জাহেদুল হক আনোয়ারা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০২০-০৬-২৬ ১৯:০১:০১ || আপডেট: ২০২০-০৬-২৬ ১৯:০১:০৫
জাহেদুল হক, আনোয়ারা|
আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী চৌমুহনী থেকে বানুরহাট পর্যন্ত বহু ঘরবাড়ির ওপর বিপজ্জনকভাবে ঝুলছে ১১ হাজার ভোল্টেজ বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের তার। ওই এলাকার অন্তত ১০টি বাড়ির ছাদ ও চাল বিদ্যুতের লাইন ছুঁই ছুঁই করছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ বিদ্যুৎ লাইনে গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হতাহতের ঘটনা ঘটলেও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বুধবার বিকেলে ঘরের চালে উঠে বিদ্যুৎস্পর্শে গুরুতর আহত হয় প্রিয়া আক্তার (১০) নামের এক শিশু। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। প্রিয়ার বড়ভাই ফোরকান জানান,ঘরের চাল থেকে লাকড়ি নামাতে গিয়ে ঝুলে থাকা ১১ হাজার ভোল্টেজের তার মাথায় লাগে। তখন ঘরের চালের টিনও বিদ্যুতায়িত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ হলে আমরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত শরীরের প্রায় ৩০ শতাংশ ঝলসে যায়।
বিদ্যুৎ আইন বলছে,হাইভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের নিচে কোনো ঘরবাড়ি বা স্থাপনা থাকতে পারবে না। ডানে ও বামে অন্তত ১০ ফুট ফাঁকা থাকতে হবে। কিন্তু এসব নিয়ম না মেনেই ওই এলাকায় গড়ে উঠেছে বহু বাড়িঘর। যা ১১ হাজার ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের নিচে বা কাছ ঘেঁষে অবস্থিত।
জানা যায়,প্রায় ২৭ বছর আগে বিটি-৪ ফিডার নামে পরিচিত ১১ হাজার ভোল্টেজের এ লাইনটি স্থাপন করা হয়। তখন এই এলাকায় কোনো বাড়িঘর ছিল না। পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠে। হাইভোল্টেজ তারের নিচে অসংখ্য ঘরবাড়ি গড়ে উঠে। স্থানীয়দের অভিযোগ,বাড়িঘরের ছাদ ছুঁই ছুঁই এমন হাইভোল্টেজের সঞ্চালন লাইন সরিয়ে নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এতে সাড়া দিচ্ছে না। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বাস করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ওই এলাকার বিটি-৪ ফিডার লাইনের খুঁটি-৩৫/১ থেকে ৩৫/৯ পর্যন্ত ১১ হাজার ভোল্টেজ সঞ্চালন তার বাড়িঘরের চালে ছুঁই ছুঁই অবস্থা। ওই লাইনের আশপাশে অর্ধশতাধিক পরিবারের বসবাস। বর্তমানে বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে ঝুঁকিপূর্ণ ওই লাইনের সংস্কার কাজ চলছে। সেখানে কয়েকটি নতুন খুঁটি স্থাপন করেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ঝুঁকিপূর্ণ এ লাইনটি ৩০ ফুট উত্তরে সরিয়ে আবদুল বারী চৌধুরী সড়কে স্থাপনের দাবি এলাকাবাসীর।
ঝুঁকিপূর্ণ এ লাইনটি ৩০ ফুট দূরে সড়কের পাশে সরানোর জন্য পল্লী বিদ্যুৎ আনোয়ারা জোনাল অফিসে আবেদন করেন স্থানীয় ফারুক আহামদ। এজন্য ২০১৬ সালের ১৮ আগষ্ট আরইবি ফরম-৫ মতে এক হাজার পাঁচশ টাকাও জমা দেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী আবেদনের এক মাসের মধ্যে সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি চাহিদাপত্র দেওয়ার কথা। কিন্তু তা না করে ওই গ্রাহককে ডেকে নিয়ে লাইন সরানোর খরচ বাবদ দুই লাখ ২০ হাজার টাকা দাবি করে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত ওই টাকা দিতে না পারায় সঞ্চালন লাইনটি সরানো হয়নি।
ফারুক আহামদ জানান,পল্লী বিদ্যুতের দাবিকৃত এত টাকা আমার একার পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তারা ঝুঁকিপূর্ণ লাইনটি না সরিয়ে আগের লাইনে পুনর্সংস্কার কাজ করছে। লাইনটি না সরালে আমাদের জীবনবাজি রেখে বসবাস করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে এ লাইনে দুর্ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।
চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক আবু বকর ছিদ্দিক বলেন,বিদ্যুতের তার গেছে আগে,তারপর বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কাজেই যেখান দিয়ে লাইন গেছে সেখানে স্থাপনা নির্মাণ করা উচিত হয়নি। তা ছাড়া লোকজনইবা কী করবে। এখন তো জমি-ভিটের অভাব। তাদের বিষয়টাও দেখতে হবে। এলাকাবাসীর পক্ষ হয়ে যতটুকু সম্ভব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।