admin
প্রকাশ: ২০২২-১০-২২ ২২:২১:৩১ || আপডেট: ২০২২-১০-২২ ২২:২১:৩৯
কক্সবাজার প্রতিনিধি🟢
কক্সবাজার শহরে যানযত্র এখন নিত্য নৈতিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পর্যটনের শহর কক্সবাজারের প্রধান সড়কগুলোতে দিন দিন জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সকাল থেকে সড়কগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে লেগে থাকে যানজট। যে কারণে দুর্বিষহ হয়ে উঠছে জনজীবন। অবশ্য সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন সড়কের নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় নানান ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। কাজ শেষ হলে গেলে এই ভোগান্তি থাকবে না, স্বস্তি ফিরবে জেলাবাসীর মাঝে। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, সান্ত্বনার বাণী শুনিয়ে দায় সারছেন দায়িত্বরতরা। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কোন ভূমিকাই নেই তাদের। মনগড়া নিয়মেই চলছে সড়কের যানবাহনগুলো।
জানা গেছে, শহরের হলিডে মোড় থেকে বাসটার্মিনাল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫৮ কোটি ৮১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এটি ডিসেম্বরের ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (কউক) বলছে ইতোমধ্যে সড়কের ৮০-৯০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে নির্দিষ্ট সময়ে এসব কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সন্দিহান দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিকেল থেকেই শহরের বিলকিছ মার্কেট, পান বাজার রোড, হাসপাতাল সড়ক, গুনগাছতলা, টার্মিনাল, কলাতলি মোড় এলাকা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানজট লেগে থাকে। এছাড়াও নামে-বেনামে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ গাড়ি স্টেশন। অন্যদিকে ফুটপাতের ওপর মোটরসাইকেল চালানো এবং পার্কিং করার বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাশাপাশি বিদ্যুতচালিত অবৈধ ইজিবাইকের অনিয়মের দৌরাত্ম্য সড়কে দিন দিন বাড়ছেই। যত্রতত্র সড়কের ওপরই পার্কিং করে রাখা হয় এসব যানগুলো। স্বল্প দুরত্বেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় এসব বাইকারের হাতে লাঞ্ছিত হচ্ছেন পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়রাও।
এছাড়াও শহরের বিলকিছ মার্কেট এলাকা থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত প্রধান সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে অসংখ্য ঝুঁপড়ি দোকান। সড়কের উপর ময়লার আবর্জনার স্তূপ, যত্রতত্র সিএনজি পার্কিং, সড়কের মাঝখানে গর্ত, সড়ক দখল করে মালামাল ওঠানামার কাজ করা, খোলা নালা, রাস্তার ধারে বৈদ্যুতিক খুঁটি রাখা সহ নানান কারণে প্রধান সড়কটি জনসাধারণের চলাচলে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
বার্মিজ মার্কেটে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে আসা শহিদুল ইসলাম, আবদুল হান্নান ও মেহেদী হাসান নামের তিন পর্যটক জানান- মার্কেটে এসেই বৃষ্টি কবলে পড়েছেন তারা। কিন্তু সামান্য বৃষ্টিতেই প্রধান সড়কের ওপরই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ময়লা আবর্জনা রাস্তায় উঠে এসেছে রাস্তায়। যে কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের।
আসমা আকতার, শাহিনুল ইসলাম, ছাবের আলম সহ কয়েক শিক্ষার্থী জানান, যানজট ও সড়কের বেহাল দশার কারণে সঠিক সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পৌঁছানো যায় না। রাস্তার মাঝে গর্ত থাকায় ঝুঁকি নিয়ে যানবাহনে চড়তে হয়। মোড়ে মোড়ে যানজট সৃষ্টি হলেও পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশের অভাবে রাস্তায় দীর্ঘসময় আটকে থাকতে হয়।
সদর ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন) আমজাদ হোসেন জানান- পর্যাপ্ত জনবল নেই তাদের। যা আছে তা দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, সড়কের ৪২টি পয়েন্টে দায়িত্ব পালনে জন্য কমপক্ষে ৪২ জন পুলিশ দরকার। কিন্তু ১২ জন পুলিশ দিয়েই কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের।
কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কের কাজ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ শেষ হলে সড়কের বিশৃঙ্খলা দূর হতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সকলকে আন্তরিক হতে হবে।’
“নিরাপদ সড়ক চাই” আন্দোলনের কক্সবাজার জেলা সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর জানান, ফুটপাত দখল মুক্ত করা, অবৈধ টমটম নিয়ন্ত্রণে আনা, শহর থেকে গাড়ির কাউন্টার অন্যত্র সরানো, রাস্তার পাশ থেকে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থানান্তর করা সহ সংশ্লিষ্টরা যথাযথ দায়িত্বপালন করলে শহরের প্রধান সড়কটি নিরাপদ করা সম্ভব। কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রভাবশালীদের কারণে এসব করা যায়নি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. খিজির খান জানিয়েছেন- শহরের প্রধান সড়কের কাজ দ্রুত করা হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যে সড়কটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।