চট্টগ্রাম, , বুধবার, ২২ মে ২০২৪

মিজবাউল হক চকরিয়া অফিস

চকরিয়ায় মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে বিএনপি নেতার বাড়ি নির্মাণ

প্রকাশ: ২০১৯-০৬-২৪ ১৬:১৯:৩৯ || আপডেট: ২০১৯-০৬-২৪ ১৬:১৯:৩৯

চকরিয়া অফিস:

চকরিয়ায় ইব্রাহিম খলিল নামে এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন বিএনপি নেতা শাহিন মুরাদ ও তার ভাই ইকরামুল হক। উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের ৫নম্বর ওয়ার্ডের সিকদারপাড়া এলাকায় সংগঠিত এ ঘটনা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও জবর দখলকারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

এদিকে ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল বাদী হয়ে বরইতলী সিকদারপাড়া এলাকার মৃত আব্দুস ছালাম সওদাগরের পুত্র ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ, তারভাই ইকরামুল হক এবং একই ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রাতিপাড়া এলাকার মো. আমির হোসেনের পুত্র মো. বেলাল মেস্ত্রিসহ তিন জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে গত ১৫ জুন চকরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলামকে নির্দেশ দিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশনা পাওয়ার পর উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলাম অভিযোগ দায়েরের বাদী ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল ও অভিযুক্ত বিএনপি নেতা শাহিন মোরাদ গংদের নিয়ে কয়েকদফা বৈঠক করে বিরোধীয় জমিটি সার্ভেয়ার দিয়ে পরিমাপ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
এরই প্রেক্ষিতে গত ২১ জুন বাদী বিবাদী দুই পক্ষের দুইজন ও দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষ হয়ে একজন সার্ভেয়ার দিয়ে বিরোধীয় জমিটি পরিমাপ করা হয়। বৈঠকে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে বাদি-বিবাদী দু’পক্ষকেই বিরোধীয় জমিতে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হলেও জবর দখলকারীরা এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে বাড়ি নির্মাণ অব্যাহত রাখে। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করায় যে কোন মুহুর্তে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ও জবর দখলকারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল গতকাল সোমবার দুপুরে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, গত ২১-১২-১৯৪৮ইং সালে আর এস ১৮১নং খতিয়ানের অংশিদার আব্বাস আহমদের কাছ থেকে ১৫শতক জমি ক্রয় করেন আমার পিতা মুন্সি ফরোখ আহমদ। পরবর্তীতে ওই জমি আমি ও আমার ভাই অবসরপ্রাপ্ত সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক আবুল কাশেমের নামে বিএস খতিয়ানভূক্তও হয়। কিন্ত ওই খতিয়ানের অপর অংশিদার আব্দুস ছালাম সওদাগরের পুত্র, বরইতলী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তার ভাই ইকরামুল হক ভাড়াটিয়া লোকজন দিয়ে আমাদের নামীয় জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণ শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে নালিশী অভিযোগ দায়ের করলেও ইউপি চেয়ারম্যান গোপনে বিএনপি নেতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করায় এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে থানায় অভিযোগ দিতে বাধ্য হই।
ভূক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল আরও অভিযোগ করেন, আমি ও আমার ভাইয়ের মালিকানাধীন জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণের ঘটনার ব্যাপারে বরইতলী ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তারভাই ইকরামুল হক, একই ইউনিয়নের পশ্চিম খয়রাতিপাড়া এলাকার মো. আমির হোসেনের পুত্র মো. বেলাল মেস্ত্রিসহ আরও ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় অভিযোগ দিলেও কোন ধরনের প্রতিকার মেলেনি। অভিযুক্তরা পুলিশী নির্দেশনা উপেক্ষা করে এখনো বাড়ি নির্মান অব্যাহত রেখেছে।
ভোক্তভোগী ইব্রাহিম খলিল বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করার পর দেশ স্বাধীন করেছি। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আওয়ামীলীগ আজ ক্ষমতায়। তারপরও স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তার ভাইয়ের ক্ষমতার দাপটের কাছে আজ আমি ও আমার ভাইয়ের পরিবার অসহায়। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি শাহিন মুরাদ ও তার ভাই ইকরামুল হক আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তি জবর দখল করে বাড়ি নির্মান অব্যাহত রাখে। স্থানীয় ও সামাজিক কোন বিচারকেই তোয়াক্কা করছেন না ওই বিএনপি নেতা ও তার ভাই। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা কালে একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্পত্তি জবর দখল করে বিএনপি নেতার বাড়ি নির্মাণের বিষয়টি আমাকে হতভাগ করেছে। এব্যাপারে পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অসহায় মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম খলিল।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বরইতলীতে বিএনপি নেতা কর্তৃক এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জমি জবর দখল করে বাড়ি নির্মাণ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ হাতে পেয়ে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাজহারুল ইসলামকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা পেলে বিএনপি নেতা, তার ভাই ও অভিযুক্ত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *