Alauddin Lohagara
প্রকাশ: ২০১৮-০১-২২ ১৮:২০:২৮ || আপডেট: ২০১৮-০১-২২ ১৮:২০:২৮
মাওলানা মোহাম্মাদ হোসেন :
আমরা সবাই দ্বীনের কথা শুনব এবং সে অনুযায়ী আমল করব। আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘যারা আল্লাহর বাণী শোনে এবং আমল করে আল্লাহর কাছে তারাই জ্ঞানী হিসাবে গণ্য।’ প্রত্যেকটা মানুষ হেদায়াতের প্রতি মুহতাজ। এজন্য আল্লাহ তায়ালা হেদায়াতের জন্য দোয়া করাও আবশ্যক করে দিয়েছেন। নামাজে আমরা পড়ি ‘ইহদ্বিনাচ্ছিরাত্বাল মুস্তাকিম তথা আমাদেরকে সঠিকপথ দান করুন।’ ওই পথে চালাও, যে পথে তোমার নেয়ামতপ্রাপ্তরা চলেছেন। সে পথে নয়, যে পথে তোমার গজবপ্রাপ্তরা চলেছে। তারা কারা? তারা হলো- ইহুদি-নাসারা, মুশরিক-মুলহিদ। তারা কী বলে? তারা বলে পরকালে কী হবে না হবে ওইসব বাজে কথা। মরণের চিন্তা করে লাভ নাই। বরং দুনিয়ায় খাব, নেব, পরব। এটাই জীবন।
এজন্য ভাই, সব সময় হেদায়াতের জন্য দোয়া করতে হবে। আমি যাতে ভ্রান্ত হয়ে না যাই। হেদায়াত পাওয়ার পরেও আমি যেন পথহারা না হই।
মুহতারাম ভাই ও দোস্ত, মানুষের কাছে তার জীবন সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি প্রিয়। এজন্য সে জীবন বাঁচাতে চেষ্টায় থাকে। তাই কেউ তার মাথায় আঘাত করতে চাইলে সে হাত দিয়ে ঠেকায়। কেননা মাথা যদি চুরমার হয়ে যায়, তাহলে তো সে ধ্বংস হয়ে যাবে। এজন্য সে হাত দ্বারা বা অন্য কোনো কিছু দ্বারা হলেও মাথাকে হেফাজত করার চেষ্ট করে। এরকমভাবে মানুষের কাছে সমস্ত কিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান হচ্ছে তার জীবন। জীবনকে বাঁচানোর জন্য সে আপ্রাণ চেষ্টা করে। ইবরাহিম (আ.) নিজ পুত্র ইসমাঈল (আ.)কে বললেন, আল্লাহই তো আমাকে হুকুম দিয়েছেন তোমাকে জবাই করার জন্য। ইসমাঈল (আ.) এ কথা শুনে নারাজ হলেন না। চিৎকার করে উঠলেন না। বরং বললেন, ‘ও আব্বাজান! যদি আল্লাহই আমাকে জবাই করার ব্যাপারে হুকুম দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি আমার ওপর এ হুকুম চালু করেন। আমাকে জবাই করেন। আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’
মুহতারাম বুযুর্গ ও দোস্ত, আল্লাহকে খুশি করার জন্য, জান দেয়ার জন্য তৈরি, মাল দেয়ার জন্য তৈরি, জিন্দেগির সবকিছু দেয়ার জন্য তৈরি ছিলেন তাঁরা। এজন্য আমার-আপনাকেও আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহ যদি নারাজ হয়ে যান, তাহলে আমার-আপনার বাঁচবার জন্যে কোনো রাস্তা নাই। ধ্বংসের ভেতরে আমি-আপনি পড়ে যাব।
হজরত ইবরাহিম (আ.) বিবি-বাচ্চাকে মরুভূমিতে রেখে গেলেন। তারা রাজি হয়ে গেলেন। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছেন না বাঁচিয়েছেন? আল্লাহ তাদের হেফাজত করেছেন। এভাবে যারা আল্লাহর প্রতি রাজি হয়ে যায়, আল্লাহও তাদের প্রতি রাজি হয়ে যান।
মুহতারাম ভাই ও বুযুর্গ, দুনিয়ার কোনো সুখের দাম নাই। দুখেরও দাম নাই। বরং আখেরাতের সুখই আসল সুখ। আখেরাতের দুঃখই আসল দুঃখ। আখেরাতের সে অনন্ত কালের দুঃখ থেকে বাঁচতে হলে এবং আখেরাতের অনন্ত কালের সুখ পেতে হলে আমাদেরকে সর্বপ্রথম ঈমান বানাতে হবে। আল্লাহ সবকিছুর কর্তা। তিনি সবকিছু করেন। সবকিছুর ওপর কুদরত তিনি রাখেন। সবকিছু দেখেন। সবকিছু শোনেন। সবকিছু প্রতিপালন করেন। এসব কথার বিশ্বাস নিজের দিলে পয়দা করতে হবে। তিনি সেই আল্লাহ, যিনি আমাদেরকে তিন অন্ধকারে সৃষ্টি করেছেন। মায়ের পেটের ভিতরে নাভির মাধ্যমে আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। দুনিয়াতে আসার আগেই আল্লাহ জাল্লা শানুহু মায়ের স্তনে দুধের সরবরাহ করেছেন। আবার দুনিয়াতে আসার পরে মায়ের স্তন থেকে আমাদেরকে দুধ পান করিয়েছেন। মায়ের স্তনের দুধ দুনিয়ার কোনো কারখানা বানাতে পারে না।
মুহতারাম দোস্ত, একটা বাচ্চার জন্ম হলো। দেখা যায়, পুরো পরিবার একটা ছোট্ট বাচ্চার জন্য সেবকে পরিণত হয়ে যায়। বাচ্চা কান্নাকাটি করুক তা কেউ পছন্দ করে না। তার কোনো অসুবিধা হোক, তা কেউ চায় না। সকলেই ওই বাচ্চার ভালো চায়। পরিবারে এমন কেউ নাই যে, তার সঙ্গে দুশমনি রাখবে। বাচ্চার প্রতি মানুষের দিলে কে এই মুহাব্বত সৃষ্টি করে দিলেন? আল্লাহই এ মুহাব্বত সৃষ্টি করে দেন।
অথচ, এই মা-বাবা দেখছে, তার অন্যান্য সন্তানরা বড় হয়ে তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে। তাদের কথা শুনছে না। অবাধ্য হয়ে গেছে। এখন এ বাচ্চাকে লালন পালন করছে। মনে বাচ্চার বড় হয়ে অবাধ্য হওয়ার আশঙ্কা থাকলেও এখন বাচ্চাকে সুন্দর, যত্মের সঙ্গে লালন পালন করা ছাড়া কোনো উপায় নাই। এখানে বাচ্চার লালনে কোনো স্বার্থ খোঁজে না আর। বরং নিঃস্বার্থভাবে বাচ্চার লালনে কোনা অবহেলা করে না।
মুহতারাম দোস্ত ও বুযুর্গ, সমস্ত নবীগণ দুনিয়াতে এসে একই বাক্যে একই কথার প্রচার করে গেছেন। ‘হে মানব সকল! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলো আর কামিয়াব হয়ে যাও’। ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সফলতার চাবিকাঠি। তাই তাঁরা এ কথার শিক্ষা দিয়ে গেছেন। ছড়িয়ে গেছেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ এজন্য ভাই, আমাদের জিন্দেগি বানাতে হবে ঈমানের জিন্দেগি। আমাদের জীবন হোক ঈমানের জীবন। যদি কেউ সত্যিকারভাবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর অধিকারী হয়ে যায়, তাহলে পুরো জীবন ইবাদতময় হয়ে যাবে। তার খাওয়া, ঘুম সবকিছু ইবাদাত বলে গণ্য হবে।
এই ঈমান বানানোর এজন্য আমাদেরকে দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করতে হবে। আমরা বেশি বেশি দাওয়াত দেবো। আল্লাহর হুকুম পালন করব। আল্লাহর রাসূলের সুন্নাত পরিপূর্ণভাবে মেনে চলব। আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার নবীর অনুসরণ করো।’ আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন, ‘তোমাদেরক রাসূল যা দেন, তা গ্রহণ করো।’ এজন্য ভাই, রাসূলের সুন্নাতেই কামিয়াবি। নিজের জীবনকে সুন্নাতের রঙ্গে রঙ্গীন করব।বিশ্ব ইজতেমা-২০১৮ সালের দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিনের বাদ ফজর বয়ান
ময়দান থেকে অনুলিখন করেছেন হাসান আল মাহমুদ। সূত্র পরিবর্তন