Faruque Khan Executive Editor
প্রকাশ: ২০২১-০৮-০৪ ১০:২৫:৪৪ || আপডেট: ২০২১-০৮-০৪ ১০:২৫:৫১
বীর কণ্ঠ ডেস্ক|চট্টগ্রাম নগরীতে ফগার মেশিনে ছিটানো ওষুধ অকার্যকর বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। মশা মারায় চসিকের ব্যবহার করা ওষুধের ওপর প্রায় একমাস গবেষণা শেষে গবেষকেরা এ তথ্য জানান।
মঙ্গলবার নগরীর টাইগারপাস সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। সেখানেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার সিটি মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর হাতে গবেষণা প্রতিবেদন তুলে দেন। চসিকের অর্থায়নে এবং সিটি মেয়রের অনুরোধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ গবেষণা কাজটি সম্পন্ন করে।
গবেষণায় নগরীর ৫১টি স্থান থেকে সংগ্রহ করা লার্ভার মধ্যে ৩৩টি স্থানে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী এনোফিলিস মশার উপস্থিতি মিলেছে ৩৯টি স্থানে। আর এই দুই ধরনের মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ২২টি স্থানে। ৩৩টি স্থানের মধ্যে ১৫টি থেকে সংগ্রহ করা নমুনার শতভাগই ছিল এডিসের লার্ভা। আর অ্যানোফিলিস লার্ভার শতভাগ উপস্থিতি ছিল দুটি জায়গায়।
গবেষক দলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মশা নিধনের জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পাঁচ ধরনের ওষুধ নমুনা হিসেবে দেওয়া হয়। সিটি করপোরেশন বর্তমানে এর দুটি ব্যবহার করে। তবে এই দুটি ওষুধের কার্যকারিতা ২০ শতাংশেরও কম। এদিকে, ব্যবহার না করা তিনটি ওষুধের মধ্যে একটির কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। এটি এক ধরনের ভেষজ ওষুধ। বিভিন্ন গাছের তেল দিয়ে তা তৈরি করা হয়। তবে এই ওষুধে কেরোসিন ব্যবহার করতে হয়।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে কোনো রাসায়নিক কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার মানুষ, প্রাণী ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মশা নিধনে রাসায়নিকের বিকল্প হিসেবে জৈব নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো চালু করা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে- মাছ চাষের মাধ্যমে লার্ভা নিয়ন্ত্রণ, অণুজীব ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা, উদ্ভিদের নির্যাস ব্যবহার করে লার্ভা ধ্বংস করা ইত্যাদি।
গবেষক দল মশা নিধন কার্যক্রমের ব্যাপারে চারটি সুপারিশ দিয়েছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়, নালা-নর্দমা, খাল ও নদী ইত্যাদি পরিষ্কার এবং পানি চলাচল স্বাভাবিক রাখা। সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এলাকাভিত্তিক কমিটি গঠন করা। নির্দিষ্ট সময় পর পর কিংবা নতুন কীটনাশক কেনার পর অবশ্যই এর কার্যকারিতা যাচাই করা।
প্রতিবেদনটির সারসংক্ষেপ উপস্থাপন অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, একদিকে ওষুধ ছিটায় সিটি করপোরেশন। অন্যদিকে নাগরিকরা বলছেন, মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। তাই মশা নিধনে ব্যবহার করা ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেই। এখন ওষুধের কার্যকারিতার ফলাফল হাতে পেয়েছি। গবেষকদের দেওয়া এই প্রতিবেদন নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসবো। যে ওষুধ ব্যবহার করলে মানবদেহের ক্ষতি হবে না, আবার মশাও নিধন হবে, সেটি ব্যবহারের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক লিটার কেরোসিনে সর্বোচ্চ মাত্রার ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার এডাল্টিসাইড ফগার মেশিন দিয়ে ছিটানো হলে মাত্র ১৪ শতাংশ মশা মারা যায়। ২০০টি মশার ওপর এ কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। তবে একইমাত্রার কীটনাশক স্প্রে মেশিনে ছিটানো হলে শতভাগ মশা নিধন হয়। তবে এ মাত্রার ওষুধ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তাই সিটি করপোরেশন ব্যবহার করে না। এছাড়া এক লিটার কেরোসিনে সর্বোচ্চ মাত্রার ১৬ দশমিক ৯ মিলিলিটার লার্ভিসাইড স্প্রে মেশিন দিয়ে মিশিয়ে শতভাগ ফল পাওয়া যায়।
গবেষক দলের সদস্যসচিব ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, সিটি করপোরেশন পাঁচটি ওষুধ দিলেও সেগুলোর নাম তাদের কাছে উল্লেখ করা হয়নি। নমুনা হিসেবে তা প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন বর্তমানে যে দুটি ওষুধ ব্যবহার করে সেগুলোর কার্যকারিতা কম পাওয়া গেছে।
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চবি’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, উপ-উপাচার্য বেণু কুমার দে, চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম, গবেষণা দলের আহ্বায়ক চবি’র সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. মোবারক আলী।