চট্টগ্রাম, , সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

আবদুল হাকিম রানা পটিয়া প্রতিনিধি

পটিয়ায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মানববন্ধন

প্রকাশ: ২০১৯-০৩-০৬ ২৩:২৭:৫৯ || আপডেট: ২০১৯-০৩-০৬ ২৩:২৭:৫৯

আবদুল হাকিম রানা, বীর কন্ঠ : সবাই মিলে ভাবো, নতুন কিছু করো; নারী-পুরুষ সমতার নতুন বিশ্ব গড়ো” এই স্লোগানে পটিয়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)’র সহায়তায় পটিয়া উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর এবং সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) পটিয়ার যৌথ উদ্যোগে পটিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মুখস্থ চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কে ০৬ মার্চ বেলা এগারটায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসন গৃহিত তিন দিনের কর্মসূচির প্রথম দিনে নারী প্রতি সহিংসতা বন্ধ এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান এর সভাপতিত্বে ও টিআইবি’র এরিয়া ম্যানেজার মো: জসিম উদ্দিন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন সহকারি কমিশনার (ভ‚মি) মো: সাব্বির রাহমান সানি, সনাক সহ-সভাপতি শীলা দাশ, ইয়েস দলনেতা দীপ্ত বড়ুয়া প্রমুখ। মানববন্ধনে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারিবৃন্দ, সনাকের ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস সদস্যবৃন্দ এবং মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আওতাধীন বিভিন্ন সমিতির নারী সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল হাসান বলেন, বিশে^র অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন অসম্ভব। নারী ও শিশুর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সাধনে বাংলাদেশ সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের নিশ্চিয়তা প্রদানে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু সুনিদিষ্ট আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। তাই নারী দিবসের মাধ্যমে সর্বস্তরের নারীদের তাদের অধিকার আদায়ে সচেতন হতে হবে।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারিরা নারী অধিকার বিষয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। উল্লেখযোগ্য স্লোগানগুলো হলো: কিশোরী, তরুণী, বালিকা মিলাও হাত, গড়ে তোল সমৃদ্ধ ভবিষ্যত, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে সমঅধিকার নারীর ক্ষমতায়নের পূর্ব শর্ত, নারীর ক্ষমতায়ন রুখবে বৈষম্য, রুখবে দুর্নীতি, কন্যা শিশু ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে দাঁড়াই নারী-পুরুষ সকলে, সমতার জন্য চাই সম্পদে সম-অধিকার, নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক আইন, সুশাসনকে বাধাগ্রস্থ করে ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে প্রায় দু’শতাধিক নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে টিআইবি’র পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৯ উপলক্ষে ১৫টি দাবি তুলে ধরা হয়। উলেøখযোগ্য দাবীগুলো হলো, নারী ও শিশুদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে রাজনৈতিক সদিচ্ছার বর্হিপ্রকাশ ঘটিয়ে একটি সুনির্দিষ্ট সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে; নির্যাতিত নারী ও কন্যাশিশুদের ন্যায়বিচারসহ সকল ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে নারীর অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আইনসমূহের কার্যকর প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, পেশাগত উৎকর্ষ ও কার্যকরতা নিশ্চিত করতে হবে; সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’ এর বিশেষ বিধান (১৯ নং ধারা) বাতিল করে আইনটির সংস্কার করতে হবে; জাতীয় সংসদে নারী সদস্যের প্রতিনিধিত্বের অনুপাতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নারীর প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে; ‘গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ (সংশোধিত) আইন ২০০৯’ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোকে নারী প্রার্থী মনোনয়ন বৃদ্ধি করতে হবে; সকল রাজনৈতিক দলের কমিটিতে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তিসহ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ করতে হবে; নারীর দারিদ্র্য বিমোচন এবং কর্মক্ষেত্রসহ সকল পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে নারীর নিরাপত্তা বিধান, আর্থ-সামাজিক কর্মকান্ডে নারীর পূর্ণ ও সম-অংশগ্রহণ, এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গৃহীত কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করতে হবে; সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত করে প্রকৃত মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নারীর জন্য সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে; নারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অনুসন্ধান, তদন্ত ও মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সংবেদনশীল হতে হবে এবং আরও নারী-বান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে; পাঠ্যপুস্তকেও জেন্ডার সংবেদনশীল বিষয়সমূহ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি ও স্থানীয় সরকার বিষয়ে যেসকল প্রতিষ্ঠানে নারীরা সেবা নিতে যান সেসব প্রতিষ্ঠানের সেবা, বিশেষ করে নারীদের জন্য প্রদত্ত সেবা সম্পর্কে জেন্ডার সংবেদনশীল পদ্ধতিতে তথ্য প্রচার করতে হবে, এবং নারীদের অধিকার ও তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে; বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের জন্য প্রদত্ত বিশেষ সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নাগরিক সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তদারকি বাড়াতে হবে; এবং সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযোগকারীর পরিচয় গোপন রাখার নিশ্চয়তাসহ অভিযোগ করার একটি নারী-বান্ধব ব্যবস্থা থাকতে হবে। অভিযোগের ভিত্তিতে দুর্নীতিসহ সকল প্রকার আইনের লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, যাতে আইনের শাসনের সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *