চট্টগ্রাম, , শনিবার, ৪ মে ২০২৪

বেলাল আহমদ বিশেষ প্রতিনিধি

লামায় বন্যা,পাহাড় ধসে আতংক ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে প্রশাসনের মাইকিং

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-০৭ ২২:২৭:২৭ || আপডেট: ২০১৯-০৭-০৭ ২২:২৭:২৭

বেলাল আহমদ : বান্দরবানের লামা উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের মাঝে বর্ষা মৌসুম এলেই দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ভাঙ্গা ও নদী ভাঙ্গনের আতংক। বর্ষায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি হলে নির্ঘুম রাত কাটে নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের।

জানা গেছে, বৃক্ষ নিধন, পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে অত্র উপজেলার সবকয়টি নদী-খাল-ঝিরি মাটি ভরা হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে গেছে। বৃষ্টি নামলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, বন্যা, পাহাড় ধস এবং নদী-খালের দু’পাড় ভাঙ্গন। তখন নদীর তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কারো চোখে ঘুম থাকেনা। কখন যেন বন্যার পানি তলিয়ে দেবে বসতঘর, দোকান, অফিস আদালত। এইবুঝি বসতঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ল, নদী গর্ভে চলে গেল দু’পাড়ের অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এ তিন আতংকে একদিকে যেমন প্রতিবছর জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি পুরো বর্ষা মৌসুম জুঁড়েই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় এই এলাকায় বসবাসরত ৫০ হাজার বাসিন্দাকে। এইদিকে দুদিন ধরে লামা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে। লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. মাইন উদ্দিন বলেন, নিম্নাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় বর্ষা শুরুতেই পরিবার নিয়ে আমি শংকিত। এ দুর্ভোগ লাঘোবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি আমরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় চুড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস। এলাকাবাসিদের মতে, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ, পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধন করায় বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে।

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতংক শুরু হয়। বিগত বছরগুলোতে প্রতিবার ৫/৭ বার করে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে লামা বাজার। হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়। ভুক্তভোগিরা জানায়, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দু’কুল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এসময় পৌর শহরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হয় শহরের ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রায় সময় বন্যার পানিতে ব্যবসায়িদের লক্ষ লক্ষ টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো এই বন্যা ৩/৪ দিন স্থায়ী হয়। তখন মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। প্রায় মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে নদীর দু’পাড়ের পৌরএলাকা, লামা সদর ইউনিয়ন এবং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। অন্যদিকে ফাইতং ও আজিজনগর ইউনিয়নে অতিমাত্রায় পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দেয়। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে রবিবার (০৭ জুলাই) অভিযান পরিচালনা করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইশরাত সিদ্দিকা।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর মো. রফিক, লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আয়াত উল্লাহ সহ প্রমূখ। দূর্যোগকালীন সময় জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য লামা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। যোগাযোগের নম্বর সমূহ যথাক্রমে নির্বাহী অফিসার-০১৫৫০০০৭১৮০, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ০১৮৪৫৭২৯৭২১ ও পিআইও সহকারী ০১৭১৭৭১৪৭৩৬।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *