চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

admin

চকরিয়ায় শহীদ আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠনে অনিয়মের অভিযোগ

প্রকাশ: ২০১৯-১২-০২ ২১:২০:৫১ || আপডেট: ২০১৯-১২-০২ ২১:২১:০০


আব্দুল্লাহ আল সাকিব, চকরিয়া:
অনিয়ম ও দূর্নীতির ঘটনা চাপা দিতে শহীদ আবদুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক মৌলভী নুরুল মোস্তফার বিরুদ্ধে। প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফা সম্প্রতি সময়ে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন নির্বাচন আয়োজনেও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। বিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য, দাতা, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং একাধিক অভিভাবকদের অবগত না করে গোপনে কিছু ব্যক্তিকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার মিশনে নেমেছে। নির্বাচনে অনিয়মে সহযোগিতা দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দাতা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্যরা।


নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.হামিদ উল্লাহ মিয়া বলেন, নীতিমালার নিয়ম অনুসরণ করে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন হয়েছে। এখানে কোন ধরণের অনিয়ম হয়নি। তবে বিদ্যালয়ের একাধিক অভিভাবকের দাবি, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়ে নুরুল মোস্তফা ২০১৫ সালের শুরুতে বিদ্যালয় তহবিলের অর্থ হরিলুটসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।

একপর্যায়ে বিদ্যালয় সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন চেয়ারম্যান আবদুল মতলব। ২০১৫ সালের ১১ মে তারিখে প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফা বিদ্যালয়ের আজীবন দাতা সদস্য অধ্যাপক সোলতান আহমদকে নতুন সভাপতি হিসেবে অনুমোদন দিতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে আবেদন করেন। কিন্তু ওই আবেদনটি কার্যকর হবার আগে অধ্যাপক সোলতান আহমদের অগোচরে ১৫ সালের ১১ জুলাই ফের শিক্ষাবোর্ডে নতুন একটি আবেদন জমা দেন প্রধান শিক্ষক। আবেদনে তিনি পদত্যাগী সভাপতি তাঁর ভগ্নিপতি চেয়ারম্যান আবদুল মতলবকে স্বপদে বহাল রাখতে অনুরোধ জানান। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ২৯ আগস্ট শিক্ষাবোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক কাজী নাজিমুল ইসলাম সভাপতি পদে আবদুল মতলবকে বহাল রেখে অফিস আদেশ দেন।


দাতা সদস্য অধ্যাপক সোলতান আহমেদ বলেন, নির্বাহী কমিটি মেয়াদ শেষ হবার পর নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও প্রধান শিক্ষক নানা চলছাতুরীর আশ্রয় নিয়ে নির্বাহী কমিটির কার্যক্রম মেয়াদোর্ত্তীণ করে দেন। এ সুযোগে তিনি অনেকটা গোপনে শিক্ষাবোর্ডে একটি এডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য আবেদন করেন।

আবার উল্লেখিত এডহক কমিটিতে অনিয়মের মাধ্যমে সভাপতি মনোনীত হন প্রধান শিক্ষকের আপন বড় ভাই তারেক জামিল। কমিটির সদস্য করা হয় ভগ্নিপতি সামসুল আলম ও অনুগত একজন শিক্ষককে। চার সদস্যের কমিটিতে প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফা পদাধিকার বলে হন সদস্য-সচিব।
সোলতান আহমদ দাবি করেছেন, নীতিমালার আলোকে ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে অন্তত তিনমাস আগে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, দাতা ও অভিভাবক ভোটারদের তালিকা হালনাগাদকরণের কথা।

কিন্তু উল্লেখিত সময়ে এডহক কমিটির সংশ্লিষ্টরা কোন ধরণের পদক্ষেপ নেয়নি। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ করি। বিদ্যালয়ের লেজুলেশন খাতা, দৈনন্দিন লেনদেন খাতা, জমির দলিল-দস্তাবেজ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে উদ্ধার করারও দাবী জানান তিনি।


তিনি বলেন, ওইসময় অভিযোগটি তদন্তের জন্য চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের একাডেমিক সুপারভাইজার রতন বিশ^াসকে নির্দেশ দেন ইউএনও শিবলী নোমান। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই অভিযোগটির তদন্ত আর হয়নি। তিনি অভিযোগ তুলেছেন, সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক দূর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা নতুন কমিটির নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি নিয়ে। নিজের অনিয়ম দূর্নীতি এবং অপকর্মের ঘটনা কৌশলে ধামাচাপা দেয়ার অভিপ্রায়ে অনেকটা গোপনে ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন নির্বাচনের আয়োজন ইতোমধ্যে সমাপ্ত করা হলেও নির্বাচনের ব্যাপারে অনেক অভিভাবক ও দাতা সদস্য অবগত ছিলনা।


জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফার আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ নভেম্বর বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো.হামিদ উল্লাহ মিয়া। তফসিলে প্রতিষ্ঠাতা, দাতা, অভিভাবক ও শিক্ষক ক্যাটাগরী পদে নির্বাচনের কথা বলা হয়।
অবশ্য নির্বাচনের প্রাক-প্রস্তুতি গ্রহণের আগে গত অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ও কক্সবাজার জেলা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক সোলতান আহমেদ।

অভিযোগটিতে তিনি দাবি উপস্থাপন করেন, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চলমান কার্যক্রমে অনিয়মের অভিযোগ নিস্পত্তিকরণে সকল ক্যাটাগরীর প্রার্থীদের উপস্থিতিতে শুনানীর মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার।


সোলতান আহমেদের দাবি, আমার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিস্পত্তি শুনানী না করে উল্টো তিনদিন পর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা কমিটির নতুন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করেন। তফসিল অনুযায়ী ১১ নভেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ ও গ্রহণের কথা থাকলেও পরদিন ১২ নভেম্বর আমি মুঠোফোনে কথা বলি প্রিসাইডিং কর্মকর্তার সঙ্গে।


ওইসময় উত্তরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো.হামিদ উল্লাহ মিয়া আমাকে বলেন, গতকাল (১১ নভেম্বর) পর্যন্ত কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ কিংবা এবং দাখিল করেনি। কিন্তু ১৪ নভেম্বর দেখা গেছে, প্রতিটি পদের বিপরীতে একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। আবার ফরম জমাও দিয়েছে।

অধ্যাপক সোলতান আহমেদ বলেন, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির নির্বাচন নিয়ে উদ্ভুদ্ব পরিস্থিতির জেরে আমি ১৪ নভেম্বর প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাই। ওইসময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হামিদ উল্লাহ মিয়ার কাছে জমা হওয়া ফরম গুলো দেখি। তাতে দেখা যায়, ফরম জমা দানকারীদের মধ্যে দাতা সদস্য হিসেবে ছাবের আহমদের নামে একটি ফরম পুরণ করে জমা দেওয়া হয়েছে।

এসময় আমি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অনুরোধ করি, ছাবের আহমদের সঙ্গে একটু কথা বলুন, আসলে তিনি নির্বাচনের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছে কীনা। ওইসময় প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ফোনে ছাবের আহমদের সঙ্গে কথা বললে প্রতি উত্তরে ছাবের আহমদ জানান বিদ্যালয়ের নির্বাচন সংক্রান্ত কোন বিষয়ে আমি জানি না। কিন্তু ওইসময় দাতা সদস্য হিসেবে সাবেক ব্যাংকার এজাহার হোছাইনের নামে কেউ কোন ধরণের ফরম জমা দেয়নি। এতসব অনিয়মের পরও সর্বশেষ ২৭ নভেম্বর প্রধান শিক্ষক নুরুল মোস্তফার জমা দেয়া পছন্দের সকল প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হামিদ উল্লাহ মিয়া।


বিদ্যালয়ের দাতা, প্রতিষ্ঠাতা ও স্থানীয় সচেতন অভিভাবক মহল অবিলম্বে প্রধান শিক্ষকের অর্পকম চাপা দিতে যোজসাজসে নির্বাচিত ঘোষণা করা বিদ্যালয়ের পকেট কমিটি বাতিল পুর্বক ও বিদ্যালয়টিকে অনিয়ম দুর্নীতির কবল থেকে রক্ষাকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। পাশপাশি শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঠিক নজরদারী প্রত্যাশা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *