চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪

আলাউদ্দিন ডেস্ক কন্ট্রিবিউটর

চট্টগ্রামে ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে: অতঃপর প্রথম বিয়ের কথা গোপন রাখায় দ্বিতীয় স্ত্রীর হাতে খুন

প্রকাশ: ২০১৯-০২-২০ ১৮:০৪:২০ || আপডেট: ২০১৯-০২-২০ ১৮:০৪:২০

বীর কন্ঠ ডেস্ক :

ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে বগুড়ার আশা আক্তারের সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মো. শামীমের প্রেম, তারপর বিয়ে। আর বিয়ের চার মাসের মাথায় গলাকেটে শামীমকে খুন করেন আশা আক্তার।

প্রথম সংসারের স্ত্রী-সন্তানের কথা গোপন রেখে বগুড়ার মেয়ে আশা আক্তারকে বিয়ে করেন চট্টগ্রামের শামীম। বিয়ের পর আশা বুঝতে পারে, সে প্রতারণার শিকার হয়েছে।

প্রতারিত হওয়ার ক্ষোভ থেকে ‘ভালোবাসার’ মানুষটিকে ঘুমন্ত অবস্থায় মুখের পর কম্বল চাপা দিয়ে গলা কেটে নৃশংসভাবে খুন করে আশা।

গলা কাটার পর স্বামীকে দেখে নিজেই আঁতকে ওঠে। কিন্তু এরপর আবারও মুখের ওপর বিছানার চাদর দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। পরে পালিয়ে যায় চট্টগ্রাম থেকে বগুড়ায়।

নগরীর পাহাড়তলী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর টানা চারদিন ধরে তদন্ত চালিয়ে নিহতের পরিচয় নিশ্চিতের পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে আশাকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যদিয়ে সূত্রবিহীন চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার রহস্যও উন্মোচন হয়েছে।

গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে নগরীর পাহাড়তলী থানার আব্দুল আলী নগরের নেছারিয়া মাদ্রাসার সামনে প্রয়াত ইউসুফ মিয়ার কলোনির একটি বাসা থেকে মো. শামীমের (৩০) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পেশায় বাবুর্চি শামীমের বাড়ি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায়। থাকতেন চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার ঢেবারপাড় এলাকায় মা, এক বোন এবং স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে।

পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘ভাড়া নেওয়া বাসাটিতে সকালে স্ত্রীকে নিয়ে উঠেছিলেন শামীম। বাড়ির মালিকের কাছে নাম-ঠিকানা কিছুই ছিল না। সে জন্য লাশ উদ্ধারের সময় আমরা নাম-ঠিকানা কিছুই পাইনি। তবে আমরা তথ্য পাই, বাড়ির মালিকের মেয়ে তানিয়াকে বাসায় ওঠার আগে নিহত ব্যক্তি কয়েকবার ফোন করেছিলেন। কিন্তু পরে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। সেই ফোন কলের সূত্র ধরে আমরা অনুসন্ধান চালিয়ে শামীমের বাসার ঠিকানা পাই এবং স্বজনদের খুঁজে বের করি। শামীমের মা ও প্রথম স্ত্রী তার লাশ শনাক্ত করেন।’

শামীম ফেসবুকে এক মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলত প্রথম স্ত্রীর দেওয়া এমন তথ্যের ভিত্তিতে অনুসন্ধান চালিয়ে আশা আক্তারের বিষয়ে জানা যায় এবং মঙ্গলবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) তাকে বগুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন ওসি।

আশা আক্তার (২৩) বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া নতুনপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে। বগুড়া শহরে একটি বায়িং হাউজে চাকরির পাশাপাশি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট থেকে আশা এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী বলেও জানিয়েছেন ওসি।

গ্রেফতারের পর আশাকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাহাড়তলী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়া জানান, একবছর আগে ফেসবুকে আশা আক্তারের সঙ্গে পরিচয় হয় শামীমের। পরিচয়ের সময় শামীম তার বাবুর্চি পেশা এবং আগের সংসারের তথ্য গোপন করে। একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

পরে বগুড়ায় গিয়ে আশা’র সঙ্গে দেখা করেন শামীম। এক পর্যায়ে শামীমের সঙ্গে আশার বিয়ে হয়।

এসআই অর্ণব জানান, চারমাস আগে আশা’র পরিবারের সম্মতিতে দু’জনের বিয়ে হয়। বগুড়া শহরে একটি বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। তবে শামীমের মা ও প্রথম স্ত্রী কেউই বিষয়টি জানত না। বিয়ের পরপরই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানের কথা জেনে যায় আশা। এরপরও স্বামীকে নিজের করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় আশা এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে শামীমকে একটি টমটম গাড়ি (ইজিবাইক) কিনে দেয়। এর আগেও ৩০ হাজার টাকা শামীমকে দেয়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *