চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৪ এপ্রিল ২০২৪

admin

স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তী ও প্রবাসীদের প্রত্যাশা

প্রকাশ: ২০২১-০৩-২৬ ১৫:৩৯:৫৩ || আপডেট: ২০২১-০৩-২৬ ১৫:৪০:০১

তারেক আজিজ চৌধুরী|
২৬ ই মার্চ ২০২১ ইংরেজি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে দেশ ও বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের জানাই স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীর আন্তরিক শুভেচ্ছা ও সালাম এবং ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য,লাল সবুজের একটি পতাকা ও মানচিত্র এবং পাকিস্তানের তাবেদারী থেকে মুক্তির জন্য বাংলা মায়ের সূর্য সন্তানরা বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন সে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ ও গাজী হয়ে বাংলা মায়ের বুকে ফিরে এসেছেন সেই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও সালাম।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা নিয়ে আমি প্রবাসীর পক্ষ হয়ে লিখছি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কোটি কোটি বাংলাভাষী প্রবাসীর হয়ে। যাদের যন্ত্রনা প্রকাশের ভাষা নেই আমি তাদের হয়ে লিখছি। প্রবাসীদের প্রতিদিনের কষ্ট, প্রতি ক্ষন মূহুর্তে ঝরে পড়া প্রবাসীদের এক এক ফোটা নয়ন জলের হিসাব জানুক এই পৃথিবীর মানুষ।

প্রতিদিন নয়, প্রতিমুহূর্তে দুঃসংবাদ আসছে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের। করোনাভাইরাস প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। অনেকে কাজ হারিয়ে দিশেহারা। কেউ কেউ আক্রান্ত স্বজনদের জন্য হাসপাতালে ছোটাছুটি করছেন। আবার অনেকে না মৃত্যুবরণ করেছেন।

একটি মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি পরিবার। দেশে থাকা স্বজনেরা। প্রবাসে মানুষের জীবন খুব কষ্টের। করোনাভাইরাস সেই কষ্টটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনাকাল থেকে আজ পয়র্ন্ত প্রবাসী কেউ ভালো নেই। দেশের ভেতরে কিংবা বাইরে। পার্থক্য হলো, দেশের ভেতরে থাকলে অন্তত ভিসার মেয়াদের জন্য দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বাইরে সেটিও করতে হয়। করোনায় প্রবাসীরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এরই মধ্যে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন। অনেকে হারানোর পথে।

কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক বেতন অর্ধেক করে দিয়েছেন। কিন্তু সরকারের সহায়তা কর্মসূচিতে তাঁদের জায়গা হয়নি, প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে যে সাড়ে চার শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। সরকার কয়েক দফায় প্রায় এক লাখ কোটি টাকার সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, যার মধ্যে ধনী শিল্পমালিক থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষও আছেন। আছেন চিকিৎসক–স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু প্রাবাসীরা নেই। অথচ প্রবাসীদের অবদানের কথা বলতে বলতে মন্ত্রী–নেতারা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। যে প্রবাসীরা আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি, যাঁরা বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠান, তাঁদের জন্য কোনো সহায়তা কর্মসূচি নেই!

স্বাধীনতার জন্য বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে লাল সবুজের একটি পতাকা ও মানচিত্র জন্য বাংলা মায়ের সন্তানরা দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে পাক হানাদার বাহিনী থেকে বিজয় সুনিশ্চিত করেছে সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের জন্য তাদের ও তাদের পরিবার কে রাষ্ট্রীয়ভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ,ভাতা,চাকরি, সম্মাননা প্রদান করে যাচ্ছে। কিন্তু যারা দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে অনবদ্য ভূমিকা পালন করছে সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে কি পেয়েছে রাষ্ট্র থেকে। প্রবাসী শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। প্রতিবছর বাংলাদেশের শ্রমবাজারে ২২ থেকে ২৩ লাখ মানুষ যুক্ত হচ্ছেন। দেশে তাঁদের উপযুক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ নেই। এ কারণে জমিজমা বিক্রি কিংবা ধার–দেনা করে তাঁরা বিদেশে যান। পদে পদে হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হন।

যে কাজের কথা বলে তাঁদের বিদেশে নিয়ে যাওয়া হয়, সেই কাজ দেওয়া হয় না। মজুরি দেওয়া হয় কম। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। রাষ্ট্র ও মালিকের অমানবিক আচরণ। তারপরও দেশে থাকা স্বজনদের কথা ভেবে এই মানুষগুলো বিদেশে থেকে আমাদের অর্থনীতিকে পুষ্ট করছেেন সেই রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসী স্বাধীনতার ৫০ বছরে জাতীয়ভাবে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারেনি রাষ্ট্র। দিতে পারেনি প্রবাসীদের বিকল্প বাজেট। পারেনি ভোটার অধিকার। কেন রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের এত অবহেলা। দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখায় কি রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের অপরাধ।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে কোটি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। দেশের সঙ্গে থাকে প্রবাসীদের আত্মার সম্পর্ক। তাই তো সময় ও সুযোগ পেলেই তাঁরা ছুটে আসেন বাংলা মায়ের কাছে। দেহটা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তেই পড়ে থাক না কেন, আত্মাটা সর্বদাই বাংলাদেশের মাটিতেই থাকে প্রবাসীদের। তাই দেশে ফেরা একজন প্রবাসীর কাছে কতটা প্রত্যাশার ও আবেগের, তা শুধু প্রবাসীরাই উপলব্ধি করতে পারেন। প্রিয় মুখগুলো দেখার জন্য ও মাতৃভূমির ছায়া পেতে একজন প্রবাসী ব্যাকুল হয়ে থাকেন প্রতিনিয়ত। দেশে যাওয়ার দিনক্ষণ যেদিন থেকে ঠিক হয়, সেদিন থেকে ব্যাকুলতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। সামর্থ্য ও সুযোগের সর্বোচ্চ দিয়ে প্রচেষ্টা করে প্রিয়জনদের জন্য উপহার নিয়ে যেতে। কোনো কমতি রাখে না আপনজনদের আবদার মেটাতে। কেউবা যাওয়ার আগমুহূর্তে, কেউবা বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রিয়জনদের জন্য বিভিন্ন দ্রব্য কিনে রাখেন। ধীরে ধীরে জমা করে ব্যাগ কিংবা লাগেজের ভেতরে। আপাতদৃষ্টিতে যে কারও কাছে এই দ্রব্য বহন করার বস্তুটাকে একটি ব্যাগ ও লাগেজ মনে হলেও প্রত্যেক প্রবাসীর কাছে এটি একটি আবেগ ও ভালোবাসার বাক্স। এমনও শুনছি যে একজন প্রবাসী প্রবাসে আসার পর তাঁর প্রিয় ১০ বছর বয়সী কন্যার জন্য একটি পোশাক ক্রয় করার পর দেশের ছুটিতে আসার অপেক্ষা করতে করতে নানান জটিলতায় যখন তাঁর দেশ ফেরা হয়, তখন তাঁর কন্যা বিয়ের পিঁড়িতে বসবে। ফলে প্রিয়জনের জন্য কেনা উপহারটি সময়মতো না দিতে পারার কষ্ট থাকলে সেটিও দেশে নিয়ে আসেন তিনি। আবার কেউ তো এগুলো নিয়ে ফেরেন লাশ হয়ে।এই বাক্সটিতে করেই দেশে যাবে প্রিয়জনদের কাছে তাঁর জমানো আবদার ও ভালোবাসার বস্তুগুলো। তাই লাগেজের প্রতি প্রবাসীদের থাকে অন্য রকম এক আবেগ। প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় থাকে তাদের আপনজন বিদেশ থেকে তার জন্য ভালোবেসে কী আনছে।

মাঝের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে দেখা মেলে বিমানবন্দরে লাগেজ ক্ষতিগ্রস্ত ও চুরি হওয়ায় প্রবাসীরা সেখানে বসে কাঁদছেন। হারিয়ে যাওয়া পণ্যগুলোর বাজার মূল্য প্রবাসীর কাছে কম হলেও কাঁদেন অন্য কারণে। কারণ, এই পণ্যগুলোর একজন প্রবাসীর কাছে আবেগ ও ভালোবাসায় কেনা অমূল্য সম্পদ।দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তির মানুষগুলো আবেগ ও ভালোবাসার বাক্সটির যেন কোনোরকম ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাই হলো স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীর প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অন্যতম প্রত্যাশা।

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রবাসীদের প্রত্যাশা রাষ্ট্রীয় ভাবে রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া,রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাস ফেরতদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, সহজভাবে পার্সপোট নবায়ন ব্যবস্থা করা,প্রবাসে অবস্থানরত অসুস্থ রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সরকারি খরচে দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা ও তাদের জন্য ভাতা চালু করা। প্রবাসে মৃত্যুবরন করা রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কে সহজভাবে সরকারি খরচে দেশে নেওয়া ব্যবস্থা করা। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ করা।বিভিন্ন দেশে দূতবাস সহ দেশের পার্সপোট অফিস,বিমানবন্দরে দালাল মুক্ত করা।

বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসী। স্বাধীনতার সূর্বণ জয়ন্তীতে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের প্রত্যাশা পূরন হোক এই প্রত্যাশায়।

লেখকঃ তরুণ রেমিট্যান্স যোদ্ধা, সৌদি আরব
প্রতিষ্ঠাতা,লোহাগাড়া তরুণ ঐক্য ফোরাম
যুগ্ম আহবায়ক, লোহাগাড়া প্রবাসী সমিতি সৌদি আরব
সম্পাদক ও প্রকাশক, প্রবাসী ভয়েস২৪

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *