প্রকাশ: ২০১৯-০৯-১৭ ২১:১৫:২২ || আপডেট: ২০১৯-০৯-১৭ ২১:১৫:৩০
কৈশোর হলো শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করার মধ্যবর্তী দশা, এ সময় জুড়ে একজন কিশোর বা কিশোরীর নানারকম শারীরিক পরিবর্তন ঘটে এবং আকস্মিক হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক আবেগের তীব্রতার উত্থান পতন ঘটতে থাকে, যা বয়ঃসন্ধি নামে পরিচিত| আর এই আকস্মিক পরিবর্তনে মানসিক চাপে কিংবা পরিবেশের প্রভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপরাধে; আর বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত ও মারাত্মক রূপ ধারণকারী কিশোর অপরাধ হল কিশোরদের “গ্যাং কালচার”।
‘গ্যাং কালচার’ অপরাধ যাকে সমাজবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘জুভেনাইল সাব কালচার’ বলা হয়। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি যে একেবারে নতুন তা কিন্তু নয়; তবে এর ব্যাপকতা ও মাত্রা খুব বেশী পুরোনোও নয়। এটি মূলত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি হতে আমদানী। আমেরিকায় এমন ১০-১৫ বা তদূর্ধ বছরের কিশোরবন্ধু গ্রুপ কিংবা ক্লাবের সমবয়সী ও সমমনা কিছু বন্ধুবান্ধব এক সাথে সংগঠিত হয়ে কৈশোরিক উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। তারা কখনো বিকট শব্দে হর্ণ বাজাতে বাজাতে প্রচন্ড গতিতে মোটর সাইকেল বা গাড়ী চালিয়ে পথচারীকে চমকে দেয়। কখনো দল বেঁধে সাইক্লিং করে, একসাথে রাজপথ দাপিয়ে বেড়ায়, ইভ টিজিং করে, ‘প্র্যাংক’ নামে পথচারীদের হয়রানী করে, কখনো বা অ্যাডভেঞ্চারের ছলে ছিনতাইসহ নানা ভায়োলেন্সে জড়িয়ে পড়ে। আর এই পাশ্চাত্য সাবকালচারের প্রভাব আজ আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে মিশে গিয়েছে আমাদের শান্ত এই জাতিটির সাথে, যা বড়ই দুঃখের ও হতাশাব্যঞ্জক।অধূনা আমাদের সমাজে এ কিশোর অপরাধের সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বেড়ে চলেছে! সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সমাজেও ক্রমবর্ধমান হারে কিশোর অপরাধ যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তার ফলে এটি খুব শীঘ্রই যে একটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিগণিত হবে তা অনস্বীকার্য। এছাড়া দৈনন্দিন পত্রপত্রিকা জানান দিচ্ছে কিশোর অপরাধেরও ধরন পাল্টাচ্ছে প্রতিনিয়ত; চুরি বা ঘর পালানোর মতো অপরাধগুলো পেছনে ফেলে কিশোররা এখন জড়িয়ে পড়ছে ছিনতাই-খুন-ধর্ষণের মতো ভয়ংকর সব অপরাধে। দেশে কিশোর অপরাধী কী হারে বাড়ছে তার একটি চিত্র তুলে ধরছি পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য থেকে: ২০১৬ সালে কিশোর অপরাধের ঘটনায় সারাদেশে মামলা রেকর্ড হয়েছে এক হাজার ৫৯৬টি; ২০১৫ সালে এ সংখ্যা ছিল এক হাজার ১৮৪টি। এ হিসাবে এক বছরে কিশোর অপরাধের মামলা বেড়েছে প্রায় ৩৪ শতাংশের বেশি! দেশের দুই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সেখানে থাকা কিশোরদের ২০ শতাংশ খুনের মামলার আর ২৪ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার আসামি।
২০১৩ সালের ১৬ আগস্ট রাজধানীর চামেলীবাগে নিজ বাসায় ঐশী রহমান আর তার বন্ধুগ্যাং কর্তৃক আপন বাবা-মা বাংলাদেশ পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার ঘটনা পুরো দেশকে স্থম্ভিত করে! ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় উত্তরার ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আদনান কবীরকে খেলার মাঠে পিটিয়ে এবং কুপিয়ে হত্যা করে স্কুলেরই কিছু কিশোর গ্যাং এবং তা ভিডিও করে সোশ্যাল সাইটে দেয়া হলে তা ভাইরালও হয়! ঠিক পরের বছর চট্টগ্রামে মহসিন কলেজ খেলার মাঠ দখলকে কেন্দ্র করে আদনান নামে আরও এক কিশোরকে প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায় তাড়া করিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তথাকথিত বড়ভাই পোষ্য কিছু কিশোর গ্যাং! কদিন আগে হাটহাজারীতে পর্ণাসক্ত ১৬ বছর বয়সী আসিফ একই ভবনের মাত্র ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণ করে হত্যা করে লাশ লুকিয়ে রাখে রান্না ঘরে! এগুলো খন্ডচিত্র মাত্র কিন্তু বিচ্ছিন্ন নয়; ভাবতেই পিলে চমকায় পুরোদেশের চিত্রটা কীরূপ এবং ভবিষ্যতে আরও কতটা বীভৎসতার দিকে যাচ্ছে! অথচ এই বয়সে আমাদের ‘জুভেনাইল সাব কালচার’ বলতে ছিল ভর দুপুরে বাবা মাকে ফাঁকি দিয়ে চুপিসারে বেড়িয়ে পড়া খেলার মাঠে, দল বেঁধে ছুটে যাওয়া কর্ণফুলীর চড়ে, বন-বাঁদাড়ে কিংবা পরিত্যক্ত পোড়াবাড়ীতে; স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা কিংবা মোস্তফা ভিডিও গেইমসের খেয়ালীপনায় টিফিনের টাকা উড়ানো, পাড়া প্রতিবেশীর বাগানের ফল চুরি, পুকুরের মাছ চুরী, বৃষ্টির দিনে কাদায় লেপ্টালেপ্টি করে ফুটবল কিংবা কাবাডি খেলে হাত-পা ভেঙে বাসায় ফিরে উলটো মায়ের হাতের মার খাওয়া, দিনভর পুকুরে আর খালে সাঁতরে এসে রাতে জ্বরে ভোগা, খুব বেপরোয়া হলে দীর্ঘদিন ধরে আঁটঘাট বেঁধে পরিকল্পনা করে বাসা থেকে বহুদূরে কোথাও গিয়ে ঘুরে আসা আর মাঝেমধ্যে রাত বিরাতে যাত্রাপালা কিংবা মেলায় যাওয়ার মতো কোন নিষিদ্ধ আনন্দে মেতে ওঠা। আর সব কিছু করা হতো দুরুদুরু বুকে, যেনো ঘুণাক্ষরেও পরিবার বা পাড়া প্রতিবেশীদের কেউ টের না পান! আর এই বয়সের আত্মপ্রকাশের পথ ছিলো গান বাজনা, অভিনয়, ছবি আঁকা, কবিতা লেখা, বইপড়া, ডায়েরি লেখা, খেলাধুলাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করা,পত্রমিতালী প্রভৃতি নানা সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে নিজেদের তুলে ধরা। অথচ * আজ সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা শিশু-কিশোরদের পর্ণ আসক্তির পথে ঠেলে দিয়ে করছে ক্রমবিনাশ!* ভার্চুয়াল জগত ডেকে এনেছে আরেক মহাবিপর্যয়; সেই পাশ্চাত্যের ‘প্র্যাংক’ এখন সমাজের উচ্চশ্রেণীর বিকিয়ে যাওয়া সন্তানদের বদৌলতে ছড়িয়ে পড়ছে সমাজের আনাচে-কানাচে! নিজেদের উচ্চমানের ইউটিউবার আর টিকটক সেলিব্রিটি বানানোর মানসে আর ভাইরাল হওয়ার নেশায় তারা মেতে উঠছে বিকৃত সব কর্মকান্ডে! এখন পাড়া মহল্লায় দলবেঁধে হৈ হুল্লুড় করে বেড়ানো কিশোরদল এখন পাড়ার মুরুব্বী বা গুরুজনদের থোড়াই কেয়ার করে; দিনে দুপুরে জন সম্মুখে অবলীলায় সহিংসতায় মেতে উঠছে তার; উদ্ভট ও বিকৃত সব হেয়ার স্টাইল, ড্রেসাপে নেই শালীনতার বালাই, গলায় মোটা চেইন আর কলার উঁচিয়ে প্রকাশ্যে দেধারছে করছে ধূমপান, স্কুলগামী কিশোরীকে করছে টিজ, অবেলায় পাওয়া হাতের স্মার্টফোন ভর্তি পর্ণোগ্রাফীতে, প্র্যাংকের নাকে উদ্ভট অসভ্য সব কর্মকান্ডে তৎপর প্রতিনিয়ত;- এই চিত্রগুলো কোন বিচ্ছন্ন ঘটনার নয়, এসব আজ সমাজের চারিদিকের নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য; আর শিশু-কিশোরদের সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের এই চিত্র দেশ ও জাতির জন্য যে ভয়ানক অশনি সংকেত বহন করছে তা বলা বাহুল্য।
স্টাইল, ড্রেসাপে নেই শালীনতার বালাই, গলায় মোটা চেইন আর কলার উঁচিয়ে প্রকাশ্যে দেধারছে করছে ধূমপান, স্কুলগামী কিশোরীকে করছে টিজ, অবেলায় পাওয়া হাতের স্মার্টফোন ভর্তি পর্ণোগ্রাফীতে, প্র্যাংকের নাকে উদ্ভট অসভ্য সব কর্মকান্ডে তৎপর প্রতিনিয়ত;- এই চিত্রগুলো কোন বিচ্ছন্ন ঘটনার নয়, এসব আজ সমাজের চারিদিকের নিত্যনৈমিত্তিক দৃশ্য; আর শিশু-কিশোরদের সামাজিক ও মানসিক মূল্যবোধ অবক্ষয়ের এই চিত্র দেশ ও জাতির জন্য যে ভয়ানক অশনি সংকেত বহন করছে তা বলা বাহুল্য।
আজকের এই বদলে যাওয়া সংস্কৃতি দেখলে সত্যিই শিউরে উঠতে হয়; আমাদের শিশু-কিশোরদের চিন্তা, মন, মনন আর
মানসিকতায় সাধিত হচ্ছে ভয়ঙ্কর সব প্রবণতা! দায়টা কি কেবলই তাদের? এক্ষেত্রে আমি তাদের এককভাবে মোটেও দুষবো না। এই দায়ভারও প্রকারান্তরে আমাদের উপরও বর্তায়। মাঝ রাস্তায় প্রকাশ্য দিবালোকে প্রজন্মের এসব নৈতিকতার অবক্ষয়মূলক কর্মকান্ড দেখেও দিব্যি উপভোগ করে যাই আমরা, কেননা জাতিগতভাবে আমরা উৎকৃষ্ট মানের দর্শক! আমরা জানার চেষ্টা করিনা কেন কিশোরেরা হঠাৎ করেই এমনসব অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে? মনোবিজ্ঞানীদের মতে -এ বয়সের কিশোর-কিশোরীদের মনোজগতে একধরনের স্বাধীনতা ও সক্রিয়তার চাহিদা (Need for freedom and activity), তীব্র আত্মসম্মানবোধ একই ভাবে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস ও অনুপ্রেরণার সৃষ্টি করে। কোন নতুনত্ব, অভিনবত্ব, বাইরের আহবান এসব তাদেরকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। আত্মপ্রকাশের জন্য তারা উন্মুখ থাকে, যা তাদেরকে কিছু একটা করতে তাগিদ যোগায়। আর তাদের এই প্রকাশ আকাঙ্খা কোন অহেতুক বা অবাঞ্ছনীয় কিছু নয় – বরং এক সুন্দর, সুস্থ্য, স্বাভাবিক মানসিক বিকাশেরই লক্ষণ; যার পরিপুর্ণ ও সুষ্ঠু বিকাশে আজকের কিশোরটি হয়ে উঠবে আগামী দিনের আলোকিত মানুষ, গড়ে উঠবে সমাজ ও রাষ্ট্রের সম্পদ হিসেবে। কিন্তু আমরা তাদের দিতে পারছিনা সেই পরিবেশ। অভিভাবকের কর্মব্যস্ততা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতায় ব্যাপৃত থাকায় নিতে পারছিনা তাদের সঠিক পরিচর্যা ও নজরদারি। অন্যদিকে, আকাশ সংস্কৃতির নির্বিচার ও নিয়ন্ত্রণহীন প্রসার ও প্রভাব, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার, বিবাহ বিচ্ছেদ, যৌথপরিবার প্রথায় ভাঙ্গন ও নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির উন্মেষ বড় প্রভাব ফেলছে এইক্ষেত্রে। বাবা-মা উভয়েই কর্মজীবিহেতু শিশু-কিশোরদের একাকীত্ববোধ ইত্যাদি নানা কারণে সন্তানদের সাথে পিতা-মাতার ক্রমাগত সৃষ্টি হয়ে চলেছে এক দুর্লঙ্ঘ দূরত্ব; যার ফলে শিশু-কিশোরদের মাঝে তাদের এই স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব তথা মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নিজ গৃহে বা পরিচিতজনদের সান্নিধ্য ও সঙ্গ’র অভাবে শিশু-কিশোররা খুঁজে নিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অজানা অচেনা বন্ধু কখনো বা কুসঙ্গ, খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের মতো
করে আত্মবিকাশের পথ। উৎসাহিত হচ্ছে কুপথে চলার, আর এসবের ধারাবাহিকতাতেই কিশোররা গড়ে নিয়েছে তাদের মতো করে আপন জগত; গড়ে তুলছে ‘গ্যাং কালচার’। বয়ঃসন্ধিক্ষণের এই সময়টা কিশোর-কিশোরীদের জন্য একটা অস্বস্তিকর ও অস্থিরতার সময়ও বটে। তারা চায় নতুন নতুন চমকপ্রদ ও অভিনব বিষয়ের মাধ্যমে তাদের অসীম আগ্রহ, কর্মস্পৃহা ও নিষ্ঠা দেখাতে। এসময় তাদের ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়, উচিত-অনুচিতবোধ, মূল্যবোধ জাগ্রতের সময়। নিজ পরিবার, বিদ্যালয় ও পারিপার্শ্বকতা, পরিবেশ থেকে শিক্ষা লাভ করে ও প্রভাবিত হয়ে তাদের মধ্যে নীতিবোধ, আদর্শবোধ এমনসব নৈতিক গুণাবলীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক যে শিশু-কিশোরদের সামাজিকীকরণের প্রায় সব প্রাথমিক এজেন্ট বা উপকরণগুলোই (পিতা-মাতা, পরিবার, বিদ্যালয়,পারিপার্শ্বকতা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, পরিবেশ) আজ নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আমরা শিশু-কিশোরদের স্বাভাবিক বিকাশে পরিচর্যা করতে পারছিনা। ফলশ্রুতিতেই গ্যাং কালচার, মাদকাসক্তি, পর্ণাসক্তি, জঙ্গী মতবাদে উদ্বুদ্ধকরণ প্রভৃতি নিত্য নতুন নানা অপসংস্কৃতির ছোবলে সমাজ হচ্ছে দিশেহারা। এই সর্বনাশা সামাজিক ও মানসিক অবক্ষয় থেকে শিশু-কিশোরদের রক্ষা করতে আমরা যত দ্রুত ব্যবস্থা নিবো ততোই সমাজ, দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল। আর এই মঙ্গল সাধনে আলোচিত বহুবিধ বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়াসহ যা সবচেয়ে জরুরী তা হলো: পিতা-মাতার শত ব্যস্ততার মাঝেও সন্তানদের ওপর নজর রাখতে হবে, খবর রাখতে হবে তারা কি করছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে। সেইসাথে অভিভাবক হিসেবে শিশু-কিশোরদের মনের খবর রাখতে হবে, তাদের মন –মানসিকতার পরিবর্তিত প্যাটার্ণ’টার কারণ অনুসন্ধান করে সঠিক পথে তা পরিচালিত করতে হবে। নিয়মিতভাবে পিতা-মাতাকে সন্তানদের সাথে অন্তত একটি ঘন্টা হলেও কোয়ালিটি সময় কাটাতে হবে। তাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। অভিভাবকদের দেখ-ভালের পাশাপাশি এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। কেননা দিনের একটা বড় সময় কিশোর-কিশোরীরা সেখানে কাটায়। আর তাই শিক্ষকদের শুধু পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে তাঁদেরশিশু-কিশোরদের মন-মানসিকতা, মনঃদৈহিক ও মনো-সামাজিক অবস্থাসম্পর্কে সচেতন হতে হবে। আর এজন্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শহর কেন্দ্রিক স্কুলগুলোতে ‘স্কুল মেন্টাল হেলথ’ কর্মসূচী চালু করতে হবে। স্কুলগুলোতে অন্তত একজন হলেও মনোবিজ্ঞানী, কাউন্সেলর বা স্কুল সোশ্যাল ওয়ার্কার নিয়োগদানের মাধ্যমে কিশোর-কিশোরীদের মনোজগতের উন্নয়নে কাজ করতে হবে। শিশু কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্য-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, এনজিও ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও গার্ডিয়ানদের উপস্থিতিতে মাঝেমধ্যেই মানসিক স্বাস্থ্য, প্যারেন্টিং ইত্যাদি বিষয়ে আলাপ আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে পিতা-মাতা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে শিশু-কিশোরদের সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট বিষয়ে সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। ‘গ্যাংকালচার’ নগরায়নের একটি বাই-প্রোডাক্ট বিশেষ। তাই অধূনা গড়ে ওঠা বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটি, আপার্টমেন্ট ওনার্স এসোসিয়েশন, কল্যাণ সমিতি প্রভৃতি নগর আবাসন কর্তৃপক্ষকে শিশু-কিশোরদের সুস্থ্য চিত্তবিনোদনের ব্যবস্থা নিতে এগিয়ে আসতে হবে। কিশোর-কিশোরীরা এক অমিত সম্ভাবনা ও শক্তির আঁধার; একটি জাতির পারমাণবিক সম্ভাবনা বললেও অত্যুক্তি হবেনা। এখন আমাদেরই ঠিক করতে হবে এই পারমাণবিক শক্তিকে আমরা শান্তি, সৃষ্টির কাজে লাগাবো- নাকি এক অপার ধ্বংসলীলার মাতমের দিকে তাদের ঠেলে দিবো। —
এস. এম ইকরাম হোসাইন লেখক ও প্রাবন্ধিক বায়োকেমিস্ট এবং বায়োমেডিকেল গবেষক