চট্টগ্রাম, , সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

Alauddin Lohagara

হযরত শাহ ছুফি পেঠান (রহ) এর জীবনী

প্রকাশ: ২০১৮-০৩-১৩ ১৬:৫৮:০৩ || আপডেট: ২০১৮-০৩-১৩ ১৬:৫৮:৫৮

 

মোহাম্মদ ইলিয়াছ:

হযরত শাহ ছুফি পেঠান শাহ (রহ) চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জিন্নাত আলী শাহ এবং মাতার নাম লাতু বিবি। শৈশবে তিনি পিতাকে হারান। মায়ের অফুরন্ত স্নেহে তিনি প্রতিপালিত হন। তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে সঠিক কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও এলাকার প্রবীণ লোকদের মতে, তিনি ১৮৮০ খ্রীষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪১ সালের ২ অক্টোবর (১৭ আশ্বিন, ১৯ রমজান) সোমবার ৬১ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন।

 

শাহ ছুফি পেঠান শাহ (রহ) কৈশোরকাল থেকে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায় নিজ বাড়ির পূর্ব দিকে গভীর জঙ্গলে গভীর ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। দিনের বেলায় বাড়িতে থাকতেন না তিনি। গভীর রাতে বাড়ি ফিরে মায়ের বুকে ঘুমাতেন। তাঁর এই কার্যক্রম মানুষের মনে কৌতূহলের সৃষ্টি করে। ফলে মানুষরা তাঁকে “পেঠান পাগলা” নামে সম্বোধন করতেন। সকলের নিকট তিনি “পেঠান পাগল” নামে বেশ পরিচিত ছিলেন। জনশ্রুতি আছে, শাহ ছুফি পেঠান শাহ (রহ) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় গভীর জঙ্গলের একটি গাব গাছের নিচে বসে আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকতেন। এ অবস্থায় তাঁর চারপাশে বনের পশু বাঘ, হাতি, ভাল্লুক ইত্যাদি হিংস্র পশুরা তাঁকে পাহারা দিতেন। সময়ে সময়ে তিনি বাঘের পিঠে চড়ে গভীর বন-জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন।

 

হযরত শাহ ছুফি পেঠান শাহ (রহ) এর বড় ভাই হামিদ আলী রেঙ্গুনে (বর্তমান মিয়ানমার) থাকতেন। হামিদ আলী রেঙ্গুনের এক মহিলাকে বিবাহ করে বসবাস করতে থাকেন। তাঁর মা ও ছোট ভাই পেঠান শাহ (রহ)-এর সাথে ছিল না কোন যোগাযোগ। এ অবস্থায় তাঁর মা সব সময় বড় পুত্রের জন্য কান্নাকাটি করতেন। পেঠান শাহ (রহ) মায়ের কান্নাকাটি থামানোর চেষ্টা করতেন। একদিন রাগের বশে পেঠান শাহ (রহ) তাঁর মায়ের সামনে একটি বাঘ এনে উপস্থিত করান। মা তখন ভয় পেয়ে যান। মা বুঝতে পারেন তাঁর পুত্র পেঠান শাহ আল্লাহর সান্নিধ্যে স্বীকৃতি লাভে সক্ষম হয়েছেন। একদিন পেঠান শাহ তাঁর মাকে বললেন, রেঙ্গুনে যাব বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। সকালে ভাতের মুচা বেঁধে দিও। ছেলের কথা বিশ্বাস করতে না পারলেও মা ভাতের মুচা বেঁধে দিলেন। পেঠান শাহ (রহ) মায়ের হাত থেকে ভাতের মুচাটি নিয়ে রেঙ্গুনে যাচ্ছি বলে ঘরের ছাদে উঠে অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

 

রেঙ্গুনে গিয়ে বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করে মায়ের দেয়া ভাতের মুচাটি দিলেন এবং বললেন, বাড়িতে গিয়ে মায়ের সাথে দেখা কর। মা তোমার জন্য সব সময় কান্নাকাটি করছেন। এ কথা বলে তিনি আবার অদৃশ্য হয়ে গেলেন।

মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পদুয়ার ঘরের ছাদ থেকে নেমে এসে মাকে বললেন, আমি রেঙ্গুনে তোমার ছেলের সাথে দেখা করেছি। তোমার ছেলে আগামী শুক্রবার আসবে। এ কথা মা বিশ্বাস করতে পারলেন না। বড় ছেলে হামিদ আলী ঠিক সময়ে ফিরে আসায় মা অবাক হয়ে গেলেন। তবে পেঠান শাহ (রহ) এর বহু কারামতের মধ্যে নিম্নের কারামতটি বহুল আলোচিত। তিনি একদিন দুপুরে পুকুরে গোসল করতে যান। পানিতে ডুব দিয়ে তিনি আর উঠে আসেননি। তাঁর পরিবারের সদস্য ও ভক্তরা পুকুরে নেমে অনেকবার অনুসন্ধান করেও তাঁর কোন হদিস পাননি। অবশেষে স্থানীয় একজন ডুবুরী (জলদাশ) কে দিয়ে পুনরায় তাঁর হদিস নেয়া হলো।

ডুবুরির বর্ণনা মতে, পেঠান শাহ (রহ) গভীর পানিতে বসে ধ্যানে মগ্ন রয়েছেন। এ কথা শুনে তাঁর পরিবারের সদস্য ও ভক্তরা আনন্দিত হয়ে ওঠে। ততক্ষণে তিনি সকলের অগোচরে পুকুর থেকে উঠে আসেন।

 

আল্লাহর ওলি হযরত শাহ ছুফি পেঠান (রহ)-এর মৃত্যুর পর বড় ভাই হামিদ আলীর বাম পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর নামে সৃষ্টি হয় মাজার। প্রতিবছর ১ চৈত্র ও ১৭ আশ্বিন তাঁর ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়। দূর-দূরান্ত থেকে হাজার ভক্ত এবং বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ ও শিশুসহ সকল বয়সী মানুষ মাজার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়। মাজার জিয়ারত, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত এবং নানা মরমী গানে মুখরিত হয়ে ওঠে মাজার প্রাঙ্গণ।

 

lলেখক: লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা,

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *