চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

যেমন দেশের বিপুল জনসমর্থিত নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে গণতন্ত্রকেই বন্দি করে রাখা : রিজভী

প্রকাশ: ২০১৮-০৯-০৬ ১৪:৫১:২৫ || আপডেট: ২০১৮-০৯-০৬ ১৪:৫১:২৫

 

 

বীর কন্ঠ ডেস্ক :

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ আদালত বকশিবাজার আলিয়া মাদরাসার স্থলে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরোনো কারাগারে আদালত বসানোর কড়া সমালোচনা করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার প্রধানের অদম্য প্রতিহিংসার দ্রুত চরিতার্থ করার জন্য আদালত স্থানান্তরের এই অসাংবিধানিক ন্যাক্কারজনক কাজটি করা হয়েছে। সরকার আইনকানুনের কোনো ধার ধারছে না। আদালতকে বন্দি করা হয়েছে কারাগারে। যেমন দেশের বিপুল জনসমর্থিত নেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে গণতন্ত্রকেই বন্দি করে রাখা।

 

বৃহস্পতিবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এসব বলেন।

 

লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য দুটি। একের পর এক মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে সাজার স্তুপ বৃদ্ধিকরা আরেকটি উদ্দেশ্য দিনের পর দিন আটকে রেখে শারীরিক অসুস্থতার আরো অবনতি ঘটিয়ে বেগম জিয়াকে বিপর্যস্ত করা। বৃধবারও আপনারা দেখেছেন হুইল চেয়ারে করে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে। হাত-পা নড়াতে তার অসুবিধা হচ্ছিল। তিনি এতোটাই অসুস্থ ছিলেন যে, তিনি রীতিমতো কাঁপছিলেন এবং চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারছিলেন না। বার বার দাবি করা সত্যেও তার সু-চিকিৎসায় সরকার অবহেলা করেছে।

 

তিনি বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শনুযায়ী তার যথাযথ স্বাস্থ পরীক্ষা করানো হয়নি। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে তার সু-চিকিৎসার দাবি বারবার উপেক্ষা করা হয়েছে। গণমাধ্যমের কর্মীরা বুধবার স্বচক্ষে দেখলেন এবং তাদের মাধ্যমে জাতি আবারো জানল বেগম খালেদা জিয়া কতটা গুরুতর অসুস্থ। তাকে পরিকল্পিতভাবে কারাগারে রেখে নির্যাতন করছেন সরকার প্রধান। পরিত্যক্ত কারাগারে তাকে যে কক্ষটি দেয়া হয়েছে তা বাস করার জন্য অনুপযুক্ত। মেরামতহীন অপরিচ্ছন্ন জ্বরাজীর্ণ কক্ষটি দেয়া হয়েছে সরকারের ইচ্ছায়। বেগম জিয়া যাতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিজ কক্ষে নির্বিঘ্নে বাস করতে না পারেন, তিনি যেন সারাক্ষণ কষ্ট পান সে জন্যই এই ব্যবস্থা।

 

রিজভী বলেন, সামগ্রিকভাবে আইন ও বিচারিক কার্যক্রমেই দেখা যায় বেগম জিয়ার ওপর জুলুমের প্রকাশ। দেশনেত্রী অসুস্থ থাকলেও জোর করে হলেও আদালতে নিয়ে আসতে হবে-এই ধরনের এক আক্রোশের মনোবৃত্তি ফুটে ওঠে আইনী কার্যক্রমে। গতকালও বেগম জিয়াকে জোর করে আদালতে হাজির করা হয়েছে। অন্ধকার কারাগারে আদালত গঠন দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করার শামিল। বেগম জিয়ার ওপর সরকারের এই বেআইনি অসদাচরনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেগম জিয়ার ওপর যে অবিচার চলছে তা মানবধিকার লঙ্ঘন। এটি সরকারের বেআইনি হিংস্র আচরণ। এর জবাব ক্ষমতাসীনদের জনগণের কাছে দিতেই হবে। যে মামলায় বেগম জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়েছিল, সেই মামলায় তিনি জামিনে আছেন। অর্থাৎ বেগম জিয়াকে এখন বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশের সিনিয়র নাগরিক তার প্রতি সরকারের এমন নিষ্ঠুর আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করছি।

 

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অত্যাচারী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। নিষ্ঠুর বল প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের প্রতিবাদ দমন করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে বেআইনিভাবে ব্যবহার করছে। রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, ও গণতান্ত্রিক রীতি নীতিকে ধ্বংস করে গণতন্ত্রের মৃতদেহের ওপর এক ব্যাক্তির শাসন কায়েম করা হয়েছে। সরকার এখনো আসন্ন নির্বাচন নিয়ে সমাধানহীন পরিস্থিতী তৈরি করেছে। হুমকিবাজ আওয়ামী মন্ত্রীরা আবারো একতরফা নির্বাচন করার জন্য দেশব্যাপী জাল ফেলেছে। বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী চেতনায় জারিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গড়ে তোলা হয়েছে। শেখ হাসিনা আসন্ন নির্বাচন ‘ম্যানেজ’ করার জন্য সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন। শেখ হাসিনার অধীনে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেই নির্বাচনগুলো ‘জালিয়াতি নির্বাচন’ হিসেবেই বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা অবাধ ও সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে চাননা, কারণ এই ধরনের নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার লজ্জাজনক পরাজয় হবে। তাই একতরফা ভোটারশূণ্য নির্বাচন করার জন্য শেখ হাসিনা সারাদেশে বিরোধীদলশূণ্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া, পরিবার ছাড়া পলাতক জীবন বেছে নিতে হয়েছে। প্রতিদিন রাতেই পোশাকধারী ও সাদা পোশাকধারীরা বিএনপি নেতাদের বাসা ও বাড়িতে হানা দিচ্ছে, তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের সাথে করা হচ্ছে দূর্ব্যবহার, গ্রেফতার করছে এবং জলোচ্ছাসের মতো মামলা দিয়ে সারাদেশকে ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকারের বাহিনীগুলো বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জান্তব হিংস্রতায় ঝাঁপিয়ে পড়ছে। দপন-পীড়নের এতো তীব্র মাত্রার পরও জাতীয়তাবাদী শক্তির ক্ষয় হয়নি। জনগণের নীরব ক্ষোভ প্রতিদিন বেড়েই চলছে। সরকার বিরোধী দলের ওপর যত জুলুম করছে ততই সরকারের পতন ঘনিয়ে আসছে। অশান্তির আগুনে ভিতরে-ভিতরে মানুষ দগ্ধ হচ্ছে। জনগণের সাথে প্রতারণার মাশুল সরকারকে দিতেই হবে।

 

‘গ্রেফতার, মামলা ও বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি’ রিজভী অভিযোগ করে বলেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুর বাসায় বারবার পুলিশ তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তল্লাশি চালিয়েছে। এছাড়া সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলামের সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে বারবার পুলিশ হানা দিচ্ছে এবং পরিবারের লোকজনদের কাছে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট ও তার সন্ধান চাচ্ছে।

রিজভী বলেন, ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য মতে সারাদেশে গ্রেফতার হয়েছে ১৫ শতাধিক এবং মামলা হয়েছে ১২ শতাধিক। নাম উল্লেখ করে আসামি সংখ্যা ১১ হাজার এবং অজ্ঞাতনামা আসামি সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার।

নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, মো. মুনির হোসেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি মাসুদ অরুন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *