admin
প্রকাশ: ২০১৯-১২-২৯ ২৩:৪৫:১৮ || আপডেট: ২০১৯-১২-২৯ ২৩:৪৬:৪০
আব্বাস হোসাইন আফতাব, রাঙ্গুনিয়া :
অনিয়ম দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। টাকা লেনদেন ছাড়া সরকারি এই অফিসে কোন ফাইল নড়েনা বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন টাকা ছাড়া কোন ফাইলে স্বাক্ষর করেননা।
এই উপজেলার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ৯৪৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা সর্বোপরি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জিম্মী হয়ে আছে শিক্ষা কর্মকর্তা, কতিপয় সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা ও হিসাব সহকারির কাছে। গত অর্থ বছরে বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (সিøপ) প্রকল্পের আওতায় ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দের প্রকৃত কাজের খরচ হয়েছে ৪০ শতাংশ। বাকি ৬০ শতাংশের ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরী করে আত্মসাৎ করেছেন উপজেলা শিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কমিটি সংশ্লিস্টরা।
এই অফিসের সকল ধরণের অনিয়ম দূর্নীতির মূল হোতা শিক্ষা কর্মকর্তা হলেও তিনি টাকা আদায় করেন হিসাব সহকারি জয়শ্রী নাথের মাধ্যমে। শিক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষিকার কাছ থেকে নানা কাজে টাকা আদায় করেন তিনি। আর এসব টাকা চলে যায় শিক্ষা কর্মকর্তার পকেটে।
দুর্নীতির পাশাপাশি শিক্ষা অফিসের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুশ্চরিত্রের ভয়াবহ অভিযোগ পাওয়া গেছে অনুসন্ধানে।
“রাঙ্গুনিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিস” নামের ভেরিফাইড একটি ফেসবুক আইডি থেকে বিভিন্ন নারী শিক্ষিকাকে মেসেঞ্জারে নানা আপত্তিজনক বার্তা পাঠানোর স্ক্রিন শর্ট এপ্রতিবেদকের হাতে এসেছে। উপজেলার ৯৪৯জন শিক্ষক-শিক্ষিকার কাছে অফিসিয়াল বিভিন্ন সার্কুলার দ্রুত জানাতে ফেসবুকের এই আইডি ব্যবহার করা হয় স্বীকার করে শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, আইডিটার পাসওয়ার্ড তার কাছে নাই। সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ও জিসা চাকমা সেটা অপারেট করেন বলে জানি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে রাঙ্গুনিয়ার ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (সিøপ) প্রকল্পের আওতায় ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে সরকার থেকে। তৎমধ্যে ৪টি বিদ্যালয় ৮০ হাজার, ৭২টি বিদ্যালয় ৭০ হাজার ও ৭৪টি বিদ্যালয় ৫০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ পেয়েছেন। কয়েকটি বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে কিছু খেলাধুলোর সামগ্রীসহ ব্যবহার্য জিনিষ ক্রয় বাবদ বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থের প্রকৃত কাজে খরচ হয়েছে ৪০ শতাংশ।
এই বরাদ্দের ৩০ শতাংশ টাকা অফিস খরচ হিসেবে শিক্ষা কর্মকর্তার হাতে তুলে দেয়ার অলিখিত নিয়ম চালু আছে শিক্ষা অফিসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৪জন প্রধান শিক্ষক এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বাকি ৩০ শতাংশের ভাগবাটোয়ারা হয় বিদ্যালয় পর্যায়ে।
এদিকে ৯০ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিল ভাউচার অনুমোদন দেয়ার পরও ১৫০টি বিদ্যালয়ের কোনটিতে সিøপ প্রকল্পের কাজের তদারকি তিনি করেননি বলে স্বীকার করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন। অফিসের হিসাব সহকারি জয়শ্রী নাথের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে ৩০ শতাংশ করে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, মাসিক পরিকল্পনা অনুযায়ি কয়েকটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করা হলেও কখনো সিøপের কাজ সঠিক ভাবে খরচ করা হয়েছে কিনা তা তদারকি করার সুযোগ হয়নি।
তাছাড়া সিøপের টাকা খরচ করেন প্রধান শিক্ষক ও কমিটি সংশ্লিস্টরা। তারাই এটার জন্য দায়বদ্ধ, আমি নই।
অভিযোগ আছে, যেসকল শিক্ষক-শিক্ষিকারা জয়শ্রী নাথের হাতে টাকা দেননা তারা বিল-ভাউচার, প্রভিডেন্ট ফান্ড, শ্রান্তি বিনোদন ভাতা, অসুস্থতার ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটিসহ বিভিন্ন ফাইল স্বাক্ষরের জন্য শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে শতবার ধর্না দিয়েও স্বাক্ষর আদায় করতে পারেননা। তাদের উল্টো পরামর্শ দেয়া হয় ফাইল হিসাব সহকারির মাধ্যমে পাঠাতে। মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটাতে এই অফিসে বেতনের বড় অংক দিতে হয় বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকারা।
সংশ্লিস্ট সুত্র জানায়, সম্প্রতি ২০২০ সালের ডিপিএড প্রশিক্ষণে অংশ নিতে ৪৮ জন সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকার তালিকা তৈরী করেন রাঙ্গুনিয়া প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। আগামী ১লা জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই) তে দিবা ও নৈশ ব্যাচে এক বছরের এই প্রশিক্ষণ শুরু হবে। এদের প্রত্যেকের কাছ থেকে হিসাব সহকারি জয়শ্রী নাথের মাধ্যমে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ নিয়েছেন শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন।
আবার যেসব শিক্ষক-শিক্ষিকা শারিরীক ভাবে অসুস্থ এবং প্রশিক্ষণে যেতে মানসিকভাবে অপ্রস্তুত তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে জানিয়ে এরকম কমপক্ষে ১০ জনের কাছ থেকে তালিকা থেকে নাম কাটানোর নাম করে টাকা আদায় করা হয়েছে। ডিপিএড প্রশিক্ষণের নামে তারা শিক্ষকদের কাছ থেকে গত মাসে প্রায় ৪ লাখ টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
এসব অনিয়মের বিষয়ে শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন ও হিসাব সহকারি জয়শ্রী নাথ অস্বীকার করেছেন। তবে শিক্ষা কর্মকর্তার নামে ৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে মোবাইলে জয়শ্রী নাথ টাকার জন্য চাপ প্রয়োগের ভয়েস রেকর্ড এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে জানালে তারা দুজনেই চুপ থাকেন।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সুত্র জানায়, মোট ১৫০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ হাজার এক’শ শিক্ষক শিক্ষিকার বিপরীতে ৯৪৯ জন শিক্ষক শিক্ষিকা কর্মরত আছেন। ১৫১জন শিক্ষকের পদ খালি। ৭ জন সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তার মধ্যে পদায়ন আছে ৫ জন। ৩ জন হিসাব সহকারি পদের বিপরীতে আছেন ১জন। কোন এমএলএস নেই অফিসটিতে।
শিক্ষা কর্মকর্তার নেতৃত্বে গড়ে উঠা একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে এই অফিসের নানা অনিয়মের হোতা। ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন এই সিন্ডিকেটে সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন, হিসাব সহকারি জয়শ্রী নাথসহ সম্প্রতি সহকারি শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পাওয়া গুটিকয়েক শিক্ষকও জড়িত। এদের কথার বাইরে কোন কাজ হয়না রাঙ্গুনিয়া শিক্ষা অফিসে।
তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ঘাটচেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আলী হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি কর্মকর্তাদের ভালো কালেক্টর হিসেবে স্বীকৃত