চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

এক পয়সার ব্যাংক এবং একটি ইতিহাসের গোড়াপত্তন 

প্রকাশ: ২০১৭-০৮-২৬ ০৭:১৭:৪৮ || আপডেট: ২০১৭-০৮-২৬ ০৭:১৭:৪৮

প্রিয় দেশ ম্যাগাজিন : দাদার কিংবা নানার বাডীর পক্ষ থেকে সবকিছুই করা শেষ ।৬মাস ব্যায়বহুল চিকিৎসার ভার বহন করে সাধ্যের সব সাধ যখন মিটানো হল তখন তৈয়বুলের মনে হয়ত মৃত্যুর ক্ষণগননার ঘডির কাটা দ্রুতই ঘুরছে । তবে স্রষ্টা বোধহয় সবকিছু সহজে ছেডে দিতে চাননি ।

 

নয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের হাজের পোষ্টের মধ্যে তাও রাতের বেলা কোথাকার একটা পোষ্ট কি আর আইসপার্কের কর্ণধার শাহাবউদ্দীন ভায়ের অর্ধাঙ্গীনীর চোখে পড়ে ?

 

রাখে আল্লাহ মারে কে ?

 

১৯ জুলাই রাতে আইসপার্কের অন্যতম কর্ণধার শাহাবুদ্দিনের চোখে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করা  তৈয়বুল নামক এক ক্যান্সারে আক্রান্ত ছাত্রের বাঁচার আকুতি ।

 

সম্ভবত জুলাই মাসের শুরুরদিকে তৈয়বুলের মামা আব্দুস সাত্তার ফেসবুকে পোষ্ট করেন তৈয়বুল কে নিয়ে ,যেখানে তৈয়বুলের চিকিৎসার আর্থিক সংকটের কথা তোলে ধরেন স্বল্প পরিসরে ।কিন্তু কর্পোরেটের এ যুগে মানুষ ব্রান্ড ছাড়া ঝুকে না ।তাই মামার ডাকে সাডা কেউ কেউ দিলেও তা নগন্য ।

 

কোরাআন বলছেঃ নিশ্চয় আল্লাহর পরিকল্পনাই সর্বোত্তম ।

তাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে লোহাগাড়ায় মানবতার সেবায় যিনি নিঃস্বার্থ ব্র্যান্ড ,বেঙ্গল শাহাব উদ্দিনের নিউজফিডে তৈয়বুলের বাঁচার আকুতি ।মরার আগে মরে না যাওয়ার সংগ্রামে আগ বাড়িয়ে দিলেন তিনি ।২১তারিখ ফেসবুকে সবাইকে এগিয়ে আসার পোষ্ট দেন ।তারপর তৈয়বুল ইতিহাসের একটা অংশ

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সামাজিক ব্যবহার আব্দুল্লাহ নামের এক শিশুর চিকিৎসা সহয়তা তহবিল গঠনের মাধ্যমেই শুরু হয় বছর তিনেক আগে । হার্টের সমস্যা নিয়ে জম্নানো শিশু আবদুল্লাহকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানোর সব ব্যবস্থাই হয় লোহাগাড়াবাসীর অর্থায়নে ।

 

সেই আবদুল্লাহ থেকে শুরু করে বাবা মা হারানো জেসমিন কিংবা তৈয়বুল ইতিহাসে আপনি কাকে বাদ দিতে পারবেন ?

আগামী প্রজম্ন তাদের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে পারবে  কিংবা এই প্রজম্নের তৈরী করা ইতিহাসকে আরো উজ্জল করতে পারবে আরো কোন তৈয়বুল ,জেসমিন কিংবা আবদুল্লাহর পাশে দাড়িয়ে ।

 

আমাদের পরবর্তী প্রজম্ন কিংবা আমরা গর্ব করেই বলতে পারি আমরা লোহাগাড়া বাসী আমরা মানবতার অনন্য নজির স্থাপন করেছি এক দুঃসময়কে জয় করে ।

 

তৈয়বুলের বাবার যখন বটতলী আসার গাড়িভাডা ছিলো না তখন তৈয়বুলের কেমো থেরাপী গরীবের রাজা হবার স্বপ্নের মতো ছিল ।

তখনি একটি পয়সার ব্যাংক একটি ইতিহাসের গোড়াপত্তন করে গেল ।

একজন লোকের অল্প অল্প করে জমানো টাকা ,কত স্বপ্ন কিংবা কত ইচ্ছেরা উড়ান দিতো সে টাকাকে কেন্দ্র করে !হতে পারে কোন নতুন জামা কিংবা তার জমানো টাকায় একটি মোবাইল কেনা হতো নয়তো আদরের বোনের জন্য একজোড়া চুড়ি ।

 

কিন্তু সে স্বপ্ন আর ইচ্ছেকে কবর দিয়ে তৈয়বুলের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রুপ দিতে ,তার বেঁচে থাকার আকুলতায় সাধ আর সাধ্যের সবটুকু উজাড করে দিয়ে একটি পয়সার ব্যাংক তোলে দিয়েছিল এক আগন্তুক ।সে দিন সন্ধ্যায় যখন পয়সার ব্যাংকটি তোলে দিচ্ছিল সে তখন বলেছিলো

 

আমার এ সামান্য টাকায় হয়তো তৈয়বুলের চিকিৎসা হবে না কিন্তু তৈয়বুলের জন্য শহরে যাবার গাড়িভাড়া অন্তত হবে ।আমার যদি আরো একটি জমানো ব্যাংক থাকতো আমি সেটিও দিয়ে দিতাম যাতে তৈয়বুল ডাক্তারের টিকেট নিতে পারে ।।

 

এরপর আর ফিরে থাকাতে হয়নি ,দেশের সুর্য সন্তান প্রবাসীরা যখন কোন উদ্যেগ গ্রহন করে আর মানবতা প্রেমিক মানুষগুলো যখন সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেন তখন আল্লাহর বরকতে সেটা  আর ব্যার্থ হয় না যেমনটি হয়নি এবেলাও।

 

লোহাগাড়ার মানুষের আপ্রান চেষ্টা ,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা তৈয়বুলের চিকিৎসা সহায়তা তহবিল গঠনে ব্যাপক ভুমিকা রাখে ।

আমরা যারা এ সংশ্লিষ্ট কাজে সময় ব্যায় করেছি তারা বিচিত্র অভিঙ্গতার মুখোমুখি ।

 

আমরা ঘোষনা দিলাম কেন্দ্রীয় মসজিদে টাকা তুলব তৈয়বুলের জন্য ।আমাদের মা বোনেরা পর্যন্ত শরীক হয়েছেন সেখানে ।আবেগ ধরে রাখা দায়হয়েছে যখন আমার সামনে এক রিকশাওয়ালা ৫০ টাকা দিয়ে বলেছিলো আল্লাহ যেন বেঁচারাকে সুস্থ করে দেন ।

 

লোহাগাড়ার মানুষের দৃঢ প্রতিঙ্গা ছিলো টাকার কাছে হার মানা যাবে না ,তাই তো আশশেফা স্কুল এন্ড কলেজের ছোট বাচ্ছারা যখন বাবা মায়ের কাছে গিয়ে বলতো ,আম্মু আমার তৈয়বুল স্যারের জন্য টাকা দিন স্যারের অসুখ স্যারকে বাঁচাতে হবে তখন বোধহয় সমস্ত মাখলুকাত  বলেছিল মানুষই উত্তম সৃষ্টি ।

লোহাগাড়া পেরিয়ে বান্দরবান কিংবা মগনামা দেশ পেরিয়ে বিদেশ ।

রাজনীতি কিংবা সমাজনীতি সব সবখানে তৈয়বুলের চিকিৎসা তহবিলের আপ্রান চেষ্টা ।

 

এক এক করে আমরা সংগ্রহ করেছি সাডে ১৪ লাখ টাকার চিকিৎসা ফান্ড ।যেখানে রাজনৈতিক আমলা কিংবা রিকশাওয়ালার অবদান অথবা সামাজিক সংগঠনগুলোর অবদান সমান।

 

মানবতা আর মানবিকতার এই ইতিহাস গঠনে যাদের আপ্রান চেষ্টা ,মানবতার এই কল্যানময়ী কাজেও যারা সমালোচনার ঢেউ তুলেছেন  আর যার সেটা সহ্য করে কাজ করে গেছেন তাদের প্রতি রইল আন্তরিক শুভকামনা । আল্লাহ আপনাদের দান কবুল করুন এবং সকলের চেষ্টা সফল করুন । আমিন ।

 

  1. লেখক : সাজ্জাদ হোছাইন(টাইম ছাড়া ঘড়ি)। ছাত্র-অর্নাস ৩য় বর্ষ ,গাছবাডীয়া সরকারী কলেজ ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *