চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

আজ থেকে শুরু শারদীয় দুর্গোৎসব  দেশে সবচেয়ে বেশি পূজা মন্ডপ চট্টগ্রামে

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-২৬ ০৯:০৫:৩১ || আপডেট: ২০১৭-০৯-২৬ ০৯:০৫:৩১

 

বিপলু দাশ চট্টগ্রাম :- উৎসবমুখর পরিবেশে আজ শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব।  আজ মঙ্গলবার মহাষষ্ঠী। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে, সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বিকাল ৪টায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে ষষ্ঠী পূজা স¤পন্ন হবে। এর আগে গতকাল সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল ২৭ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী বিহিত পূজা, এবং ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার (পূজা আরম্ভ সকাল ৭টা ৩০ মিনিট এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন সকাল ৯টা ৩১ মিনিটের মধ্যে) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের এ উৎসব। গত ১৯ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিন চন্ডীপাঠের মাধ্যমে দশপ্রহরণধারিণী জ্যোতির্ময়ী দেবী দুর্গাকে মর্ত্যলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সে দিন থেকেই শুরু হয় দেবীপক্ষের। মূলত মহালয়ার দিন থেকেই দুর্গাপূজার ক্ষণ গণনা শুরু হয়। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

 

এবার দেবীর আগমন নৌকায় চড়ে এবং দেবী বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে। শাস্ত্রে দেবীর নৌকায় আগমন ও গমন স¤পর্কে বলা হয়েছে, শস্যবৃদ্ধিস্তুথাজলম। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ঝড়, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির

জন্যে প্লাবন ও ক্ষয়ক্ষতি হবে। পাশাপাশি শস্য বৃদ্ধি পাবে। আর ঘোটকে মায়ের আগমন ও গমন নিয়ে বলা হয়েছে ছত্রভঙ্গস্তুরঙ্গমে। অর্থাৎ ঘোটকে আগমন ও গমনে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা প্রকাশ পাবে।

 

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে, দেবী গিরিরাজ হিমালয়ের কন্যা ও পর্বতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই তিনি পার্বতী। পরের অধ্যায়ে তিনি হয়ে উঠেন দানব দলনী দশভূজা। দুর্গ নামক দৈত্যকে দমন কওে তিনি দুর্গা নাম প্রাপ্ত হন। শরৎকালের এ পূজাকে বলা হয় অকালবোধন। পুরোহিতরা জানিয়েছেন, দুর্গা দেবীর প্রকৃত আগমনের সময় চৈত্র মাস। অর্থাৎ বসন্ত কাল। চৈত্র মাসে যে দুর্গা পূজা হয় তাকে বলা হয় বাসন্তী পূজা। ভগবান রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধার করতে শরৎকালে দেবীর পূজা করেছিলেন। তাই এ পূজা শারদীয় দুর্গা পূজা নামেও পরিচিত। ব্রহ্মার নির্দেশ অনুযায়ী দুর্গার সাহায্যে রাবণ বধ করে সীতাকে উদ্ধার করেন রামচন্দ্র। আর মর্ত্যলোকে আসতে দেবীর সেই ঘুম ভাঙানোকে বলা হয় অকাল বোধন। বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে শারদীয় দুর্গাপূজাই সবচেয়ে বড় উৎসব।

 

সারাদেশে এবার পূজোর সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৭টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৩৯৫ টি। গতবারের চেয়েও এবার ৬৮২টি বেশি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পূজা হচ্ছে চট্টগ্রামে। এবার এবার নগরীতে ৩১৬টি মন্ডপে এবং চট্টগ্রামের ১৫ উপজেলায় ১ হাজার ৫০৪টি সর্বজনীন ও ২৭৬টি পারিবারিক মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

 

এর মধ্যে প্রতিমা ও মন্ডপ ঘিরে সাজসজ্জা স¤পন্ন হয়েছে। গতকালই মন্ডপে মন্ডপে প্রতিমাকে বরণ করা হয়েছে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে। চট্টগ্রামের প্রধান পূজা মন্ডপগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রী শ্রী কৈবল্যধাম পূজা মন্ডপ, নগরীর রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম, সদরঘাট কালীবাড়ি, চট্টেশ্বরী মন্দির, পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির, মহানগর পূজা কমিটির উদ্যোগে জেএমসেন হল পূজা মন্ডপ, ঘাটফরহাদবেগ, হাজারী লেইন, টেরিবাজার, সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে কুসুম কুমারী পূজা মন্ডপ, গোসাইল ডাঙ্গা, চেরাগী পাহাড় লুসাই ভবন চত্বর পূজা মন্ডপ, পাথরঘাটা সার্বজনীন পূজা মন্ডপ, দক্ষিণ নালা পাড়া পূজা মন্ডপ, সতীশ বাবু লেইন, পাথরঘাটা গঙ্গাবাড়ি, গোসাইল ডাঙ্গা একতা সংঘ, জেএমসেন লেইন ও রাজা পুকুর লেইন পূজা মন্ডপ।

 

শ্রীশ্রী কৈবল্যধামের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য অ্যাডভোকেট চন্দন বিশ্বাস জানান, এ আশ্রম আধ্যাত্মিক জগতের এক পূণ্য তীর্থস্থান। ৫ দিনব্যাপী উৎসবে এখানে লাখো ভক্তের আনন্দঘন পরিবেশে প্রসাদ

আস্বাদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে।

 

জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ স¤পাদক অসীম কুমার দেব জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব সার্বজনীন উৎসবের আমেজেই উদযাপিত হবে। প্রতিটি মন্ডপে সেই আবহ বিরাজ করছে। প্রশাসন খুবই সক্রিয় রয়েছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুুতি নেয়া হয়েছে। তারা আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ স¤পাদক সুজিত দাশ জানান, নগরীর মন্ডপগুলোতে এর মধ্যে সকল প্রস্ততি প্রায় স¤পন্ন হয়েছে। আলোক সজ্জায় সাজানো হয়েছে প্রতিটি মন্ডপ। নগরীর ৩১৬টি মন্ডপে সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে পূজা স¤পন্ন হবে বলেও তিনি জানান।

 

মহাষষ্ঠীতে আজ জেএমসেন হলে মহানগর পূজা পরিষদের কর্মসূচিতে রয়েছে, দুপুর ২ টায় মাতৃসম্মেলন, এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সাবিহা নাহার মুসা এমপি, বিকাল ৪টায় সংগীত পরিবেশনা, সন্ধ্যা ৬টায় দেবী মঞ্চের আবরণ উন্মোচন করবেন শ্রীমৎ স্বামী সুদর্শনান্দপুরী মহারাজ, সন্ধ্যা ৭ টায় আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুছ ছালাম এবং রাত ৯টায় বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। এদিকে চট্টগ্রাম জেলা পূজা পরিষদের উদ্যোগে আজ সকাল ১১ টায় জেলা পরিষদ মিলনায়তনে বস্ত্র বিতরণ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন রেলপথ মন্ত্রনালয় স¤পর্কিত

সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি। কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *