চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

পাহাড়ে মিয়ানমার ভান্তে: অশুভ লক্ষন

প্রকাশ: ২০১৭-১০-১০ ০০:১৪:০৫ || আপডেট: ২০১৭-১০-১০ ০০:১৮:১৫

 

কাইছার হামিদ: রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ও বান্দরবান এ তিনটি জেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এলাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের এই এলাকা পাহাড় ও উপত্যকায় পূর্ণ বলে এর নামকরণ হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম। দেশের একটা বিশাল অংশের বনভূমি এই অঞ্চল জুড়ে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিভিন্ন কারণে ঐতিহাসিকভাবে গুরত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মালম্বী জাতিগোষ্ঠী। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ওপারে চলছে নির্যাতন, এপারে আশ্রয়।

 

মিয়ানমার বৌদ্ধ প্রধান দেশ। ওপারের ভান্তের সাথে এপারের যোগাযোগ রয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকায় সুড়ঙ্গ পথে যাতায়ত। স্যোসাল মিডিয়ায় এ ব্যাপারে একাধিক ছবি ও সংবাদ চোখে পড়েছে। এখানে সরকার বাহাদুরের নজরদারি বাড়ানো দরকার। এটি অশুভ লক্ষন। তিন দিনের ব্যবধানে বান্দরবান জেলার লামায় মিয়ানমারের নাগরিক দুই ভান্তে আটক হয়েছে। এটি ভাবনার বিষয়। গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা প্রয়োজন। এর পেছনে রহস্য কি?

 

অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে বান্দরবানের লামায় ওয়েবুং হ্লা মার্মা (৪২) নামের মিয়ানমার নাগরিককে আটক করেছে সেনাবাহিনী। সোমবার বিকালে পৌরসভার হরিণঝিরি বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। ওয়েবুং হ্লা মার্মা মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের ক্যতরম্রোত জেলার পাওয়ারা থানার পাওয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। সে ওই এলাকার মৃত মংছিংচা মার্মাার ছেলে বলে পুলিশকে জানায়।

 

এদিকে,

 

গত ৬ অক্টোবর রাতে উপজেলার সরই ইউনিয়নের কম্পনিয়া রিথোয়াই মার্মা পাড়া বৌদ্ধ বিহার এলাকা থেকে অবৈধভাবে অবৈধ বসবাসকারী হ্লাথোয়াইন মার্মা (৩৫) নামের এক ভান্তেকে আটক করা হয়। উদ্বেগের বিষয়,  গত ২০ সেপ্টেম্বর এই লোক নিজের নাম “রাজসেনা” পরিচয়ে সরই ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হতে ছবি তুলতে যায়। সেদিন সংবাদকর্মীদের কারণে সে ভোটার হতে পারেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, সে জন্মনিবন্ধন ও চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট কিভাবে পেল ? কেন মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

পার্বত্য এলাকা প্রধানত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সাইনো তিব্বতী মঙ্গোলয়ড ১৪ টি জাতিগোষ্ঠী এখানে ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেছে। অভিবাসী উপজাতি প্রধান দু’টি হলো চাকমা এবং মারমা। এ ছাড়াও আছে ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, লুসাই, পাংখো, ম্রো, খিয়াং, বম,খুমি, চাক,গুর্খা, আসাম,সানতাল এবং বিপুল সংখ্যক বাঙালি।

ইতিহাস থেকে নেওয়া তথ্য মতে, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুনর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিস ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে।

 

১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়।ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্‌স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮০ এর দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলা করা হয়।

 

১৯৪৭ সালে দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে যখন রাষ্ট্রগঠন হয় তখন চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ধারণা ছিল তাদের এলাকা ভারত বা বার্মার অন্তর্ভুক্ত হবে। যে কারণে ১৪ আগস্ট পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সর্বত্র পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলিত হলেও ১৫ আগস্ট রাঙ্গামাটিতে ভারতীয় পতাকা এবং বান্দরবানে বার্মার পতাকা উত্তোলিত হয়। ১৭ আগস্ট র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ প্রকাশিত হলে জানা যায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম পাকিস্তানের ভাগে পড়েছে। ২১ আগস্ট পাকিস্তানি সৈন্যরা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানে গিয়ে ভারতীয় ও বার্মার পতাকা নামিয়ে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা হয়।

 

গত শুক্রবার উখিয়া থ্যাইংখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কথা হয় ৮২ বছর বয়সি সোলাইমানের সাথে। তিনি বলেছেন, মিয়ানমার মনে করে আমরা চট্টগ্রামের অাঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি তাই আমরা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। আমরা বাংলাদেশী। মিয়ানমাররা চট্টগ্রাম অঞ্চল তাদের এলাকা মনে করে। নি:সন্দেহে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ভান্তেদ্বয় কোন উদ্দেশ্যে প্রবেশ করেছে।

 

রোহিঙ্গা সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত মিয়ানমারের নাগরিক অবৈধ অনুপ্রবেশ করেছে কিনা সতর্ক থাকতে হবে। এলাকায়, মহল্লায় অচেনা লোকজনের আনাগুনা দেখলে প্রশাসনকে অবহিত করতে হবে।

লেখক: সম্পাদক,  বীর কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *