চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

ভয়াবহ অবস্থা: গাড়ি দেখলেই খাবারের জন্য ছুটে আসছে রোহিঙ্গারা

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০৭ ১১:৫৮:৩৫ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০৭ ১১:৫৮:৩৫

 

বীর কন্ঠ ডেস্ক: খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে রোহিঙ্গাকক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকার সড়ক ও পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা খাবারের তীব্র সংকটে পড়েছে। খাবারের জন্য তারা রাস্তায় এসে বসে আছে। কোনও গাড়ি দেখলেই ছুটে আসে। কোনও গাড়ি থেকে শুকনো খাবার দিতে দেখলে ওই খাবার সংগ্রহ করতে শুরু হয় তীব্র প্রতিযোগিতা। এই প্রযোগিতায় বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রাণহানির শঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুলং, ঘুমধুম, কলাবাগান, পালংখালী ও বালুখালীতে সরেজমিনে ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।

 

বুধবার দুপুরে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে হাজার হাজার রোহিঙ্গা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে আছে। ওই সড়ক দিয়ে কোনও গাড়ি গেলেই পাশে এসে দাঁড়ায় তারা। একই চিত্র ঘুমধুম, কলাবাগান, পালংখালী ও বালুখালীতে। রোহিঙ্গারা এসব এলাকার রাস্তা ও পাহাড়ের গাছের নিচে সারিবদ্ধ ও গোল হয়ে বসে আছে।

 

পালংখালী বাজারে দোকানে দোকনে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের খাবার চাইতে দেখা গেছে। ছেনোয়ারা বেগম (২৬) নামে এক রোহিঙ্গা নারী কোলে ‍দুই সন্তান নিয়ে এই বাজারের হোটেল আল মদিনায় ভাত চান। সঙ্গে তার বৃদ্ধ শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকও ছিলেন। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। হোটেলের মালিক সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. হোসেন ওই নারীকে একটি পলিপ্যাকে ভাত ও মাংস দিয়ে দেন। তা নিয়ে তিনি চলে যান।

 

ছেনোয়ারা বলেন, ‘আমরা একই পরিবারের ১২ জন পালিয়ে বাংলাদেশে আসি। রাস্তায় আছি এখনও। বৃষ্টি হলে গাছের নিচে বসে থাকি।’

 

বালুখালীর ঢালে একটি পাহাড়ে নতুন বসতি গড়েছে রোহিঙ্গারা। সেখানে কথা হয় ফরিদা বেগম (৪৫) নামে একজন নারীর সঙ্গে। তার স্বামীর নাম ‍মৃত গোরামিয়া। তারা মিয়ানমারের মংডুর বলিবাজার এলাকায় থাকতেন। গত ২৪ আগস্ট হঠাৎ তাদের বাড়িঘরে প্রথমে আগুন দেওয়া হয়। এরপর সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। প্রাণ রক্ষার জন্য তারা বাড়িঘর রেখে পালাতে থাকেন। সবার সঙ্গে তিনিও বাংলাদেশের দিকে আসেন।

 

ফরিদা বেগম বলেন, ‘তার সাত ছেলে মেয়ে। চার ছেলে ও তিন মেয়ে। তাদের সবাইকে নিয়ে আমি অন্যাদের সঙ্গে বাংলাদেশে আসি। এর আগে ১৪ দিন আমরা নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ছিলাম।’ তিনি কান্নজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘তারা মেয়েদের রেপ করে। ছেলেদের হত্যা করে। মেয়েদের নিয়ে ভয়ে ছিলাম। তাই সবাইকে নিয়ে চলে এসেছি।’

 

বালুখালীর পাহাড়ে ফরিদা বেগম পলিথিন ও পাশ দিয়ে একটি ছোট্ট টংঘর বানিয়েছেন। সোমবার তিনি ভাত খেয়েছেন এরপর আর কিছু খাননি।

 

ওই পাহাড়েই আশ্রয় নিয়েছেন শাহানূর বেগম নামে একজন নারী। তিনি বলেন, ‘তার স্বামী ইউনুছ আলীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গুলি করে হত্যা করেছে।’

 

উখিয়ার কলাবাগানে আশ্রয় নেওয়া মাছুমা বেগম রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। তার ছেলেমেয়ে নয় জন। স্বামী সৈয়দ আমিন ঘর তোলার জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু বাঁশ ও পলিথিন এখনও জোগাড় করতে পারেননি। খাবার নেওয়ার জন্য তারা রাস্তার ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন।

 

খাইরুন নেসা (৪০) নামে এক নারী বলেন, ‘তার স্বামীর নাম হোসেন জোহুর। গাছের ব্যবসা করতেন মিয়ানমারে। দালালকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে নৌকায় করে নাফ নদী পার হয়ে এসেছি। এখন আর কিছুই নেই। এক কাপড়ে চলে আসি। প্রায় ১৫ দিন ধরে একই কাপড়ে আছি।’

 

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কথা উল্লেখ করে সেনোয়ারা বেগম নামে আরেকজন বলেন, ‘আমাদের বাড়ির ওপরে প্লেন উড়ছে। এরপর আগুন দিছে। তারপর গুলি করছে সবাইকে। তার বাবা-মা ও পাঁচ ভাই-বোনের কেউ বেঁচে নেই। সবাই মারা গেছে।’

 

ঘুমধুমের পাথরকাটার কোনাপাড়া নোম্যান্স ল্যান্ডে এখনও ১২ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের স্থানীয়রা খাবার দিচ্ছেন। কয়েক বেলা পরপর এক বেলা খেতে পারছেন তারা। মিয়ানমারের তুমব্রু থেকে আসা আমানুল্লাহ (৩৫) বলেন, ‘আমি মাছের ব্যবসা করতাম। আমার ঘের ছিল। বাড়িতে আগুন দেওয়ার পর সবাইকে নিয়ে পালিয়ে আসি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে আমারা ১২ হাজার রোহিঙ্গা আছি। এখানে একটা কমিটি করা হয়েছে। আমরা তালিকা করছি। আমরা বিজিবির কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে খাবার ও পানি নিচ্ছি। আমাদের ওখানে কেউ খাবার নিয়ে যায় না। স্থানীয়রা আমাদের খাবার দিচ্ছেন।’

 

পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে তৈরি রোহিঙ্গাদের থাকার জায়গা

 

বুধবার রোহিঙ্গাদের মাঝে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রেডক্রিসেন্ট, বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, স্থানীয়রা ও বিচারকদের পক্ষ থেকে খাবার বিতরণ করতে দেখা গেছে।

 

পালংখালী এলাকার আলমগীর আলম নিসা নামে এক তরুণ বলেন, ‘এখন করুণ অবস্থা দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন। কিন্তু এত লোককে কে কতদিন খাবার দেবে। এত মানুষ কী খেয়ে বেঁচে থাকবে? শিশু ও বয়স্করা না খেয়ে ক’দিন থাকতে পারবে? এই এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। সবাই খেটে খায়। তার ওপর লাখ লাখ মানুষ আসায় এই অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারাও এখন বাজার থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাচ্ছেন না।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *