চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

মুক্তিযোদ্ধা বাঙ্গালীর বাড়ি পরিদর্শনে সাংসদ জাফর আলম

প্রকাশ: ২০২০-০৩-১২ ২১:০৩:৪৪ || আপডেট: ২০২০-০৩-১২ ২১:০৩:৫৪


চকরিয়া অফিস :
কক্সবাজারের চকরিয়ায় পুলিশী হামলা ও নির্যাতনের শিকার যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাংসদ জাফর আলম।

সৌদি আরবে পবিত্র ওমরা হজ পালন শেষে দেশে ফেরার পর বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সকাল ১০টার দিকে তিনি লক্ষ্যারচর ইউনিয়নের ছিকলঘাটস্থ মুক্তিযোদ্ধা কুঠির পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি মুক্তিযোদ্ধা কুঠিরের ছয়টি কক্ষে পুলিশী তান্ডবের ভয়াবহ চিত্র ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরে সাংসদ জাফর আলম পুলিশী তান্ডবের শিকার মুক্তিযোদ্ধা কুঠিরের নির্যাতিত সদস্যদের সাথে কুশল বিনিময় করেন।

এসময় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর সহধর্মীনি ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নেছারা বেগমসহ নির্যাতিত সদস্যরা একে একে সবাই তাদের বাড়িতে ঘটনার দিনের পুলিশী তান্ডব ও ভয়াবহ নির্যাতনের চিত্র সাংসদ জাফর আলমের কাছে তুলে ধরেন। পরে সাংসদ জাফর আলম মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তির আশ্বাস দেন।


গত ৫ মার্চ দুপুর দেড়টার দিকে চকরিয়ায় যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালায় চকরিয়া থানার সাদা পোষাক ও পোষাকধারী একদল পুলিশ।

এসময় পুলিশ দলের সদস্যরা অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ির দেয়ালে টাঙ্গানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাঙচুরের পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধার কুটিরের ছয়টি কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। তল্লাসীর নামে বাড়ির আলমিরা ভেঙ্গে ২০ ভরি ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ চার লাখ টাকা ও ১৬০ সিসির টিবিএস মডেলের একটি মোটরসাইকেল লুট করে নিয়ে যায়। হামলা ও লুটপাটের সময় পুলিশের বেদড়ক পিটুনীতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধু ও নাতী-নাতনীসহ আটজন আহত হয় বলে দাবী করা হয় নির্যাতনের শিকার মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষ থেকে।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে জীবন বাজি রেখে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করা একজন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে স্থানীয় লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জামায়াত নেতা গোলাম মোস্তফা কাইছারের ইন্ধনে পুলিশ এ বর্বরোচিত হামলা ও লুটপাটের ঘটনার দায় চকরিয়া থানার ওসি কোনদিনই এড়াতে পারেন না। তাই নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমানের প্রত্যাহারের দাবী জানান ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।

এদিকে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, মারধর ও লুটপাটের ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এ ঘটনার সাথে জড়িত চার পুলিশ কর্মকর্তা ও ছয়জন কনষ্টেবলসহ ১০জন পুলিশ সদস্যকে জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন এর নির্দেশে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। পরদিন দুই কর্মকর্তাসহ চার পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়।

এ ঘটনায় কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেনকে প্রধান ও চকরিয়া সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার কাজী মো.মতিউল ইসলাম এবং ডিএসবি’র এএসপি শহিদুল ইসলাম সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। অপরদিকে পুলিশী হামলার ঘটনায় জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের তদন্ত আলোর মুখ দেখবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর পরিবার।

মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর জৈষ্ঠ ছেলে ও লক্ষ্যারচর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি রেজাউল করিম সেলিম বলেন, যুদ্ধাপরাধ মামলার বাদী ও মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদান রেখেছিলেন। তিনি চকরিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের পাশাপাশি জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাংগঠনিক কমান্ডার ছিলেন। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শের উত্তরসূরী ও পিতা মুজিবের একজন নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী সরাসরি উপজেলা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তির উদ্যোগ নেন তখন তিনি বাদি হয়ে চকরিয়া ও কক্সবাজারের ২০জনকে আসামী করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে বিজ্ঞ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে ওই মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার বাবা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালী যে সকল রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছিলেন পরবর্তীতে তারা আমার বাবাকে উড়ো চিঠি ও কাফনের কাপড় পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন। যে কারণে ওই সকল রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীকে আসামী করে থানায় জিডিও করেছিলেন।

ওই সময় বিষয়টি থানা পুলিশকে একাধিকবার মৌখিকভাবে অবহিত করার পরও পুলিশ এ ব্যাপারে কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় অবশেষে স্বাধীনতার মাসেই মুক্তিযোদ্ধের দুসরদের প্রথম আক্রমনের শিকার হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বাঙ্গালীর পরিবার।

পুলিশের নির্যাতনের শিকার বাঙ্গালীর স্ত্রী ও প্যানেল চেয়ারম্যান নেছারা বেগম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন আদৌ আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কুঠিরে হামলা, লুটপাট এমন কি পরিবারের নারী সদস্যদের উপর অমানষিক নির্যাতন করেছে পুলিশ। তাহলে কিভাবে পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশ তদন্ত করবে ?

তার দাবী মুলত: ঘটনার সাথে জড়িত পুলিশ সদস্যদের রক্ষা করতেই পরিকল্পিতভাবে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের স্বার্থে থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমানের প্রত্যাহারসহ দোষী পুলিশ সদস্যদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্ঠান্তমুলক শাস্তিরও দাবী জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *