চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

শফকত হোসাইন চাটগামী বাঁশখালী প্রতিনিধি

বাঁশখালীতে বৃষ্টি বাদল উপেক্ষা করে কুয়াকাটা হুজুরের মাহফিলে জনতার ঢল

প্রকাশ: ২০১৯-০৭-১৪ ১৯:৪৩:০৩ || আপডেট: ২০১৯-০৭-১৪ ১৯:৪৪:০৯

 

বাঁশখালী প্রতিনিধি :

টানা ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে বৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে বাঁশখালীর জলদী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গতকাল শনিবার জনতার ঢল নেমেছিল। বৃষ্টি বন্যায় বহু এলাকা পানির নিচে হলেও জনস্রোত থামানো যায়নি কিছুতেই।

বাঁশখালী দারুল কারীম মাদরাসার হিফজ সমাপনী ছাত্রদের পাগড়ী প্রদান উপলক্ষে বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে এই মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

এতে প্রধান ওয়ায়েজ হিসেবে তাকরীর পেশ করেন, দেশের আলোড়নসৃষ্টিকারী সাড়াজাগানো বক্তা আল্লামা হাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী [কুয়াকাটা]

বাঁশখালীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম পীরে কামেল আল্লামা শাহ আবদুল জলিল সাহেব হুজুর ও মুহাদ্দিস আল্লামা শাহ আহমদ হাছান সাহেবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাহফিলে বক্তব্য রাখেন, কুমিল্লার আল্লামা রাশেদুল ইসলাম রহমতপুরী, বাঁশখালীর মুরুব্বী আলেম মাওলানা শাহ আবু বকর, মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেজ ফরিদ আহমদ আনসারী, উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতীব আল্লামা মোস্তাক আহমদ, মাওলানা এরশাদ উল্লাহ ও মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন, বাঁশখালীর জলদী বড় মাদরাসার সাবেক মোহতামিম মাওলানা নুরুল হক সুজিশ, দিদারিয়া নুরুল উলুম মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা হাফেজ ইসহাক, সাবেক মোহতামিম মাওলানা মনজুর আহমদ, মাওলানা নুরুল ইসলাম কদিম, মাওলানা নছিমুর রহমান, মাওলানা মুফতি ওবায়দুল্লাহ, মাওলানা মোজাম্মিলুল হক, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা রুহুল আমিন, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, মাওলানা মাহমুদুল ইসলাম প্রমুখ।

মাহফিলে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে দুর দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে এসেছে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করে। প্রবল বৃষ্টির মাঝে যেখানে ঘর থেকে বের হওয়া দায় হয়ে পড়েছে; সেখানে পেকুয়া, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, চকরিয়া কক্সবাজারসহ বিভিন্ন উপজেলার মানুষ ছুটে এসেছে কুরআনের টানে।

সকলের আসার উদ্দেশ্য প্রিয় বক্তা আল্লামা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকীর কন্ঠে কুরআনের বয়ান শুনা। মাহফিল স্থলে গিয়ে দেখা যায়-মানুষ মাঠে জায়গা না পেয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছে। কেউ কেউ বৃষ্টির কারণে মাঠে না গিয়ে দোকান, রাস্তায় বসে/দাঁড়িয়ে নীরবে ওয়াজ শ্রবণ করছে। সন্ধ্যা হতে না হতেই বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ আসতে থাকে। মানুষের ভীড় এতো বেশি ছিল যে, সেচ্ছাসেবকদের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে বেগ পেতে হয়।
এব্যাপারে দারুল কারীম মাদরাসার পরিচালক সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন- “ঝড়-বৃষ্টি যেন আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য রহমত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মানুষকে ঠাঁই দেয়া আমাদের পক্ষে কঠিন হতো। এই দুর্যোগপূর্ণ পরিবেশেও কুরআন প্রেমিক তৌহিদী জনতার ঢল নেমেছে। যা আমাদের আশাতীত। মাহফিল সফল করায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।”

মাহফিলে প্রধান ওয়ায়েজের আলোচনায় আল্লামা হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (কুয়াকাটা হুজুর) বলেন- “দুনিয়া হচ্ছে মু’মিনদের জন্য কায়েদখানা আর কাফেরদের জন্য বেহেশত। এখানে কষ্ট সহ্য করতে পারলে পরকালে সুফল ভোগ করা যাবে। আল্লাহ তা’য়ালা তাওবাকারীকে ক্ষমা করে দেন এবং অধিক পছন্দ করেন।” তিনি আরো বলেন- “ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে অপারেশন থিয়েটার। এখানে অপারেশন করে মানুষের গুনাহগুলোকে অপসারণ করা হয়। ডাক্তার যেমন অপারেশন করে রোগীর শরীর থেকে ক্ষতিকর বস্তু নিয়ে ফেলেন। ওয়াজ মাহফিলের ক্ষেত্রেও ঠিক একই। আল্লাহ তা’য়ালা মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর করে বানিয়েছেন। মানুষকে তিনি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে অন্যায় দূরীভূত করার ক্ষমতা দিয়েছেন। যা অন্য সৃষ্টিকে দেননি। মানুষ সুন্দর, যদি তার আদব থাকে। ফেরাউন, আবু জাহেল, নমরূদ যেমনি মানুষ মুসা, ঈসা (আঃ), বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)ও তেমনি মানুষ। কিন্তু আজ কোন মুসলমানের ঘরে ফেরাউন, নমরূদ, আবু জাহেল নাম রাখা হয় না। কারণ তাদের আদব ছিল না, তারা ঘৃণিত। আজও আমাদের সমাজে অনেকেই নবীর আদর্শের বিরুদ্ধে কথা বলে। তারা সব বুঝেও না বুঝার ভান করে। আল্লাহ তা’য়ালা তাদের শাস্তির ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন।”
মাহফিল শেষে মাদরাসা, দেশ ও জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে মুনাজাত করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *