admin
প্রকাশ: ২০২২-০৬-১৪ ০০:২৪:৪৫ || আপডেট: ২০২২-০৬-১৪ ০০:২৪:৪৮
নাজিম উদ্দীন রানা, লামা(বান্দরবান)|
প্রতিটি শ্রেনীকক্ষে ঝুলছে তালা। শুধু ৪র্থ শ্রেনীতে তিনটি ক্লাসের পাঠদান দিচ্ছে বিদ্যালয়ের খন্ডকালিন শিক্ষিকা রোমানা।
ক্লাসটিতে একযোগে ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেনীর ছাত্রদের একসাথে পড়ান ওই শিক্ষিকা। স্কুলের দায়িত্বরত শিক্ষকদের অনুপস্হিতের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
বান্দরবানের লামা উপজেলার আজিজনগর ইউনিয়নের পূর্ব-চাম্বি মুসলিম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এ অবস্থা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যেভরা অসাধারন এক মনোরম পরিবেশে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। নেই কোন যোগাযোগ ব্যবস্থারও সমস্যা। তারপরও বিদ্যালয়টিতে ঠিক মতো শিক্ষক আসেন না। দেড় হাজার টাকায় ভাড়া করা একজন খন্ডকালিন শিক্ষক দিয়েই ক্লাস চলছে এই বিদ্যালয়ে। এলাকাবাসীরা জানায়, কয়েক সপ্তাহ পরপর এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সোমবার (১৩ জুন) সকাল ১১টায় বিদ্যালয়টিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুমানা আক্তার নামের একজন শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি গড় গড় করে বলেন, আমি শিক্ষক না। হেডস্যার আমাকে পড়াতে বলেছে তাই পড়াচ্ছি। আমাকে দেড় হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এখানে বর্তমানে একজন প্রধান শিক্ষক ও একজন সহকারি শিক্ষক কর্মরত আছেন। তারা মাঝেমধ্যে আসেন। তবে ক্লাসগুলো আমিই চালিয়ে যাই।’
চোখ ফেরাতে দৃষ্টি পড়লো শিক্ষার্থীদের দিকে। জিজ্ঞেস করলাম কোন ক্লাসে পড়ো? কয়েকজন বললো ক্লাস ফাইভে, কয়েকজন বলল ক্লাস ফোর এবং থ্রিতে। বুঝতে বাকি রইলো না তিনটি ক্লাস এক সাথে পড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে লিজা আক্তার ও রুনা আক্তার। তারা ক্লাস ফাইভের শিক্ষার্থী। তাদের কে বললাম ইংরেজিতে ফাইভ বানান কর। কিন্তু দুই জনের একজনও পারলো না। আবার ক্লাস ফোর এবং থ্রির দুই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞেস করলাম। তাদেরও একই অবস্থা।
দীর্ঘদিন ধরে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি জানালেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য মোহাম্মদ ইসমাইল।
অনুপস্থিত শিক্ষকরা হচ্ছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগম এবং অন্যজন হচ্ছেন সহকারি শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তা।
প্রধান শিক্ষক গুলজার বেগমের সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ তাই যেতে পারিনি।’ তবে সহকারি শিক্ষক কেন যাননি সে ব্যাপারে তিনি জানেন না।
সহকারি শিক্ষক রোকসানা জয়নাব মুক্তার নিকট মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না, আমি জেলা পরিষদ সদস্যের শালার বউ, আমার বাবা ডিসি কোর্টের পিটিসন রাইটার, আমি দেখিয়ে ছাড়বো।
দেখা হয় দপ্তরি হাবিবুর রহমানের সাথে, কিন্তু তিনি কোন বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘করোনার পর থেকে এভাবেই চলছে বিদ্যালয়টি। আমরা কিছু বললে আমাদেরকে হুমকি-ধমকী দেওয়া হয়। এই স্কুলে পড়ালেখা হচ্ছে না বিধায় কেজি স্কুলে নিয়ে গেছে অনেক শিক্ষার্থী।’
বান্দরবান জেলা শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম বলেন, বিষয়টির সত্যতা পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।