকে প্রতিদিনই সংঘাত-সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছিল ছিল নির্বাচন কমিশনে। বেশির ভাগ অভিযোগ ছিল পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, ভয়ভীতি দেখানো ও প্রচারণায় বাধা।

নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া ৫৩ টি অভিযোগের মধ্যে বেশি অভিযোগ ছিল আওয়ামী লীগ দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঘিরে। গত দু-এক দিন থেকে নির্বাচনী পরিবেশ অশান্ত হয়ে উঠেছে। বেড়ে শঙ্কা আর আতঙ্ক।  বিএনপির দাবি, গত বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থীসহ দলের শীর্ষ নেতা ও কর্মীদের দলীয় কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

এছাড়াও বাকরিয়া, পাহাড়তলী ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের উপর হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলা চালানোর পর উল্টো দলীয় দলীয় নেতাকর্মীদের নামে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আতঙ্কে রয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এসব ঘটনায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পূর্বাভাস দেখা দিয়েছে।

গতকাল বিএনপিদলীয় প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন নির্বাচনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও শঙ্কা প্রকাশ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে এ অভিযোগ দিয়েছেন। এতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আট দফা পেশ করেছেন তিনি।

ভোটের আগামী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা-উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আগামী যে কয়দিন আছে, সেই দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা পুরোপুরি অনিশ্চিত।’ নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই উত্তাপ-উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। পোস্টার ছেঁড়া, কর্মীদের ওপর হামলা-ভাঙচুর ও প্রচারে বাধা, বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনের গাড়ি বহরে হামলার পর সহিংসতার মাত্রা আরও বেড়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে উত্তাপ ছড়িয়েছে। 

গতকাল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেছেন। রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে নগর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হাসান মাহমুদ শমসের অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিএনপি প্রার্থী ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য ভোটার স্লিপ প্রদানের অভিযোগ দায়ের করেছেন। আর ডা. শাহাদাতের পক্ষে অভিযোগ দায়ের করেছেন নাগরিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক একরামুল করিম। পশ্চিম বাকলিয়া বিএনপির প্রচারের হামলা, পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ করেছেন।

দুই মেয়র প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ ছাড়াও কাউন্সিলর প্রার্থীরাও পরস্পরবিরোধী অভিযোগ দায়ের করেছেন। বেশির ভাগ অভিযোগ ছিল পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, ভয়ভীতি দেখানো ও প্রচারণা বাধা। অভিযোগ-পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচনে সহিংসতা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম সভাপতি প্রফেসর সিকান্দর খান বলেন, ‘নির্বাচনে যাদের মধ্যে আস্থার সংকট রয়েছে, তারাই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য পেশীশক্তি ব্যবহার করছে। এসব ঘটনায় ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাওয়ায় নিরুৎসাহিত হবে। উৎসবমুখর পরিবেশ আতঙ্কে পরিণত হবে।’

সুজন সভাপতি সিকান্দর খান বলেন, নির্বাচনে ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিপক্ষ নিষ্ক্রিয় করার মানসে গোলমাল সৃষ্টি করা হয়। ভোটারদের সক্রিয় উপস্থিতি মেনে নিতে না পারায় তা করা হয়। এটা গণতন্ত্রের জন্য শুভনীয় নয়।

চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘অভিযোগগুলো তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠানো হচ্ছে। অভিযোগের তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের ওপর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

২৮নম্বর পাঠানটুলি ওয়ার্ডে সরকারদলীয় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সংঘাতে আজগর আলী বাবুল নামে এক ব্যবসায়ী নিহত হন। এছাড়াও বাকলিয়া এলাকায় ছুরিকাঘাতে আহত আশিকুর রহমান রোহিত এক ছাত্রলীগকর্মী নিহত হন। ফেসবুক পোস্ট, নির্বাচনী দ্বন্দ্ব নাকি মাদকবিরোধী পোস্টার ছেঁড়া-তা নিয়ে রহস্যই রয়ে গেল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *