চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪

মাটির কাজ শেষ, প্রতিমার গায়ে পড়েছে তুলির আঁচড়

প্রকাশ: ২০১৮-১০-০৯ ২৩:২২:০২ || আপডেট: ২০১৮-১০-০৯ ২৩:২২:০২

 

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি :

চারদিকে চলছে সাজ সজ্জার কাজ। কয়েক দিন বাদেই দূর্গাপূজা। প্রতিমার রঙের ও সাজসজ্জার কাজ করছে মৃৎশিল্পী অমিত সাহা। তাঁর দুই সহকারি অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও ল²ী প্রতিমার গায়েও রঙের কাজ করছেন।

রঙের কাজ শেষ করে প্রতিমাগুলোর গায়ে কাপড় ও গয়না পড়ানো হয়। বাঁশ-কাঠ আর কাঁদা মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমাগুলো রঙ দিয়ে সাজানোর দৃশ্য দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সনাতন ধর্মের লোকজন।

সোমবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১০ টার দিকে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের মজুমদারখীল এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়। একই ইউনিয়নে স্থানীয় সামাজিক সংগঠন দক্ষিণ সাহা পাড়া “ছাত্র সমাজ” এর উদ্যোগে দূর্গাপূজা উপলক্ষে মন্দির ও তার আশেপাশে সাজসজ্জার কাজ করছে তরুনরা।

এই মন্ডপের মতো রাঙ্গুনিয়ার প্রতিটি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিমার শেষ মুহুর্তের কাজ চলছে। কারিগরদের দম ফেলার ফুসরত নেই।

জানতে চাইলে ছাত্র সমাজ’র সভাপতি রাজেন সাহা বলেন,“ ৫০ বছর ধরে ছাত্র সমাজের আয়োজনে প্রতি বছর এখানে দূর্গাপূজার আয়োজন হয়। আমার বাপ-দাদারা এখানে পূজার আয়োজন করে আসছে আমরাও করছি। প্রতি বছর বর্তমান প্রেক্ষাপট, সং®কৃতিসহ বিভিন্ন থিমে দূর্গা মন্ডপকে সাজানো হয়। এবারের থিম নবরূপে নবদূর্গা ও রক্তবীজ বধ”।

থিমের বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ মা নবরূপ শোকহারিণী, জন্মদায়িনী, মানপ্রদায়িনী, শান্তিদায়িনী, শ্রীদায়িনী, প্রাণরূপিনী এই সব রূপেই আমাদের মাঝে বিরাজমান। এই রূপেই নব মহিমাময়ী মা পূজিত হবার জন্য আমাদের মন্ডপে অধিষ্ঠান হবেন। বিভিন্ন রূপে ৯ টি দূর্গা প্রতিমা পুকুরের মাঝখানে বসানো হবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রের মাধ্যমে মা দূর্গা অসুরের রক্ত বীজ বধ হওয়ার দৃশ্যও দেখানে হবে এখানে। ”

ফরিদপুরের মৃৎশিল্পী প্রতিমার কাজ করছেন আনুসঙ্গিক সাজসজ্জার কাজ করছেন সংগঠনের কর্মীরা।

৩৬ বছর ধরে প্রতিমার কাজ করছেন ফরিদপুরের মৃৎশিল্পী গণেশ পাল(৫৩) । কথা হয় তাঁর সাথে তিনি বলেন, প্রতি বছর তিনি এই মন্ডপে প্রতিমার কাজ করেন। ২৮ বছর ধরে প্রতিবছর পূজার আগে এসে এখানে কাজ করেন। এক মাস আগে থেকে তিনি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেছেন।

একই ইউনিয়নে মজুমদারখীল সার্বজনীন দূর্গা মন্ডপে প্রতিমার মাটির কাজ শেষ করে রঙের ও সাজসজ্জার কাজ করছে মৃৎশিল্পী অমিত সাহা ।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, এক সেটে দুর্গার সঙ্গে থাকে অসুর, সিংহ, মহিষ, গণেশ, সরস্বতী, কার্তিক ও ল²ী প্রতিমা। আগে একটা প্রতিমা সেট তৈরি করতে খরচ হতো ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু এখন বাঁশ, কাঠসহ প্রতিমা তৈরির উপকরণের দাম অনেক বেশি। তাই প্রতি সেট প্রতিমা তৈরিতে খরচ হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।

মজুমদারখীল দূর্গা মন্ডপ পূজা পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও ইউপি সদস্য প্রাঞ্জল সাহা বলেন, “ পূজা উপলক্ষে পুলিশ-আনসারের পাশাপাশি নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। পূজা উপলক্ষে এখানে সাংষ্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজনও করা হবে। ”

বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক নির্বানীতোষ সাহা ভাষ্কর বলেন, “গত বছরের মতো এবারও উপজেলার ১৫৩ টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৫ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু হবে। ১৯ অক্টোবর দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এই উৎসব। এবার দেবীর আগমন নৌকায় ও প্রস্থান ঘোটকে(ঘোড়ায়)।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাঙ্গুনিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক দিলীপ দাশ বলেন, দূর্গা উৎসবকে ঘিরে পূজা পরিষদ বিভিন্ন কর্মসুচীন গ্রহন করেছে। বিভিন্ন মন্দিরে গরীব ও দুঃস্থদের বস্ত্র বিতরণ করা হবে। স্ব স্ব পূজা মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তিনি আহবান জানান।

থানার ওসি ইমতিয়াজ মো. আহসানুল কাদের ভুঞা বলেন, গুরুত্বপূর্ন ও অতি গুরুত্বপূর্ন পূজা মন্ডপে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনের পাশাপাশি বিশেষ নজরদারি রাখা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, দূর্গা উৎসবকে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছি। সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন নির্বিঘ্নে যাতে পূজা উদযাপন করতে পারে উপজেলা প্রশাসন সজাগ থাকবে। ”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *