চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

লোহাগাড়ায় ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫ জনের আত্মহত্যা!

প্রকাশ: ২০২২-০৪-১২ ২০:২৮:১২ || আপডেট: ২০২২-০৪-১২ ২০:২৮:১৪

লোহাগাড়া(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় হঠ্যাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। গতো ১৫ দিনের ব্যবধানে ৫ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রেম-সম্পর্কিত জটিলতা, আর্থিক অনটন ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব আত্মহত্যার পেছনের অন্যতম কারণ বলে জানা যায়। আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়াকে উদ্বেগজনক বলছেন সচেতন মহল।

সূত্রে প্রকাশ, গত ১১ এপ্রিল সোমবার বেলা ১১ টায় দুই সন্তানের জননীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রোকসানা বেগম (৩২) নামের দুই সন্তানের জননী নিজ বাবার বাড়ীতে ছাদ বীমের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। সে উপজেলার উত্তর কলাউজানের ১নং ওয়ার্ডের খান বাহাদুর বাড়ি এলাকার আহমদ কবিরের মেয়ে ও আল আমিনের স্ত্রী। পারিবারিক কলহ ও আর্থিক সংকটের কারনে সে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

গত ১০ এপ্রিল রবিবার ভোরে ‘সুইসাইড নোট’ লিখে দশম শ্রেণীতে পড়ুয়া রকসি পারভিন জুবলি (১৭) নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। সে উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সিকদার পাড়ার আব্দুল গফুরের মেয়ে।
সুইসাইড নোটে প্রেম সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সে আত্মহত্যা করেছে বলে জানায়।

গত ৬ এপ্রিল বুধবার দুপুরে উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ওয়াহেদের পাড়ায় তানজিনা নাসরিন কেমী (১৯) নামের ১ সন্তানের জননী আত্মহত্যা করেছে। সে ওই এলাকার মো. এরশাদের স্ত্রী। একই ইউনিয়নের নাফারটিলা এলাকার জয়নালের মেয়ে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটি করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে কেমী আত্মহত্যা করে।

গত ২৯ মার্চ পুটিবিলার গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়ায় আত্মহত্যা করে মো. আউয়াল (২২) নামের এক যুবক। নিহত আউয়াল ওই এলাকার মোহাম্মদ মিয়ার পুত্র।

আউয়ালের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মাত্র ছয় মাস আগে বিয়ে করে আউয়াল। তার স্ত্রী বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেলে আউয়াল ছাদ বিমের সাথে ওড়না বেঁধে আত্মহত্যা করে। আউয়ালের আত্মহত্যার সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি।

গত ২৮ মার্চে উপজেলার চরম্বার ইউনিয়নের কালোয়ার পাড়ার গুচ্ছগ্রামে বাবার বাড়িতে আত্মহত্যা করে ইয়াছমিন আকতার (১৯) নামে এক গৃহবধূ। নিহত ইয়াছমিন কাজির পাড়ার সিএনজি চালক ফোরকানের স্ত্রী। একই ইউনিয়নের কালোয়ার পাড়া এলাকার আবদুল আলমের কন্যা। ইয়াছমিন দুই সন্তানের জননী।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এনজিও’র ঋণ পরিশোধ করতে না পারা এবং প্রতিনিয়ত স্বামীর সাথে ঝগড়াঝাটির কারণে আত্মহত্যা করে সে।

লোহাগাড়ায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার কারন সম্পর্কে ডাঃ মুহাম্মদ লোকমান বলেন, ডিপ্রেশন একটি ভয়াবহ মানসিক ব্যাধি। যা একজন মানুষকে সবার অজান্তে তিলেতিলে শেষ করে দেয়। মানুষের শারীরিক মানসিক কর্মক্ষমতা ও মারাত্মক কমিয়ে দেয় এই ডিপ্রেশন। সাধারণত কম বয়সী মেয়েদের মধ্যে এর প্রবণতা সবচেয়ে বেশি।

যারা আত্মহত্যা করে তারা আর্থিক সংকট, পারিবারিক কলহ কিংবা তুচ্ছ কারনে আত্মহননের মতো কঠিন পথ বেছে নেয়। উচ্চ মানসিক চাপ থেকে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। মূলত, সচেতনতার অভাবে এমন ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেছেন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান ইব্রাহিম কবির।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান হাবিব জিতু বলেন, এটি একটি মানসিক সমস্যা। আত্মহত্যা করা খুবই দুঃখজনক। আমরা বিভিন্নভাবে জনগনকে সচেতন করার চেষ্টা করি। ক্যাম্পেইন করি।

লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিকুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ নির্দিষ্ট কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছে। তার মধ্যে পারিবারিক কলহ, আর্থিক সংকট, প্রেম সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *