চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪

এম মাঈন উদ্দিন মিরসরাই প্রতিনিধি

মিরসরাইয়ে প্রতিবন্ধি শিশুদের আশার আলো জাগাচ্ছে ‘নাবিল’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন স্কুল

প্রকাশ: ২০১৯-১০-১৭ ১০:২৬:৫৯ || আপডেট: ২০১৯-১০-১৭ ১০:২৭:০৭


এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন উদ্যোগে অটিজম, সেব্রিয়াল, পালসি, ডাউন্স সিনড্রোম ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি শিশুদের পড়াশোনার জন্য ‘নাবিল’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধি শিশুদের আশার আলো জাগাচ্ছে ‘নাবিল’ বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এই স্কুল। ইউনিয়ন পরিষদের একটি কক্ষে সপ্তাহে ৫দিন ক্লাস নেয়া হয়।

জানা গেছে, প্রতিবন্ধী তথা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের মূলধারার বিদ্যালয়ে যাওয়ার উপযোগী করে গড়ে তুলতে শহরাঞ্চলে অনেক বিদ্যালয় গড়ে উঠলেও গ্রামে এর সংখ্যা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে শহরাঞ্চলে প্রতিবন্ধী শিশুরা প্রতিকুলতা জয় করে আলোকিত ভবিষ্যতের সন্ধান পায়। বিপরীতে গ্রামের অসহায় প্রতিবন্ধী শিশুরা পরিবারের জন্য বোঝা ও অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবন্ধীরা সমাজের অভিশাপ নয়, উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ পেলে তারাও প্রতিকুলতা জয় করে পরিবারের আর্শিবাদ তথা দেশের জন্যে সম্পদ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে তথা তাদের অভিশপ্ত জীবন থেকে আলোকিত পথের সন্ধান দিতে করেরহাটের হাবিলদারবাসায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের স্কুল ‘নাবিল’। চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়নের ঐকান্তিক চেষ্টায় একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর নামানুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা পাওয়া এই স্কুল মিরসরাইয়ের উত্তরাঞ্চল ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রতিবন্ধী শিশুদের আশার আলো জাগাচ্ছে। বর্তমানে এই স্কুলে ১৩ জন শিক্ষার্থী, ৩ জন শিক্ষক ও একজন আয়া রয়েছে।

স্কুলের তত্ত্বাবধানে থাকা শিক্ষক আনজুমান আরা জানান, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি এই স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় স্কুলটি এগিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলে নাবিলের নামে স্কুলের নামকরণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের যাতায়াত খরচ, শিশুদের প্রতিদিন টিপিন যাবতীয় খরচ বহন করা হয়। এবারের রমজানের ঈদে শিশুদের জামা কেনার জন্য ১৫শ টাকা করে দিয়েছেন তিনি। তবে সরকারীভাবে কোন বরাদ্ধ পেলে স্কুলের নিজস্ব ভবন করা হবে। ভবন করতে নাবিলের পিতা নজরুল ইসলাম ৪শতক জায়গা দিয়েছেন। আনজুমান আরা আরো বলেন, আমার ছেলে নাবিল প্রতিবন্ধি হওয়ায় আমি চট্টগ্রাম শহরে প্রতিবন্ধি শিশুদের পড়াশোনার উপর ট্রেনিং নিয়েছি। এখন এলাকার প্রতিবন্ধি শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন কৌশলে শিশু শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। সাথে শিক্ষার্থীদের অভিবাবক রয়েছে। শিশু তাছলিমা, আশরাফুল, আহনা, প্রান্ত সরকার, শান্ত সরকার ঐশিরা মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করছে। ঐশির মা সীমা বলেন, এখানে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা না হলে আমার মেয়েকে পড়ানো সম্ভবন হতো। এখানে এসে হাতে কলমে অনেক কিছু শিখছে। তবে ভ্যান গাড়ির ব্যবস্থা করলে যাতায়াতের সুবিধা হতো।

সমাজ কর্মী মোঃ নুর উদ্দিন সবুজ বলেন, প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নীতিমালার আলোকে শিক্ষাক্রম, পাঠ্যসূচি, মূল্যায়ন, পরিদর্শন ও তদারকি করা, স্কুলে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কারিগরি শিক্ষা, খেলাধুলা, বিনোদনসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে এবং শিক্ষার্থী ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, প্রতিবন্ধি শিশুদেরও পড়াশোনার অধিকার আছে। তারাও শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়, তারা সমাজের বোঝা হয়ে থাকতে চাইনা। এই শিশুরা আমার বাচ্চার মতো। আমি স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে খরচ বহন করে যাচ্ছি। সার্বক্ষণিক স্কুলের সাথে জড়িত রয়েছি। উপযুক্ত শিক্ষাগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুরাও একদিন দেশের যোগ্যতম নাগরিক হয়ে উঠবে।

তিনি আরো বলেন, করেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় শিক্ষা বঞ্চিত হচ্ছিলো শিশুরা। তাদের শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নলখোঁতে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বিদ্যালয় ও কালাপানিয়া এলাকায় শেখ রাশেল বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *