Faruque Khan Executive Editor
প্রকাশ: ২০১৮-০৩-২০ ১৩:০১:৩৪ || আপডেট: ২০১৮-০৩-২০ ১৩:২৭:২৭
নিজস্ব প্রতিবেদক, বীরকন্ঠ:
কথিত ডায়মন্ড প্রবাসী গ্রুপ লিমিটেড নামক একটি সংগঠনের নামধারী চেয়ারম্যান লোহাগাড়ার প্রবাসী আব্বাসের দায়ছাড়া কর্মকান্ডে ক্ষোভে ফুঁসছে লোহাগাড়ার সাধারণ মানুষ । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে জনসাধারণ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে ।
মারুফ খান নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী তার দীর্ঘ পোষ্টে প্রবাসী আব্বাসের কু-কীর্তির বর্ণনা দেন । কয়েক ঘন্টার মধ্যে পোষ্টটি ভাইরাল হয়ে যায় । পোষ্টটির কমেন্ট বক্সসহ শেয়ার করা পোষ্টগুলোতে ফেইসবুক ব্যবহারকারীরা প্রবাসী আব্বাস উদ্দিনকে ধিক্কার জানান ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রবাসী আব্বাস উদ্দিন লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের রশিদার পাড়ার তউমিয়া সওদাগরের পূত্র । সে দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৯৮ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিল । এ কারনে ৯৮ ব্যাচের “সোনালী অতীত” নামের একটি স্মরণিকার সম্পাদনা করে আব্বাস ।
তবে ফেইসবুকে পোষ্টকারী মারুফ খান লিখেছেন, আব্বাস ছাড়া ৯৮ ব্যাচের আর কেউ এ স্মরণিকা সম্পর্কে অবগত নয় । উপরন্তু সম্পাদনা পরিষদে এমন পাঁচ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়েছে যারা এ সম্পর্কে কিছুই জানেনা । এডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মারুফ খান, এস.এম. জহির, আবুল আজম চৌধুরী মিজবাহ উদ্দিন রাজিব এ ব্যাপারে লোহাগাড়া নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম নামক একটি সংবাদ মাধ্যমকে দেয়া বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বিনানুমতিতে স্মরণিকায় তাদের নাম ব্যবহার করেছে আব্বাস উদ্দিন । ভুলেভরা স্মরণিকা প্রকাশ করে ৯৮তম ব্যাচ এবং বিদ্যালয়টি সুনাম ক্ষুন্ন করা হয়েছে বলেও জানান তারা ।
পোষ্টদাতা মারুফ খানের ভাষ্য, তাদের নাম ব্যবহার করে স্মরণিকা প্রকাশের নামে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে আব্বাস । ফেইসবুকে স্মরণিকার নামে টাকা নেওয়ার রশিদও পোষ্ট করেছে বিভিন্নজন । আব্বাসের এ গর্হিত কর্মকান্ডে শামিল হওয়ার জন্য বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফোরকান উল্লাহ চৌধুরীসহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক সামশুল আলমের কাছে প্রশ্ন রাখেন পোষ্টদাতা মারুফ খান ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামশুল আলম বলেন, ‘‘স্মরণিকা প্রকাশের সাথে স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন যোগসাজস নেই । আব্বাস উদ্দিনই সবকিছু জানে । অর্থকড়ির লেনদেন সে করেছে” ।
স্কুল কর্তৃপক্ষ যুক্ত না থাকলে কিভাবে বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্মরণিকা প্রকাশ অনুষ্ঠান হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছ থেকে অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি নিয়েছিল আব্বাস’’ ।
এ ব্যাপারে নুরুল হক নামের এক পুলিশ কর্মকর্তা স্মরণিকার সহ-সম্পাদক আবু সিদ্দিককে মেনশন করে মন্তব্য করেন, ‘‘আব্বাস সাহেব একজন সুযোগ সন্ধানী মানুষ,স্বার্থ হাসিল হয়ে গেলে ছোঁবল মারতে ভুল করবে না,সাবধানে থাকবেন মিঃ আবু সিদ্দিক সাহেব” ।
এমডি শহিদ নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘আমাদের গোলাম বারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের অপমান সজ্জ্য করবোনা।আব্বাস।কাজটা কিন্ত ভাল করিসনি” ।
মোহাম্মদ লোকমান নামের এক ফেইসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, “নিঃসন্দেহে এটি ভাল কাজ নয়। স্মরণিকাটা তিনি কোন ব্যাচের নাম ব্যবহার না করে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বের করতে পারতেন। তাতে কেউ আপত্তি করতনা। স্মরণিকা প্রকাশের মত একটি ভাল কাজ করতে গিয়ে নিজের মানসম্মানকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন তিনি “
হেলাল খান নামের একজন মন্তব্য করেন, “স্মরণিকার নামে প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেছে আব্বাস ।
ফেইসবুকে আব্বাসের সমালোচনার সূত্র ধরে অনুসন্ধান চালালে তার আরো কু-কীর্তির বর্ণনা দেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী । এক প্রবাসি বলেন, ডায়মন্ড প্রবাসী গ্রুপের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে আব্বাস উদ্দিন । তারপর সুযোগ বুঝে বাংলাদেশ চলে আসে । প্রবাসীদের ফান্ডের টাকায় গ্রামে গড়ে তোলে ‘আব্বাস টাওয়ার’ নামের মনোরম অট্টালিকা । প্রবাসে যাতে আর যেতে না হয়, সে উদ্দেশ্যে নিজের ভিসা নিজেই নষ্ট করে ফেলে । ডায়মন্ড প্রবাসী গ্রুপের সাথে সংশ্লিষ্টরা তাদের অর্থ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে ।
এদিকে নিজ ঘরে স্কুল ছাত্রীর শ্লীলতাহানী করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও সংঘটিত করার কথা লোকমুখে প্রকাশ হয়েছে । এলাকাবাসী জানিয়েছে, কিছুদিন আগে স্কুল ছাত্রী শ্লীলতাহানীর দায়ে তাকে মারধর করে এলাকাবাসী । পরে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় ।
সামান্স গ্রুপ লিমিটেড নামক একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের এমডিকে জড়িয়ে মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ছড়ানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে । কোম্পানীটির এমডি আনোয়ার হোসাইন মিছবাহ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, আব্বাস ফেইসকুকে মিথ্যা তথ্য সম্বলিত পোষ্ট করে তার মানহানী করেছে । এ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি ।
এ ব্যাপারে আব্বাসের বক্তব্য নিতে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি ।