এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-০৫-২৬ ০১:০১:২৫ || আপডেট: ২০১৯-০৫-২৬ ০১:০১:২৫
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : ঈদকে সামনে রেখে এখন সেলাই মেশিনের শব্দে মুখর মিরসরাইয়ের টেইলার্স দোকানগুলো। এখন কারিগরদের দম ফেলানোর ফুসরত নেই। দিন-রাত কাজ করছেন তাঁরা। বাহারি নকশার কাপড় বানাতে সেখানে ভিড় করছেন অনেকেই। অবশ্য ব্যস্ততা শুরু হয়েছে রোজা আসার আগে থেকেই। এজন্য সাধারণ দিনের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিকও পাচ্ছেন তারা। সামনে ঈদ। তাই রুজি-রোজগারের একমাত্র সম্বলটি যেন এক মুহুর্তের জন্যও বন্ধ রাখার সুযোগ নেই। নতুন করে অর্ডার নেওয়া প্রায় বন্ধ, চলছে পোশাক সরবরাহের কাজ। চাহিদা মতো নতুন পোশাক পেয়ে খুশি ক্রেতারাও। বাড়ানো হয়েছে পোশাক তৈরির মজুরি- এ নিয়ে তাদের মধ্যে কিছুটা অসন্তুষ্টি থাকলেও পছন্দ মতো পোশাক বানাতে তারা ছুটে যাচ্ছেন দর্জি পল্লীতে।
টেইলার্স মালিকরা বলছেন, পছন্দের পোশাকের জন্য রেডিমেড থ্রি-পিস ও থানকাপড় কিনে ক্রেতারা পাড়ি জমাচ্ছেন দর্জি পাড়ায়। ক্রেতাদের পছন্দ মতো পোশাক বানাতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দোকান খোলা রেখে কাজ করছেন দর্জিরাও। শবে বরাতের আগে থেকে পোশাক কারিগরদের ছুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার কোনও কোনও টেইলার্স কাজের চাপ সামলাতে মৌসুমী কারিগর এনেছেন বিভিন্ন এলাকা থেকে। জানা গেছে, আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন ডিজাইনের পোশাক তৈরীতে মেতে উঠেছেন তারা। কাজের চাপে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন বাজারের দর্জিরা। ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার দর্জি দোকানের কারিগররা।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন বাজারে অবস্থিত টেইলার্সের দোকানগুলোতে থ্রি-পিস, পাঞ্জাবি, ফতওয়া, বøক, বাটিক এর সঙ্গে পুঁতি-চুমকি, লেইস, পাথর, খুন্দন, সুঁচি কারুকাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে কারিগরেরা। সবাই চাইছে আগে আগে মনের মত ডিজাইনের নতুন কাপড়টি সেলাই করে নিতে। উপজেলার বারইয়ারহাটের ফেমাস টেইলার্স, শ্রবন্তী টেইলার্স, সেঞ্চুরী টেইলার্স, ষ্টার টেইলার্স, সবুজ টেইলার্স, আল-আমিন টেইলার্স, খাজা টেইলার্স, জাহাঙ্গীর টেইলার্স, মিরসরাই সদরের মাষ্টার টেইলার্স, নিউ ফ্যাশন টেইলার্স, পাঞ্জাব টেইলার্স, নিজামপুরের ফেমাস টেইলার্স, ড্রেসকিং টেইলার্স, জনতা টেইলার্সে প্রচন্ড ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে বারইয়ারহাট ফেমাস টেইলার্সে। এখানে মিরসরাই উপজেলা ছাড়াও ছাগলনাইয়া, সোনাগাজী, ফটিকছড়ি, হেঁয়াকো সহ বিভিন্ন এলাকার লোকজন কাপড় সেলাই করে থাকেন। বারইয়ারহাট ফেমাস টেইলার্সের স্বত্তাধিকারী মোঃ শেখ ফরিদ জানান, অন্য বছরের তুলনায় এবারও প্রচুর কাজের অর্ডার রয়েছে। এবার পাঞ্জাবীর অর্ডার বেশি।
ঈদকে সামনে রেখে সেলাইয়ের জন্য নিত্য নতুন ডিজাইনের প্রায় ৪০ লাখ টাকার বিভিন্ন পোষাকের কাপড় তুলেছেন তিনি। প্রায় ৪০ জন কারিগর রাতদিন কাজ করছে। করেরহাটের গ্রাহক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি তৈরি করা শার্ট-প্যান্ট পরেন। প্রতি বছর তিন থেকে চার সেট পোশাক বানাতে হয় তার। ব্যতিক্রম হয়নি এবারের ঈদেও। এবার ভাগিনা ভাতিজাদের জন্যও পাঞ্জাবী সেলাই করতে দিয়েছেন। তবে শহরের তুলনায় এখানে কাপড় ও সেলাইয়ের মজুরী বেশি নেয়া হচ্ছে বলে দাবী করেন তিনি। পাঞ্জাবী সেলাইয়ের জন্য পুরো উপজেলার বিখ্যাত সদরের পাঞ্জাব টেইলার্স। এখানে শুধু মাত্র পাঞ্জাবী-পায়জামা সেলায় করা হয়। পাঞ্জাব টেইলার্সের স্বত্ত¡াধিকারী মোঃ হেলাল বলেন, প্রতি বছরের মত এবারো ভালো কাজ পেয়েছি। কারিগররা দিন-রাত পরিশ্রম করছে। আশা করছি ঈদের আগে সব ডেলিভারি দিতে পারবো।
কাটিং মাষ্টার মোঃ কামরুল হাসান বলেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা আধুনিক ফ্যাশনের পোশাক তৈরি করছেন। এ কারণে তাদের দোকানে প্রচুর ভিড় হচ্ছে। রমযানের আগেই কাজের চাপ শুরু হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় এবার একটু বেশি মনে হচ্ছে।