মিজবাউল হক চকরিয়া অফিস
প্রকাশ: ২০২১-০২-০৭ ২১:৩৯:৪৫ || আপডেট: ২০২১-০২-০৭ ২১:৩৯:৫২
চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি|
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মাদক কারবার, মোটরসাইকেল চুরি, নারী কেলেংকারী, গরুচুরি ও জায়গা দখলসহ নানা অপকর্মে জড়িত কথিত ভূয়া সাংবাদিক জসীম উদ্দিন ওরপে ল্যাংগ জসিম ওরপে স্ক্র্যাপ জসিমকে (৩০) ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তার সহযোগি হোছন আলী পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় জসীমকে।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পৌনে বারোটার দিকে উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের গোলাম ছোবহান মিয়ার ঘোনাস্থ মাদক কারবারি হোছন আলীর বসতবাড়ির উঠানে এই অভিযান চালায় হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির একটি দল।
গ্রেপ্তার জসীম উদ্দিন হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কোরবানিয়া ঘোনার রফিক উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় জসীম উদ্দিন এবং তার সহযোগী মৃত সোলতান হাকিমের ছেলে হোছন আলীকে আসামি করে চকরিয়া থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে। হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোর্শেদ বাদী হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি রুজু করা হয়েছে।
হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. মাহ্তাবুর রহমান জানান, বিজয় টিভির কথিত সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারসহ নানা অপকর্ম করে আসছিল জসীম উদ্দিন এবং হোছন আলী। অবশেষে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৫১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় জসীমকে। তবে এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায় মাদকসহ বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামি হোছন আলী।
হারবাং ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অসংখ্য ব্যক্তি দাবি করেছেন, সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে মানুষের জায়গা দখল, ইয়াবাসহ রকমারী মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে বহু অপকর্ম করে আসছিল জসীম উদ্দিন। তার অত্যাচারে ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিরীহ মানুষ অতিষ্ট হয়ে পড়ে।
তারা আরো জানান, অতীতে হারবাং পুলিশ ফাঁড়িতে যারা দায়িত্ব পালন করে গেছেন, তাদের সহযোগিতা নিয়েই জসীম উদ্দিন নানা অপকর্ম করলেও পার পেয়ে যায়। বিশেষ করে সর্বশেষ দায়িত্ব পালনকারী ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম এবং একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা পেয়ে বাংলা মদের ডেরা আজিজনগর থেকে মাদকের বিশাল চালান নিয়ে চকরিয়া, পেকুয়া, বাঁশখালী, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্নস্থানে পাচারকাজে লিপ্ত ছিল সে। বিনিময়ে মাদক ব্যবসার টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করতো তারা।
চকরিয়া থানার ওসি শাকের মোহাম্মদ যুবায়ের বলেন, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার কথিত সাংবাদিক জসীম এবং তার সহযোগি হোছন আলীর (পলাতক) বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। ইয়াবাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার জসীমকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন আদালত। পলাতক হোছন আলীকে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
খবর নিয়ে জানা যায়, বিজয় টিভির প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয় সে। বিজয় টিভির সাথে যোগাযোগ করা হলে কর্তৃপক্ষ জানান এ নামে কোন প্রতিনিধি নেই। গত ঈদুল ফিতরের সময় এলাকায় বেশ কিছু গরু মহিষ চুরি হয়। বেলাল নামের এক যুবক স্থানীয়দের হাত ধৃত হয়। জনসম্মুকে বেলাল বলেন, স্ক্র্যাপ জসিম ও সে, গরু-মহিষ চুরি করে। এ ঘটনার পর থেকে জসিম পালিয়ে বেড়ায়। চুরিকৃত গরু তার এক আত্মীয় গায়েব করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে এলাকায়। এলাকার বাইক চুরির সাথেও সে জড়িত বলে একাধিক সূত্রে প্রকাশ। যেখানে যায় সেখানে বিয়ে করে স্ত্রীদের মাধ্যমে মাদক ব্যবসা চালায় সে। এমন অভিযোগ অহরহ। তাদের (স্ত্রী) ব্যবহার করে ঢাকায় এক আত্মীয়ের কাছে চালান যায় বলে সন্দেহ পুলিশের। এ ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, লোহাগাড়ায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে পারভীন নামের এক মেয়েকে বিয়ে করে। তার ঘরে দু’সন্তান হয়। ওই স্ত্রীকে মাদক ব্যবসা করতে বাধ্য করে। পারভীন তাকে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতা না করায় ভরণ-পোষন বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে সালিশ হয় বহুবার। অবশেষে তাকে তালাক দেয়। এখন মানবেতর জীবন যাপন করছে পারভীন।
পরে, জুলেখা নামের এক মায়ানমার নাগরিককে বিয়ে করে জসিম। বিয়ের পর পরই জুলেখাকে দিয়ে মাদক সম্রাজ্য তৈরী করে সে। এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করলে নারী নির্যাতন মামলার হুমকি দেয়। জসিমের অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বার্মায়া জুলেখা অনেক নিরহ মানুষকে নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়েছে। স্থানীয়দের ধাওয়া খেয়ে জসিম পালিয়ে যায় পেকুয়ায়। নিজকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সেখানেও আরেক বিয়ে করে। এছাড়াও কক্সবাজারের উখিয়া ও চকরিয়ায়ও দু’টি বিয়ে করেছে বলে জানা গেছে। তার গ্রেপ্তারের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে স্বস্থির নি:শ্বাস পেলে গ্রামের লোকজন।