চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

রোহিঙ্গা প্রশ্নে বর্বরদের ঐক্য ও বিভক্ত মানবতাবাদী 

প্রকাশ: ২০১৭-১০-১৪ ০১:৫০:২৬ || আপডেট: ২০১৭-১০-১৪ ০২:৪২:০৪

কাফি কামাল: আরাকান থেকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূলে বর্মীবর্বরদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ইস্পাতকঠিন ঐক্য। ধর্মের মাদক ভিক্ষুদের, জমির লোভ রাখাইনদের, উগ্রজাতীয়তাবাদের নেশায় বার্মিজদের এবং সন্ত্রাস জুজুর মাধ্যমে রোহিঙ্গা বিরোধীতায় পুরো দেশবাসীকে তারা নিয়ে এসেছে এককাতারে। আরাকানে সংঘটিত নৃশংসতা থেকে চোখ সরিয়ে রেখে রোহিঙ্গা নির্মূলে বার্মিজদের মধ্যে তৈরি হয়েছে এক অভূতপূর্ব ঐকমত্য। জনগনের শক্তিতে বলিয়ান বর্মীবর্বরদের প্রত্যক্ষ সমর্থন দিচ্ছে চীন-রাশিয়া-ভারতের মতো পরাশক্তি। আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও বাণিজ্যিক সুবিধার বিনিময়ে বর্মীরা মুঠোয় পুরেছে গডফাদারদের কূটনৈতিক সমর্থন। অন্যদিকে মানবতাবাদীরা বড্ড দ্বিধাবিভক্ত, হাত-পা বাঁধা এবং কোনঠাসা।

 

রোহিঙ্গাদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সংকটের মুখোমুখি বাংলাদেশ। রাজনৈতিক বিভাজনে বিভক্ত হয়ে আছে বাংলাদেশের মানুষ। কোন জাতীয় সংকটেও তৈরি হচ্ছে না ঐক্য। আন্তর্জাতিক পরিম-লেও তাই শক্তিশালী অবস্থানে নেই বাংলাদেশ। জাতিগত এ অনৈক্যের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছে মিয়ানমার। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় নিয়ে যখন বাংলাদেশের রাজনীতি উত্তপ্ত, অস্বস্তিতে সরকার; ঠিক তখনই জাতিগত নির্মূল অভিযানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বার্মা। প্রথমে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নেতিবাচক মন্তব্য, পরে সীমান্তে যৌথ অভিযানের প্রস্তাব সবই গেছে মিয়ানমারের অনুকূলে। রাজনৈতিক অস্থিরতায় অদূরদর্শী পররাষ্ট্রনীতির কারণে চীন-ভারত কোন দেশের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। ভারতের মতো প্রভাবশালী দেশ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। মানবতাবাদী বাংলাদেশ সফল হতে পারেনি কূটনীতিতে, বরং দৃশ্যত কোনঠাসা।

 

আসিয়ানের শেকলে আটকে পড়েছে মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া। নিজের স্বার্থে চীনের পকেটে পাকিস্তান, বোবার ভূমিকায় সৌদি আরব। বিভেদ-বিভাজনে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে মুসলিম উম্মাহর অভিভাবক সংঘ ওআইসি। চীন-রাশিয়ার কারণে নখদন্তহীন হয়ে পড়েছে জাতিসংঘ। দিনদিন ম্রিয়মান হয়ে পড়ছে জাতিসংঘের মানবতাবাদী মহাসচিব অ্যান্তনি গুতেরেজের কণ্ঠস্বর। তবু বিবেকবান এই মানুষটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় বন্ধু মানবতাবাদী বাংলাদেশের। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিভাজিত মানবতাবাদীদের বিপরীতে বর্বরদের ঐক্য আজ ইস্পাতকঠিন। অতএব মিয়ানমারে মানবতা আজ গোরস্তানগামী।

 

#ঐক্যবদ্ধ_মঙ_রাখাইন_বার্মিজ 

বার্মায় সামাজিকভাবে বৌদ্ধ পুরোহিত মঙদের অবস্থান বেশ শক্তিশালী। কেবল ধর্মগুরুই নন, অর্থনীতিতেও রয়েছে তাদের সুসংহত অবস্থান। পরম-পূজনীয় ও ক্যারিশম্যাটিক বৌদ্ধভিক্ষুরা মা-বা-থা’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ধর্মীয় ইস্যুতে এসব ভিক্ষুর কর্তৃত্ব সরকারের চেয়ে অনেক বেশি। বার্মিজ সামরিক বাহিনী ধর্মের মন্ত্রে সফলভাবে নিজেদের পকেটে পুরেছে মঙদের। তাদের মাথায় ঢুকানো হয়েছে, মুসলমানরা ধর্মান্তরিত করছে বৌদ্ধদের। মুসলমানদের ঠেকাতে না পারলে বার্মায় বৌদ্ধধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বৌদ্ধরা মনে করে ইসলাম একটি সম্প্রসারণশীল ধর্ম এবং মুসলিমদের কারণে বৌদ্ধদের ধর্মবিশ্বাস দুর্বল হচ্ছে। বৌদ্ধ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত অশিন উইরাথুসহ দেশটির মঙরা এমন এক ধর্মবিদ্বেষ ধারণ করেন। যে নিজেকে ‘বুড্ডিস্ট লাদেন’ ও ‘ছোট ট্রাম্প’ হিসেবে পরিচয় দেন।

 

উগ্রবাদী মঙদের দুইটি সংগঠন ‘৯৬৯’ এবং ‘মা বা থা’ সে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে পুরো বার্মায়। বর্তমানে এ মনোভাবটি পরিণত হয়েছে পুরো বার্মিজ জাতির মনোভাবে। চলমান রোহিঙ্গা জাতিগত নির্মূলের পক্ষে আরাকানসহ পুরো বার্মায় মিছিল, মিটিংসহ নানা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে ভিক্ষুরা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর কাছেও তারা প্রকাশ্যে, নির্ধিদ্বায় মুসলিম বিরোধী সে মনোভাব প্রকাশ করছে নানা সাক্ষাৎকারে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্বরতাকে মানবতাবাদীরা বলছে জাতিগত নির্মূল। ধর্মের কথাটা বললে অনেকেই অস্বস্তিবোধ করছেন। কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্রাসিস গ্রুপ (আইসিজে)’র এশিয়া বিষয়ক ‘মায়ানমারের বৌদ্ধবাদ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা’ শীর্ষক সর্বশেষ রিপোর্টে পরিস্কার বলা হয়েছে- ‘বহু-ধর্ম ও বহু-জাতিক রাষ্ট্রটিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য গুরুতর হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উগ্র বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ।’

 

বার্মায় অনেকগুলো জাতিগোষ্ঠীর একটি রাখাইন। আরাকান রাজ্যে জনসংখ্যার দিক থেকে তারাই সংখ্যাগুরু। আরাকানের অধিবাসীদের দুই-তৃতীয়াংশই রাখাইন। স্বাভাবিকভাবে রাজ্যটির বেশিরভাগ ভূমির মালিকানাও তাদের। বার্মিজদের হাতে মার খেয়ে এককালে রাখাইনরা শরণার্থী হয়েছিল বাংলাদেশে। বৃটিশ আমলেও রাখাইনদের কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী বার্মিজদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করেছে। রোহিঙ্গা ও রাখাইনদের গেরিলা গ্রুপগুলো ‘আরাকান মুক্তি সংস্থা’ নামে একটি মোর্চাও গঠন করেছিল সত্তরের দশকে। কিন্তু দেশটির সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দুর্বল করে রাখাইনদের কাছে টেনে নিয়েছে। রাখাইন জাতিগোষ্ঠীর সামনে সেনাবাহিনীর বিশেষ মন্ত্রটি হচ্ছে ‘জমিরক্ষা’। তোমাদের ভূমি দখল করে ফেলছে কালা বাঙালি মুসলমানরা। তাদের ঠেকাতে না পারলে একসময় তোমাদেরই রাখাইন ছাড়তে হবে। জমির লোভ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে একটি বড় নেশা, উন্মত্তার উপলক্ষ্য। রাখাইনে অনেকেই মনে করেন, রোহিঙ্গা জনসংখ্যা বাড়লে তারা একদিন তাদের সব জমি নিয়ে নেবে। কারণ তারা চার স্ত্রী এবং বহু সন্তান নিতে পারে। রাখাইনের রাজধানী আকিয়াবে (সিত্তুয়ে) কর্মরত দেশটির অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থার কর্মকর্তা টিন উইন গণমাধ্যমকে বলেছেন- ‘মুসলমানরা দিন দিন বাড়ছে। তারা অনেক বাচ্চা-কাচ্চা জন্ম দেয়।’ কখনও কখনও ‘ধর্মান্তকরণ’ এবং ‘রাখাইন নারী ধর্ষনের’ ইস্যুর মাধ্যমে বিষিয়ে তোলা হয়েছে তাদের মন।

 

বার্মার প্রধান জাতিগোষ্ঠী বার্মিজদের বসবাস রেঙ্গুন থেকে মান্দালয়ে। এককালের আগ্রাসী এ জাতিগোষ্ঠী ভিন্ন জাত, ধর্ম ও বর্ণকে কোনকালেই সহ্য করেনি। এককালে রাখাইনরাও হয়েছিল তাদের আগ্রাসনের শিকার। পরিকল্পিত প্রচার-প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে একটি ভয়ংকর জঙ্গিগোষ্ঠী হিসেবে রোহিঙ্গাদের চিত্রিত করা হয়েছে বার্মার সর্বস্তরের মানুষের মনে। সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদী গ্রুপগুলো এমন ধারণা প্রচার করছে দীর্ঘদিন ধরে। বার্মিজদের কাছে রোহিঙ্গাদের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বহিরাগত ‘বাঙালি সন্ত্রাসী’। তাদের ‘আইএস’সহ নানা জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে জুড়ে বার্মার বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সাধারণ মানুষের কাছে নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে সেনাবাহিনী। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও নিরাপত্তাজনিত আতঙ্কের টোটকায় সাধারণ মানুষকে কাছে টেনেছে সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের ‘দ্য ভয়েস’ সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি লেখায় একজন পাঠক মতামতে বলেছেন, ‘আমাদের উচিত কালারস হত্যা করা অথবা ধ্বংস করা, তা না হলে এ দেশ থেকে বৌদ্ধ ধর্মের অস্তিত্ব মুছে যাবে।’

 

দেশটির গণতন্ত্রমনা মানুষগুলো কোনভাবেই বোকা নন। কিন্তু জাতীয়তাবাদের নেশায় নেশাগ্রস্ত। দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করার অভিজ্ঞতায় তারা খুব ভালো করেই বুঝে পশ্চিমা বিশ্বের মনস্তত্ব। তারা জানে, বাংলাদেশের মতো একটি মুসলিম প্রধান দেশের পাশে রোহিঙ্গাদের জন্য আরেকটি মুসলিম দেশ প্রতিষ্ঠার ন্যূনতম সহযোগিতাও করবে না পশ্চিমা বিশ্ব। তারা রোহিঙ্গা নির্মূলের সমালোচনা করবে কিন্তু তা বন্ধ করতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেবে না। তারা বুঝে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পদক্ষেপ আটকে দেবে তাদের গডফাদার চীন-রাশিয়া। তারা জানে, তাদের পক্ষে কূটনীতি করবে ভারত-ইসরাইল। ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী দিক থেকে বৌদ্ধরা কট্টর রোহিঙ্গাবিরোধী হিসেবে আরাকানের নৃশংসতা ও রোহিঙ্গা জাতিগত নির্মূলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে। জাতিসঙ্ঘের ভাষায়, দুনিয়ার সবচেয়ে নির্যাতিত ও নির্মূল হয়ে যাওয়া সহ্য করা জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা। কিন্তু রোহিঙ্গাদের রক্ষায় কি করেছে জাতিসংঘ?

 

#উগ্রবাদই_যখন_রাজনীতির_শক্তি

রাজনীতির কূটকৌশলে বিরোধীদলগুলোকে এক করেছে সেনাবাহিনী। ক্ষমতাসীন অং সান সু চি’র ছিল গণতান্ত্রিক। তাদের পক্ষে রয়েছে পশ্চিমাবিশ্বের প্রত্যক্ষ সমর্থন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধীদলগুলো সু চি’র প্রতিকূলে। রাজনৈতিক স্বার্থেই তারা সেনাবাহিনীর অনুগত। আরাকানে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে ২০টি বিরোধীদলের একটি মোর্চা তৈরি করে সেনাজান্তা। জান্তার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী অভিযানের কয়েকদিন আগে ‘বাঙালি’ ও ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে ১৪ই আগস্ট সু চি সরকারের কাছে ২০১৪ সালের কাউন্টার টেররিজম আইনে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনে অপারেশন পরিচালনার আবেদন জানিয়ে একটি খোলা চিঠি লেখে সে ২০ দল। নিউ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফোর্সসহ দলগুলো ‘বাঙালিদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম’ ঠেকাতে সরকারের কাছে উত্থাপন করে ১১টি সুপারিশ।

 

সু চি’র দলের নেতারা লজ্জ্বিত হচ্ছেন গণতান্ত্রিক বিশ্বে। কিন্তু সেনাবাহিনী, মঙ ও উগ্রজাতীয়তাবাদীদের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজেরা বিপদের পথে পা বাড়াতে চায় না। রাজনীতির ম্যারপেচেই দেশটির গণতন্ত্রমনা এখন পরিণত হয়েছে হত্যাযজ্ঞের সমর্থক ও উগ্রপন্থীদের দোসর। উগ্রজাতীয়তাবাদের পাশাপাশি ভয়েও অনেকেই সমর্থণ করছেন জাতিগত নির্মূল অভিযান। গণজমায়াতের মাধ্যমে, গণমাধ্যমের প্রচারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে তারা সবাই সু চি’র সঙ্গে আছেন। জাতির উদ্দেশে ভাষণের নামে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রেসনোট পাঠের ভূমিকায় তাই সু চি। সবমিলিয়ে এককালের আগ্রাসনবাদী বর্মীজমের আধুনিক রূপ দাঁড় করানো হয়েছে ‘মিয়ানমারিজমে’। সু চি’র জীবনীকার উইন্টেলের বরাতে বিবিসি লিখছে, সু চি হাড়ে মজ্জায় বার্মিজ।’

 

#স্বার্থের_বিষই_মানবতার_হন্তারক

আরাকানে এখন হাঙর-কুমিরদের মেলা বসেছে। আঞ্চলিক ভূরাজনীতি রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীন-ভারতকে নিয়ে এসেছে একলাইনে। সামরিক প্রশিক্ষক ও সমরাস্ত্র বিক্রেতার ভূমিকায় এক হয়েছে রাশিয়া-ইসরাইল-পাকিস্তান। বঙ্গোপসাগরের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের তেল আর আরাকানের গ্যাস যাবে চীনের ল্যান্ডলক রাজ্য কুনমিংয়ে। বাণিজ্যিক স্বার্থে চীন-ভারত-রাশিয়া-ইসরাইল-জাপান সবাইকে একটেবিলে বসিয়েছে মিয়ানমার। ফলত, আর্থিক স্বার্থ আর ভূরাজনীতির কারণে নিহত হল মানবতা।

 

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যখন মিয়ানমার সফর করছেন তখন আরাকানে চলছে জাতিগত নির্মূল অভিযান। সারাবিশ্ব যখন প্রত্যাশা করেছিল রোহিঙ্গা ইস্যুতে অন্তত কূটনৈতিক লাইনে দু’কথা বলবেন তিনি। কিন্তু ভারতীয় স্বার্থের কাছে তিনি কবর দিলেন মানবতা। কারণ বার্মাকে চীনের হাতে তুলে দিতে চায় না ভারত। সু চি যখন রোহিঙ্গাদের ‘টেরোরিস্ট’ বলল, মোদি বললেন, ‘তিনি সু চি’র পাশে আছেন’। মিয়ানমারের পদক্ষেপকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিলেন তিনি। বিবিসি বলেছিল, ওই সফরে ‘ভারতের মূল উদ্দেশ্য মিয়ানমারে চীনের প্রভাববলয়ে ভাগ বসানো’ এবং ‘ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভাবাবেগ ব্যবহার করে মিয়ানমার জাতীয়তাবাদীদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা’। ভূরাজনীতির কৌশলে প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিকে হারানো ও অর্থনীতির হিস্যা রক্ষায় গণহত্যা এবং জাতিগত নির্মূলকরণে সমর্থক হল গণতান্ত্রিক ভারত।

 

মিয়ানমার দেশটির গণমাধ্যমগুলোকে ব্যবহার করছে অর্ন্তবাসের মতো। সারাবিশ্বে যখন বার্মিজ সেনা ও মগদের নৃশংসতার খবরে মুখর তখন চরমপন্থী বাঙালি সন্ত্রাসীরা দেশটির বিভিন্ন শহরে আক্রমণের পরিকল্পনা করছে এমন সব সংবাদ পরিবেশন করছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। তারা জিগির তুলেছে সেনাবাহিনী নয় বরং জঙ্গি সংগঠনগুলোই পুড়িয়ে দিচ্ছে গ্রামগুলো। গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গাদের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী যে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে তার কোন চিহ্নই নেই সেখানে। আর বিশ্বমিডিয়াকে বলতে গেলে, বার্মিজ সরকার পা-ই রাখতে দেয়নি আরাকানে।

 

লেখক: সাংবাদিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *