admin
প্রকাশ: ২০১৭-১০-০৯ ২০:৩৩:১৬ || আপডেট: ২০১৭-১০-০৯ ২০:৩৩:১৬
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের নেপথ্যে দেশটির সেনাবাহিনীকেই মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। এজন্য ডি-ফ্যাক্টো সরকারের সেনাবাহিনীকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করছে তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের বিপন্নতার অবসান ঘটাতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের কয়েকটি নিরাপত্তা চেকপোস্টে আরসার দাবিকৃত হামলার পর জোরদার হয় সেনাবাহিনীর কথিত ক্লিয়ারেন্স অপারেশন।
এরপর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে শুরু করে মৌসুমী বাতাসে। কখনও মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে নিয়ে শূন্যে ছুড়ে দিয়েছে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয়েছে তাদের গলা। মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে কখনও কখনও। নারী ও কন্যা শিশুদের বিরুদ্ধে চালানো হয়েছে অমানুষিক যৌন নিপীড়ন। তবে এইসব তথ্য পেতে রাখাইনে অবাধ প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিশ্বের সোচ্চার মানুষ এই সহিংসতা বন্ধের বার বার দাবি জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি মিয়ানমার।
তাই দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে পশ্চিমা বিশ্ব। এরইমধ্যে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিগত নিধন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনেছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আর অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালই একই অভিযোগ এনেছে। সংস্থাগুলো স্যাটেলাইট ইমেজ আর ভিডিওচিত্রে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অপকর্মের নজির তুলে এনেছে। রয়টার্স তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছে, এমন অবস্থায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকেই রাখাইনের জাতিগত নিধন পরিকল্পনার মূল অনুঘটক হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের পরিকল্পনা নিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। সেই পরিকল্পনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওয়াশিংটন, ইয়াঙ্গুন ও ইউরোপের কয়েকজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কূটনীতিককে উদ্ধৃত করে রয়টার্স বলছে, ‘কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেকগুলো পথের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তাদের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারেই একমত হয়েছেন তারা।’ রয়টার্স জানিয়েছে, এ বিষয়ে এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলস এ জন্য আরও কিছু দিন সময় নিতে পারে।
ইয়াঙ্গুনভিত্তিক কূটনীতিকরা বলছেন, আলোচনার দ্বার খোলা রাখার জন্য প্রথম পর্যায়ে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ প্রতীকী হতে পারে। উদাহরণ হাজির করতে গিয়ে তারা ইঙ্গিত দেন, গত বছরের ব্রাসেলস, বার্লিন ও ভিয়েনা সফর করা সেনাপ্রধানের পরবর্তী ইউরোপ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে। ইয়াঙ্গুনে নিয়োজিত এক জ্যেষ্ঠ ইউরোপিয়ান কূটনীতিক বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো এই সংকট মোকাবেলা নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা এ বিষয়ে একমত যে, সমস্যার মূলে সেনাবাহিনী এবং বিশেষত কমান্ডার ইন চিফ, যেকোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপে যাকে টার্গেট করা দরকার। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক মাস আগেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি আলোচনায় ছিল না। তবে ঘরবাড়ি ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া পশ্চিমা নীতিনির্ধারকদের চাপে ফেলেছে। নিষেধাজ্ঞার পরিকল্পনায় এই চাপ ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছে রয়টার্স।