চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

admin

কক্সবাজারে ট্রলারডুবিতে নিহত ২১ রোহিঙ্গার দাফন সম্পন্ন

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-২৯ ২০:৩৪:০৬ || আপডেট: ২০১৭-০৯-২৯ ২০:৩৪:০৬

বীর কন্ঠ ডেস্ক : কক্সবাজারের উখিয়ার উপকূলীয় ইনানি সৈকতেরপাটুয়ারটেক এলাকায় রোহিঙ্গাবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায় নিহত ২১ জনের লাশ ইনানি কবরস্থানে দাফন হয়েছে। শুক্রবার সকালে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লাশগুলো দাফন সম্পন্ন হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জালিয়াপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী।

 

এদিকে, ট্রলারডুবির ঘটনায় সাগর থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে বলে জীবিত উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন।

 

জানা যায়, নৌকাডুবির ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্থানীয়রা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার করে। তাদের মধ্যে সাতজনের বয়স এক বছরের নিচে; সাত জনের বয়স ১০-১৫ বছর। বাকি তিন জন নারী। পরদিন সকালে সাগর থেকে আরো চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তদের তিনজন শিশু, একজন নারী।

 

ট্রলার থেকে উদ্ধার হওয়া মিয়ানমারের বুচিডং থানার মুইদং এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম (৪৫) এখন উখিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, ‘আমীর সাহেব নামের একজন লোক মালয়েশিয়া থেকে ফোন করে আমাদেরকে নৌকায় উঠে বাংলাদেশে আসার কথা বলেন। তিনি টাকা-পঁয়সা সব নৌকা মালিককে দিয়ে দিয়েছেন বলে জানান।’

 

‘তার কথামতো বুধবার রাত ৮টার দিকে আমরা প্রায় শতাধিক রোহিঙ্গা ওই বোটে করে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। বোটে স্ত্রী, ছেলেমেয়েসহ আমার পরিবারের ১০ জন ছিল। আমি ও আমার দুই মেয়ে জীবিত উদ্ধার হলেও স্ত্রী ফিরোজা খাতুন (৪০) মেয়ে শাহেদা (১৪) মারা যায়। তাদের লাশ পাওয়া গেলেও আরেক মেয়ে ছেনুয়ারা বেগম (৯) এখনো নিখোঁজ। এছাড়া, আমার শ্যালক মো. কাছিম জীবিত উদ্ধার হয়। কিন্তু তার স্ত্রী শাহজান খাতুন (৩৫) এবং তাদের আড়াই বছরে শিশু রুখিয়া ও এক বছরের শিশুটি মারা গেছে।’

 

মিয়ানমারের বুচিদংয়ের মুইদং এলাকার জামাল হোসেনের স্ত্রী রাশেদা বেগমের (২৩) সাথে হাসপাতালে কথা হলে তিনি জানান, সে কোনো রকমে কূলে আসতে পারলেও তার সাত মাসের ছেলে মোহাম্মদ হোসাইন সাগরে নিখোঁজ। এসময় বিবার্তা প্রতিবেদক কয়েকটি শিশুর লাশের ছবি দেখালে তার মধ্যে একটি শিশুকে তিনি তার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন বলে সনাক্ত করেন।

 

রাশেদা বেগমেরই পাশের বেডে শুয়ে আছেন আরেক রোহিঙ্গা তরুণী মিয়ানমারের বুচিদং থানার একই এলাকার আমিনা খাতুন (১৮)। তিনি জানান, তার বাবা লালু মিয়া ও ভাই জাফর আলম বেঁচে আছেন। কিন্তু তার ভাবী জাফর আলমের স্ত্রী তৈয়বা খাতুন, তাদের জমজ দুই সন্তান নুর কামাল ও জুবাইদা খাতুন মারা গেছে।

 

তিনি আরো জানান, তারা জনপ্রতি ২০ হাজার কিয়াত (মিয়ানমারের মুদ্রা) ভাড়া দিয়ে নৌকায় বাংলাদেশে আসছিলেন। কিন্তু নৌকার মাঝি তাদেরকে নির্দিষ্ট স্থানে নামিয়ে না দিয়ে কক্সবাজারের দিকে নিয়ে যায়। এতে তারা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

 

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তাক মিয়া জানান, বৃস্পতিবার বিকেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে একটি ট্রলার উপকূলের দিকে আসতে দেখেন। পরে সেখানে গিয়ে কোনো লোকজন দেখতে না পেয়ে কিছুটা ভয় পান। এরপর কাছেই কয়েকজনকে জীবিত ভাসতে দেখে পাটুয়ারটেক এলাকার আরো কয়েকজনকে জানান। ততক্ষণে ঢেউয়ের সাথে উপকূলে ভেসে আসতে শুরু করে জীবিত ও মৃত লাশের সারি।

 

উদ্ধারকর্মী স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক ও পল্লী চিকিৎসক আব্দুল আজিজ বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সাগর থেকে ২১ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছি। এসময় প্রশাসনের সহযোগিতায় মুমূর্ষু অবস্থায় ১৮ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করি।

 

উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাঈন উদ্দিন বলেন, উদ্ধার হওয়া লাশগুলো স্থানীয়দের সহযোগিতায় উপকূলের ইনানি কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জীবিতদের উখিয়া ও কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *