admin
প্রকাশ: ২০২৪-০৪-০৯ ০৭:২০:০৬ || আপডেট: ২০২৪-০৪-০৯ ০৭:২০:০৭
লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি |কালো পলিথিনে ঢেকে রাখবে কিছুদিন। তারপর টিনের ঘর তৈরি করে বসবাস শুরু করবে। কিছুদিন যেতে না যেতেই টিনের ঘরের ভেতর দিয়ে তৈরি করবে মাটির কিংবা ইটের দেয়াল। এভাবেই দখল করে বনভূমি। বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তারাই এ সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
এমন চিত্রই দেখা গেছে চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের আওতাধীন চুনতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের বড়হাতিয়া বনবিট, চুনতি সাতগড় বনবিট ও হারবাং বিট এলাকায়। গেল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম – কক্সবাজার মহাসড়কস্থ গয়ালমারা ষ্টেশন থেকে অর্ধকিলোমিটার পূর্ব দিকে গেলেই সুফল বাগান। সুফল বাগানের গাছ ও টিলা কেটে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ী। দেখা যায়, প্রথমে করা হয়েছে কালো পলিথিনে, তারপর টিন দিয়ে। এখন করা হচ্ছে মাটির ঘর। হারবাং ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য তাহসিনা আক্তার ও তার স্বামী মো: রায়হান সুফল বাগান দখল করে এ স্থাপনা নির্মাণ করছেন। অথচ হারবাং বনবিটের নাকের ডগায় দখল হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়াও, হারবাং স্টেশনের পূর্বপাশে অলিপুর আশ্রয় কেন্দ্র এলাকায় বনের জায়গা নির্মাণ করা হচ্ছে পাকাঘর। হোটেল ইনানীর পূর্ব পাশে বাবুল মেম্বার রোডে নির্মাণ হচ্ছে চারটি পাকা ভবন। উত্তর হারবাং কোরবানীয়া ঘোনা, নয়া পাড়া, ভেইট্টা জিরি, সাবান ঘাটা, গয়ালমারায় রাতে দিনে গড়ে ওঠছে পাকা স্থাপনা। আজিজ নগর গজালিয়া সড়কের পাশে মনির নামের এক ব্যক্তি বনের জায়গায় প্রকাশ্যে তৈরী করছে পাকা ভবন। বনবিভাগকে ম্যানেজ করেই বনভূমি দখল ও স্থাপনা করা যায় বলে জানান স্থানীয় আবুল হাশেম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধ দখলদারদের সাথে ফরেস্ট গার্ড মো: হাবিবের রয়েছে যোগসাজেশ। যদিওবা মো: হাবিব বিষয়টি অস্বীকার করেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করি। উচ্ছেদ মামলার প্রস্তুতি চলছে।
একই চিত্র, লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ও সাতগড় বিট এলাকায়। প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় বনভূমির মাটি ও গাছ কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। ইছাহাক মিয়া সড়কে বনের জায়গায় করা হয়েছে মার্কেট ও দোকানপাট। নলবনিয়া এলাকায় প্রতিনিয়ত বনভূমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। বড়হাতিয়া বনবিট এলাকায় গেল এক বছরে বনভূমি দখল হয়েছে প্রায় ২ শত একর। এ প্রসঙ্গে বড়হাতিয়া বনবিট কর্মকর্তা শামসুল আলম কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
দেখা গেছে, সংরক্ষিত বনাঞ্চল দখল করে শত শত ঘরবাড়ি তৈরি করা হয়েছে। অনেকে গাছপালা কেটে বনভূমির জায়গার দখলস্বত্ব বিক্রিও করছে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল গণি জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মিয়ানমারের অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে রেখে সংরক্ষিত পাহাড় ও গাছপালা নিধন করছে। এরপর ওই খালি জায়গার দখল একর প্রতি আট থেকে ১০ লাখ টাকা দামে অন্য লোকের কাছে বিক্রি করছে। স্থানীয় রুহুল আমিন বলেন, পাহাড় ও গাছ নিধনের কাজ চলে মূলত রাতের বেলায়। এ কারণে কাউকে ধরা সম্ভব হয় না। স্থানীয় বন বিভাগও রহস্যজনকভাবে নীরব থাকে।