কাইছার হামিদ
প্রকাশ: ২০১৯-০৬-০৫ ০১:২১:১৮ || আপডেট: ২০১৯-০৬-০৫ ০১:২১:১৮
কাইছার হামিদ-
পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ ঈদের সওগাত নিয়ে এলো। আজ ঈদ। জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি জানালো ঈদ উদযাপিত হবে বৃহস্পতিবার। আবার জানালো আজ। যাই হোক সমালোচনা করলাম না। এ বিষয়ে আলোচনাও করলাম না। কারন ঈদ মানে আনন্দ।
অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- ছোট-বড় সবাই এর অংশীদার। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার আনন্দ। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি।
অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হই। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর।
দুর্ভাগ্যজনক যে, রমজান সংযমের মাস হওয়া সত্ত্বেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা করেছে। রমজান মাসেও হত্যা, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এর পাশাপাশি মানুষ কষ্ট পেয়েছে যানজটে। তবে মহা সড়ক গুলোর উন্নতি হওয়ায় এবার ঈদে ঘরমুখী মানুষের ভোগান্তি কম হয়েছে।
আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক সমস্যা আছে, আছে অনেক জটিলতা। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন উৎসবে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ শরিক হয়। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেয়। যারা সারা বছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে চায়। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। এ কারণেই ধনীদের জন্য জাকাত ফরজ করা হয়েছে।
ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম। ফিতরার উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সচ্ছলরা সঠিক নিয়মে জাকাত-ফেতরা দান করলে দরিদ্ররাও ঈদের খুশির ভাগ পেতে পারে। রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি অনেকে কোনো দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী।
ঈদ উদযাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে। ঈদের ছুটিতে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম, বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড ইত্যাদি যেন স্থবির হয়ে না পড়ে, সরকারকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
উৎসব-আনন্দে সংশ্লিষ্টরা যেন দায়িত্বের কথা ভুলে না যান।
ঈদ আসে সাম্যের দাওয়াত নিয়ে। অনেকে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাকে বড় করে দেখেন। এর মর্ম অনুধাবন করেন না। ইসলাম শান্তি, সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে আনন্দ ও সম্প্রীতির বড় অভাব। ঈদ উপলক্ষে রাজনৈতিক নেতারা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এ দৃষ্টান্ত কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি তারা রাজনীতিতেও শুভেচ্ছা ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন, তবে তা হবে সমগ্র জাতির জন্য আনন্দের সংবাদ। ঈদুল ফিতরের আনন্দ সবাই ভাগাভাগি করে নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
বীর কণ্ঠের সকল পাঠক, শুভ্যানুধায়ী,বিজ্ঞাপনদাতা, বীর কণ্ঠ পরিবারের সদস্যসহ সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।