চট্টগ্রাম, , রোববার, ১৯ মে ২০২৪

admin

ক্ষমার দশকে খুঁজে নিই সৌভাগ্যের রাত

প্রকাশ: ২০১৮-০৬-০৭ ০৩:৫৬:৪২ || আপডেট: ২০১৮-০৬-০৭ ০৩:৫৭:০১

 

 

হাফেজ মুফতি তানজিল আমির: 

শুরু হয়ে গেল নাজাতের দশক। দেখতে দেখতে চোখের পলকেই যেন বিশটি দিন পেরিয়ে গেল। রমজানের বাকি সময়টুকু আমাদের হিসাব করে কাটাতে হবে। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ধ্বংস হোক সেই ব্যক্তি যে রমজান পেল, অথচ নিজের গুনাহ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারল না। প্রিয় নবীজির এ বদদোয়ার ভাগিদার যেন না হতে হয়, সে ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে।

রমজানের এ শেষ দশ দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের অফুরন্ত রহমত ও ক্ষমার ঘোষণা রয়েছে এ সময়টিতে। রাখা হয়েছে হাজার বছরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদর’। আল্লাহতায়ালা চান, তাঁর প্রিয় বান্দা এ দশ দিন পূর্ণভাবে নিজেকে সঁপে দেবে প্রভুর প্রেমে। লাইলাতুল কদরকে এ কারণেই লুকিয়ে রাখা হয়েছে, যেন বান্দা পবিত্র এ রজনীর তালাশে কাটিয়ে দেয় পুরো দশটি দিন। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বলেছেন, হে বনি আদম, তোমাকে আমি সর্বশ্রেষ্ঠ বানিয়েছি। তুমি কি আমার জন্য দশটি দিন সময় করতে পারবে না?

রমজানের শেষ সময়ে আল্লাহর প্রেমসাগরে কিভাবে ডুব দিতে হয়, রাসুল (সা.) তা আমাদের শিখিয়েছেন এতেকাফের মাধ্যমে। পারিভাষিক অর্থে এতেকাফ হল আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিয়তের সঙ্গে মসজিদে অবস্থান করা। ইমাম যুহরি (রহ.) বলেন, রাসুল (সা.) এমন অনেক আমল করতেন যেগুলো তিনি মাঝে মধ্যে ছেড়েও দিতেন। কিন্তু মদিনায় আসার পর থেকে ওফাত পর্যন্ত একবারের জন্যও এতেকাফ ছাড়েননি। এর মর্যাদা সম্পর্কে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন- রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ দুই হজ ও দুই ওমরাহর সমান। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) এতেকাফকারী সম্পর্কে বলেছেন, সে গুনাহগুলো থেকে বেঁচে থাকে এবং তার জন্য নেকিগুলো লেখা হয় ওই ব্যক্তির মতো যে বাইরে থেকে যাবতীয় নেক কাজ করে। (ইবনে মাজাহ)। অর্থাৎ মুতাকিফ যদি অন্য কোনো আমল নাও করেন, তবুও তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হতে থাকে। কারণ সে তো নিজেকে আল্লাহর জন্য উৎসর্গিত করেছে।

দশ দিনের সুন্নত এতেকাফ যুদ সম্ভব না হয়, সুযোগ রয়েছে মুস্তাহাব এতেকাফের। শুধু নিয়ত করে যতটুকু সময় মসজিদে থাকব, তা-ই পরিণত হবে মুস্তাহাব এতেকাফে। এতেকাফ একজন মানুষের ভেতর জগৎকে পাল্টে দিয়ে তাকে নুরানি মানুষে পরিণত করে। মুমিনের এতেকাফ রমজানে সীমাবদ্ধ নয়। জীবনভর এতেকাফের প্রশিক্ষণ নিতে হয় রমজানে। পরিমিত কথা, পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, পরিমিত জীবনযাপন সবকিছু যেন মুমিনের স্বভাবে পরিণত হয়, তার চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ চলে রমজানে। এ প্রশিক্ষণে মানবাত্মা হয়ে ওঠে খোদার প্রিয়। তখন মুমিনের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে প্রতিধ্বনিত হয়- নিশ্চয় আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মরণ সবই আল্লাহর জন্য।

এতেকাফের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে গায়রুল্লাহর মোহনীয় বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর সঙ্গে পরিপূর্ণ ও গভীর প্রেমময় সম্পর্ক স্থাপন করা। রমজানের পবিত্র মাসে আল্লাহর ঘরে নির্জন বাস ও এতেকাফের মাধ্যমে হৃদয় ও আত্মার এমন অভাবনীয় উৎকর্ষ সাধিত হয় যে, মানুষের হৃদয়ে তখন আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কিছু স্থান পায় না। এমন বান্দাদের আল্লাহ সুসংবাদ দিয়ে বলবেন- হে প্রশান্ত চিত্ত বান্দা ফিরে আস আপন রবের দিকে তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে, তিনিও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। অতঃপর শামিল হয়ে যাও আমার বান্দাদের মধ্যে এবং প্রবেশ করো আমার জান্নাতে। (সুরা ফাজর-২৭, ২৮ ও ২৯)।

আল্লাহর দুয়ার আজ থেকে অবারিত, প্রশস্ত, ক্ষমার জন্য উন্মুক্ত। আসুন নিজের দুয়ার ফেলে রেখে প্রভুর দুয়ারে, বসে যাই ইস্তেগফার, তাহাজ্জুদ, তাসবিহ, সদাকাহ, তেলাওয়াত আর প্রার্থনায়। মিলে যেতে পারে ক্ষমা, সৌভাগ্যের ‘লাইলাতুল কদর’।

লেখক : নির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

ই-মেইল : tanjil.amir@yahoo.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *