admin
প্রকাশ: ২০২২-০৮-১৫ ১২:০৩:৫৩ || আপডেট: ২০২২-০৮-১৫ ১২:০৩:৫৫
আদালত প্রতিবেদক|
চট্টগ্রামের লোহাগড়ার আলোচিত জানে আলম হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মামলার বাদীপক্ষের করা লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি নিয়ে গত রোববার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত এই স্থগিতাদেশ দেন। আগামী ২২ আগস্ট পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ জারি করে ঐ দিন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে বিষয়টির ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম। যে চার জনের খালাসের আদেশ স্থগিত করা হয়েছে তারা হলেন-আবুল কাশেম, আলমগীর, আব্দুল মালেক এবং আইয়ূব আলী।
জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ জানে আলমকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ব্যক্তির বড় ছেলে তজবিরুল আলম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানায় ২১ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০০৭ সালের ২৪শে জুলাই বিচারিক আদালত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সৈয়দ আহমেদসহ ১২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ৮ জন নারী আসামিকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
এরপর মামলাটি ডেথরেফারেন্স হিসেবে হাইকোর্টে আসে। এছাড়া বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা আপিল করেন। ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০১৩ সালে বিচারপতি মো: আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ৮ নারীকে খালাস দেন।
খালাসপ্রাপ্তরা হলেন-আনোয়ারা, ইয়াসমিন, রাজিয়া, শাহিনা আক্তার, নূরজাহান বেগম, শাহিদা বেগম, তাছলিমা আক্তার এবং রাজিয়া বেগম। এছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জহিরুল ইসলাম এবং নাজিম উদ্দিনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। বাকি ৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এই ৫ আসামি হলেন-শাসুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নাসিরউদ্দিন, সাঈদ আহমেদ এবং কারিমুল্লাহ। তবে শুরু থেকেই পলাতক ৫ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ব্যাপারে হাইকোর্টের ওই রায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অংশে কিছুই উল্লেখ করা ছিল না। এই ৫ আসামি হলেন- আবুল কাশেম, আলমগীর, আব্দুল মালেক, মো: ইউসুফ এবং আইয়ূব আলী। এদের মধ্যে মো: ইঈসুফ গত ফেব্রুয়ারিতে মারা যান।
কিন্তু মামলার বাদীপক্ষ গত বছর হঠাৎ জানতে পারেন, ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ একটি সংশোধিত রায়ে ওই পাঁচ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিকে খালাস দিয়েছেন। ওই সংশোধিত রায় কিভাবে এসেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয় মামলার বাদীপক্ষ। তখন বাদীপক্ষ অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়, সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ বিভিন্ন জায়গায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ চেয়ে চিঠি পাঠান। এরই মধ্যে গত সপ্তাহে একটি অনলাইন পোর্টালে খালাসের ‘সাত বছর পরেও কনডেম সেলে বন্দী আবুল কাশেম’ উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ২০১৫ সালে আবুল কাশেম অন্য একটি মামলায় হাজিরা দিতে গেলে জানে আলম হত্যা মামলায় গ্রেফতার হন। ওই প্রতিবেদন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের নজরে আনেন। পরে হাইকোর্ট বিষয়টি বিচারিক তদন্তের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এরই মধ্যে বিচারিক আদালত সংশোধিত রায়ের কপি খুঁজে বের করে তা কারাগারে প্রেরণ করেছে এবং আসামি আবুল কাশেমকে কনডেম সেল থেকে অন্য একটি মামলায় সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে আটক রেখেছেন বলে সর্বশেষ জানা গেছে।
জানে আলমের দ্বিতীয় সন্তান ব্যারিস্টার তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কারও কোন আবেদন নাই, অথচ হঠাৎ করেই ২০১৬ সালে ২০১৩ সালের রায়টি সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত রায়ে ৫ জনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। অথচ আমরা কিছুই জানিনা। সংশোধিত রায়ে বিচারপতি যে স্বাক্ষর দিয়েছেন, ২০১৩ সালের রায়ে দেওয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে মেলে না। এজন্য বিষয়টির তদন্ত চেয়ে আমরা বিভিন্ন জায়গায় চিঠি দিয়েছি। এরপর সর্বশেষ আমরা ওই সংশোধিত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করি। রোববার ওই লিভ টু আপিলের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালত ২২ আগস্ট পর্যন্ত চার আসামির খালাসের আদেশ স্থগিত করেছেন।