চট্টগ্রাম, , মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

admin

মানব পাচারকারী দালালরা ফের সক্রিয় : টার্গেট রোহিঙ্গা ক্যাম্প

প্রকাশ: ২০১৯-১১-২৪ ১৯:২৫:৩৫ || আপডেট: ২০১৯-১১-২৪ ১৯:২৫:৪৩

আবদুল্লাহ মনির, টেকনাফ :

শীত মৌসুমে সাগর শান্ত থাকে, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মানব পাচারে জড়িত দালালরা
নৌকায় করে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।এমন আশংকা থেকে
আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবং সীমান্ত রক্ষীদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের টার্গেট করেছে পাচারকারী দালালরা।
প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় রয়েছে এসব দালাল চক্রের সদস্যরা। তারা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের
বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে সাগরপথে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া পাড়ি জমাতে আগ্রহী করে তুলছে
বলে অভিযোগ উঠেছে ।

এর আগে একাধিক সময় টেকনাফ সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় মানবপাচার চলছিল। তবে
সেসময় রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় বাংলাদেশী মানুষের সংখ্যাও কম ছিলনা। পাশাপাশি পাচার
কাজে যুক্ত ছিল স্থানীয় কথিপয় দালালরাও। তবে এখনকার সময়ে স্থানীয় বাসিন্দারা সাগর পথে
ঝুঁকি নিয়ে আর মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। তাই দালালরা সুযোগ কাজে লাগাতে এবার টার্গেট করেছে রোহিঙ্গাদের।

সর্বশেষ গত ১৪ নভেন্বর বৃহস্পতিবার রাতে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় সেন্ট মার্টিনসের
অদূরে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর থেকে ১২২ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড। এসময়
ট্রলারে থাকাচারজন পাচারকারী দালালকে আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৫ জন
শিশু, ৫৯ জন নারী ও ৪৪ জন পুরুষ রয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের সবাই উখিয়া ও টেকনাফের
বিভিন্ন ক্যাম্পের বাসিন্দা।

সেন্ট মার্টিনস কোস্ট গার্ড স্টেশন কমান্ডার লেফট্যানেন্ট জোসেল রানা বলেন, সেন্ট
মার্টিনসের অদূরে সাগরে একটি ট্রলার ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসছিল। সাগরে টহলরত কোস্টগার্ড
সদস্যরা ট্রলারটি দূর থেকে লক্ষ্য করে দ্রুত সেখানে পৌঁছে ট্রলারে থাকা মালয়েশিয়াগামী ১২২
রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেন এবং চারজন দালালকে আটক করা হয়। এসময় ট্রলারটি জব্দ করা হয়।

তিনি আরো বলেন, ট্রলারটি দূর্ঘটনার কবলে পড়ে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল। প্রাথমিক
জিজ্ঞাসাবাদে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা দালালদের খপ্পরে পড়ে সাগরপথেমালয়েশিয়া যাচ্ছিল বলে স্বীকার করেছেন। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের থানায় হস্তান্তর করে প্রয়োজনীয় আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিজ নিজ ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা নারী রহিমা বেগম বলেন, মালয়েশিয়াতে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। দুই
পরিবার মিলে আমাকে স্বামীর কাছে পাঠানোর জন্য ট্রলারে তুলে দিয়েছেন। আমাকে বলা হয়েছিল
জাহাজে করে নেয়া হবে, তবে এখানে এসে দেখি কাঠের ট্রলারে করে পাঠানো হয়েছিল।

তথ্য মতে, গত কয়েক মাসের মধ্যে সাগর পথে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় এ পর্যন্ত ৬শ
জনকে উদ্ধার করেছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তাদের সবাই বিভিন্ন রোহিঙ্গা
ক্যাম্পের বাসিন্দা।

সরেজমিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে জানা যায়, সাগর পথে মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের মধ্যে
রোহিঙ্গা সুন্দরী যুবতীদের সংখ্যা বেশি। মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা যুবকদের সাথে বিয়ে
দিতে দালালরা তাদের বিভিন্ন প্রলোভনের মাধ্যমে সেখানে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলেন।

এছাড়া অনেক বিবাহিত নারীও তাদের শিশু সন্তানসহ সেখানে স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য দালালদের কাছে
ধর্না দিচ্ছেন।

নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, যারা দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশী
পাসপোর্ট করাতে পেরেছেন তারা বাংলাদেশী সেজে আকাশপথে মালয়েশিয়াসহ মধ্যপাচ্যের
বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছেন কিন্তু সম্প্রতি সময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট করা নিয়ে কঠোর নজরদারী থাকার কারনে সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া যেতে রাজি হয়েছেন।
তারা।


তিনি আরো বলেন, প্রতিটি ক্যাম্পে মালয়েশিয়া পাচারকারী দালাল চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে
কাজ করছে। তারা প্রথমে কম টাকায় মালয়েশিয়া পৌঁছে দেয়ার কথা বললেও পরে সেখানে গিয়ে
স্বজনদের হাতে পৌঁছিয়ে দেয়ার আগে মোটা অংকের টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে
বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের পথ বেচে নেয়।

টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা কেফায়েত জানান, সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারকারী
রোহিঙ্গাদালালদেরসাথে এদেশের স্থানীয় কিছু ব্যক্তিও সম্পৃক্ত রয়েছে। শীত মৌসুমে সাগর
অনেকটা শান্ত থাকে, তাই দালালরামানবপাচারের জন্য শীত মৌসুমকে কাজে লাগাতে তৎপর হয়ে উঠে।

টেকনাফ র‌্যাব-১৫ সিপিসি-১ এর ক¤পানি কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কমান্ডার মির্জা শাহেদ
মাহতাব বলেন, মানবপাচারকারী দালালরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নাগরিকদের টার্গেট করে নতুন করে
সাগরপথেমানবপাচারের চেষ্টা চালিয়ে যা তাদের স্ইে অপতৎপরতা রোধ করতে এবং রোহিঙ্গা
ক্যাম্প ভিত্তিক দালালদের ধরতে প্রতিটি ক্যাম্পে র‌্যাবের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সাগরপথে
মানবপাচার ঠেকাতে র‌্যাব সর্তক রয়েছে।

টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আলম বলেন, এর আগেও সাগর পথে মানবপাচারেরঘটনায় এলাকার
বদনাম হয়েছে, অনেক লোক সাগরে ট্রলার দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। এবারো এ ধরনের কোন
ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়ে উপকুলীয় এলাকা গুলোতে নজরদারী রাখার জন্য স্থানীয়
জনগনকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *