মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কু নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০১৯-১০-১১ ০০:১২:৩৫ || আপডেট: ২০১৯-১০-১১ ০০:১২:৪২
মোঃ জয়নাল আবেদীন টুক্কুঃ
পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ৩ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হইবে।এর মধ্যে ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শেষ মহুর্তে নির্ঘুম প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ৫ চেয়ারম্যান প্রার্থী সোনাইছড়িতে নৌকা প্রতীকের এ্যানিং মার্মা ও আনারস প্রতীকের বাহান মার্মা। ঘুমধুমে ঘোড়া প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রাথী রশিদ আহাম্মদ,নৌকা প্রতীকের জাহাঙ্গীর আজিজ ও আনারস প্রতীকের মৌলানা ছালেহ আহাম্মদ। তারা নিজ নিজ কর্মী সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন পাহাড়ী জনপদের গ্রামের পর গ্রাম।
এ দুই ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। এর মধ্যে সোনাইছড়িত দুই জন একজন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এ্যানিং মার্মা। তিনি উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের দলীয় নেতা কর্মীদের নিয়ে অবিশ্রাম প্রচারণার অংশ হিসাবে উঠান বৈঠক,পথ সভার মধ্যে ভোট প্রার্থনা করছেন এলাকাবাসীর কাছে। তিনি এলাকায় বীর বাহাদুরের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
অপর জন আওয়ামীলীগের সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান বাহান মার্মা তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে লড়ছেন। এ দুই প্রার্থী সম্পর্কে দাদা ও নাতী। দাদা আনারস প্রতীক নিয়ে সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে নিয়মিত। এই পর্যন্ত জনমত জরিপে নৌকা প্রতীক নিয়ে এ্যানিং মার্মা প্রচার প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন। তবে স্থানীয়দের মতে তেমন পিছিয়ে নেই বাহান মার্মাও লড়াই হবে হাড্ডা হাড্ডি। অপরদিকে ঘুমধুম ইউনিয়নে প্রার্থী তিন জন। এর মধ্যে রশিদ আহাম্মদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে এলাকার কর্মী সমর্থক, প্রবিণ মুরুব্বী ও নবিনদের নিয়ে নির্ঘুম প্রচার-প্রচরণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি ৭ নং ওয়ার্ডের দীর্ঘদিন মেম্বার ছিলেন এবং গত নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ থেকে সামান্য ভোটে হেরেছিল। সে হিসাবে সৎ ও ভাল ব্যক্তি হিসেবে এ ইউনিয়নে তার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান, ভোটার আজিজ ও নোমানসহ অনেকে।
আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সমর্থকরা জানান, তিনি ৫ বছর দায়ীত্ব কালীন সময়ে এলাকার মানুষের সুখে দুঃখে পাশে ছিল সে হিসেবে আবারো নির্বাচিত হবে এ প্রত্যাশা করেন ঘুমধুম ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের অনেক নেতা। অপর প্রার্থী মৌলানা ছালেহ আহাম্মদ ও আনারস প্রতীক নিয়ে প্রচার-প্রচরণায় পিছিয়ে নেই। তিনি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার বিজয় সুনিশ্চিত বলে এ প্রতিবেদককে বলেন।
স্থানীয় সূত্র গুলো জানান এ ইউনিয়নর তিন প্রার্থী ধনে-মানে সমানে সমান। যদিও বা ভোটে মাঠে এগিয়ে আছে ঘোড়া প্রতীকে প্রার্থী। তবে বর্তমান জনমত জরিপে লড়াই হবে রশিদ ও জাহাঙ্গীরের মধ্যে দ্বিমুখী। উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র মতে,এ সোনাইছড়ি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯টি। ভোটারের সংখ্যা ৩ হাজার ৫ শত ৩০ ভোট । পুরুষ ভোটার ১৮১২ ও মহিলা ভোটার ১৭১৮ টি। দুই জনই প্রার্থী হয়েছেন ৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। আর ঘুমধুম ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র ৯টি মোট ভোটার সংখ্যা ৯৩০১ ভোট। পুরুষ ভোটার ৪৬৮২ ও মহিলা ভোটার ৪৬১৯। রশিদ আহাম্মদ ৭ নং ওয়ার্ড, জাহাঙ্গীর আজিজ ১ ওয়ার্ড ও মৌলানা ছালেহ আহাম্মদ ৩ নং ওয়ার্ড থেকে এ নির্বাচনে লড়ছেন।
স্থানীয় সূত্র গুলো জানান,এবারের সোনাইছড়ি ইউপিতে নির্বাচন হবে দ্বিমুখী। দু’প্রার্থীর মধ্যে ধনে-মানে বেশি এ্যানিং মার্মা। তবে বর্তমান জনপ্রিয়তায়ও কেউ কারও চেয়ে কম নয়। বর্তমান চেয়ারম্যান হিসাবে বাহানের পরিচিতি একটু বেশি কারণ তিনি দীর্ঘদিন রাজনৈতিকদলের সাথে সম্পৃক্ত এবং এলাকায় দীর্ঘ ৫ বছর উন্নয়ন করেছে। তবে আওয়ামী ঘরনার প্রার্থী হিসাবে নবাগত এ্যানিং ভোটের মাঠে প্রচার-প্রচরণায় এগিয়ে রয়েছে। উল্লেখ্য সোনাইছড়ি ইউনিয়নটি যাত্রা শুরু করে আজ থেকে ৫ বছর আগে। এ ইউনিয়নের প্রথম চেয়ারম্যান হয় বাহান মার্মা।
সূত্র আরো জানা যায়,নির্বাচনী মাঠে রশিদ, জাহাঙ্গীর পাকা খেলোয়াড়। তাই তারা কৌশলে এ নির্বাচনে নিজ নিজ প্রতীক নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রাতদিন প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্ত এবার বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী রশিদ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহাম্মদ মনে করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছে সে হিসাবে কৌশলে সবকিছু মাথায় রেখে র্নিঘুম রাত কাটিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন। তিনি নিজে সৎ চরিত্রের অধিকারী দাবী করে বিজয়ী হলে দল-মত,ধর্ম-বর্ণ,ধনী-গরীব ও নারী পুরুষ-সকলকে সাথে নিয়ে তার ভবিষ্যৎ পরিষদ চালাতে আগ্রহী।
তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামীলীগের প্রবিণ নেতা খাইরুল বশর এক নির্বাচনী সভায় প্রকাশ্যে বলেন নৌকা মার্কাকে জয় করতে প্রয়োজনে আমার (রশিদের) বাড়ি আগুন দিয়ে জালিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়াও তমব্রু কেন্দ্রটি ঝুঁকিপূর্ণ বলে উল্লেখ্য করে তিনি সুষ্ঠ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট সম্পন্ন করার জন্য প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। ভোটার শাহ আলম জানান,ঘুমধুম ইউনিয়নে সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী পরিবার তাদের জন্যে কাজ করছে। নৌকা বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হবেন। এলাকার লোকজন তাদের পক্ষে আছে-থাকবে।
জাহাঙ্গীর আজিজ এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি যার সম্মান তাকে দিয়ে যে কোন সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন। মানুষের মনে আঘাত পায় এমন কোন আচরণ তিনি করবেন না। নারী,শিশু,অভাবী ও বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেবেন। তিনি আশা করছেন,সব মিলিয়ে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে আবারো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।