চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা বান্দরবান পাহাড়ে

প্রকাশ: ২০২০-১০-২৬ ১২:৩১:৪৬ || আপডেট: ২০২০-১০-২৬ ১২:৩১:৫২

মোঃ সালাহ উদ্দীন|
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় রয়েছে কাজু বাদাম চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। পার্বত্য বান্দরবান অঞ্চলে সরকারি বেসরকারি ভাবে কাজু বাদামের চাষ শুরু হয়েছে, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের “বছরব্যাপি ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্প” এ খাতের উন্নয়নে আগ্রহী চাষীদের উক্ত প্রকল্প হতে থেকে দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষন ও প্রণোদনা। তাছাড়া অনেক নতুন তরুন উদ্যোক্তারা ও সম্ভাবনাময়ী এই খাতটি দিকে এগিয়ে আসছে।

স্বল্প পরিসরে কাজু বাদাম চাষ হলেও অপার সম্ভাবনা রয়েছে এ চাষে। সরকারী এই সহযোগিতা চলমান থাকলে অদুর ভবিষ্যতে এই পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপাদিত কাজুবাদাম দিয়ে বিশ্বের কাজু বাদাম রফতানির শীর্ষ তালিকায় নাম লেখাতে পারে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে এ পেশায় প্রায় কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। উৎপাদিত কাজু বাদাম রফতানির মাধ্যমে বাংলাদেশ বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকা রফতানি আয় করতে পারবে।

পার্বত্য অঞ্চলে প্রায় এক লাখ হেক্টরের বেশি পতিত জমি রয়েছে। সরকারী সহযোগিতায় এই জায়গা গুলো চাষাবাদের আওতায় আনা গেলে,এই জমিতেই ন্যূনতম এক লাখ মেট্রিক টন উন্নতমানের কাজু বাদাম ফলন করা সম্ভব। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পেলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দেশেই সহজলভ্য হয়ে উঠবে তা।

কাজু বাদাম চাষ সম্প্রসারণের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে আমাদের দেশে। ধান চাষের চেয়ে বাদাম চাষ সহজ ও পরিশ্রম কম হওয়ায় এবং কম দামে বীজ পাওয়ায় অনেক কৃষকেরা এর চাষ করে। আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম চাষ হতে পারে সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত।

পাহাড়ী ঢালুতে এ চাষ সহজেই করা যায়। জুমভিত্তিক চাষাবাদ নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়িরা এ চাষ করতে পারে। প্রচুর লাভবান হবে চাষীরা। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে কাজু বাদামের ব্যাপক চাহিদা বাড়ছে। সরকারী নির্দেশনানুযায়ী আমরা চাষীদের কাজু বাদাম চাষে উৎসাহ, অনুপ্রেরনা যোগাচ্ছি।

গুগুলে চার্জ করে জানা যায়, বর্তমান বিশ্বে কাজু বাদাম রফতানির শীর্ষে অবস্থান করছে ভিয়েতনাম। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ভারত। সম্প্রতি ভিয়েতনাম ভারতকে টপকে শীর্ষ অবস্থান দখল করে নিয়েছে। দেশটি আশা করছে, বছর শেষে প্রায় ৩ লাখ টন কাজু বাদাম বিক্রি করে ২.৭ বিনিয়ন ডলার (১৬ হাজার কোটি টাকা) রফতানি আয় করবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাজু বাদামের সবচেয়ে বড় আমদানিকারক এবং ক্রেতা। এছাড়াও প্রায় সব উন্নত দেশই কাজু বাদাম আমদানি করে। আর ভিয়েতনাম হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কাজু বাদাম উৎপাদনকারী এবং রফতানিকারক দেশ। দেশটি মাত্র ১১ বছর আগে কাজু বাদামের চাষ শুরু করে। এখন পৃথিবীর এক নম্বর রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আর এ সফলতার পেছনে রয়েছে সরকারের সরাসরি সহযোগিতা।

পার্বত্য অঞ্চলেই উন্নতমানের কাজু বাদাম চাষ করা সম্ভব। এখানকার মাটি ও আবহওয়া বাদাম ফলনের জন্য খুবই উপযুক্ত। কারণ কাজু বাদাম একটু উঁচু জায়গায় চাষ করতে হয়। কাজু বাদাম চাষে তেমন শ্রম দিতে হয় না। প্রতি হেক্টর কাজু বাদামের বাগান থেকে ১.৫ টন থেকে ১.৮ টন কাজু বাদাম পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। কাজু বাদাম চাষে বেশ কিছু নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। এসব নিয়ম কানুনের মধ্যে রয়েছে উন্নতজাতের বাদামের চারা লাগানো, আগাছা পরিষ্কার করা, সঠিক সময়ে কাজু বাদাম সংগ্রহ করা, সঠিকভাবে শুকানো এবং সঠিকভাবে কাজু বাদাম সংরক্ষণ করা, গাছকে রোগ বালাই থেকে রক্ষা করা।

আমাদের দেশে একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে কাজু বাদাম চাষ হতে পারে সমৃদ্ধির নতুন দিগন্ত। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, উৎপাদিত পণ্য বিক্রির বাজার তৈরি, লাভজনক ফল-ফসলের ব্যাপক ফলন, প্রাচীন বদ্ধমূল ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে আধুনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে পাহাড়ি এলাকায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও যেখানে পরিবহন ব্যবস্থা তুলনামূলক সহজ হয়েছে, সেখানে বাড়ছে আম, কফি, কাজু বাদামসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসলের আবাদ।

আমদানি নির্ভর এ ফলটি নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে পাহাড়ে। বাধা শুধু সংরক্ষণে সমস্যা আর পোস্ট প্রসেসিং বা উৎপাদনের পর খাওয়ার উপযোগী করে প্রস্তুতকরণে। উৎপাদন ও চাষাবাদ যে হারে বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই পাহাড়ে “কাজু ইন্ডাস্ট্রি” গড়ে তোলা সম্ভব বলে মনে করি।

লেখক: মোঃ সালাহ উদ্দীন, উপ-সহকারী উদ্যান কর্মকতা
হর্টিকালচার সেন্টার, আজিজ নগর, বান্দরবান পার্বত্য জেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *