চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

খলিল চৌধুরী সৌদি আরব প্রতিনিধি

ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সৌদিতে মানবেতর জীবন যাপন করছে বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীরা

প্রকাশ: ২০২০-০১-১৭ ১৯:২৭:৪৬ || আপডেট: ২০২০-০১-১৭ ১৯:২৭:৫৩

খলিল চৌধুরী, সৌদি আরব প্রতিনিধি :

প্রতিদিন ধর্ষণ ও শরীরের বিভিন্নস্থানে কারেন্টের শর্ট, গরম পানির তাপ, লোহাররট গরম করে গায়ে স্পট, লাঠি, কিলঘুষি-সহ অমানবিক নির্মম নির্যাতন শিকার হয়ে প্রবাসে চলিত বছরের শুরু থেকে গত দেড়বছর যাবৎ মানবেতর জীবন যাপন করছে গৃহকর্মী হিসাবে সৌদি আরবে আসা বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীরা।

দীর্ঘসময় সৌদিআরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজার বন্ধ থাকার পর ২০১৬ সালে বাংলাদেশর উপর অর্পিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় সৌদিআরব।অন্যদিকে অন্যান্য দেশে বাংলাদেশর শ্রমিক নেওয়া বন্ধ থাকায় হাজার হাজার নারী এবং পুরুষ শ্রমিক চলে আসে সৌদি আরবে।

বেশির ভাগ নারী গৃহকর্মী দালাল চক্রের মাধমে সৌদিআরব এসেছে। অনেক নারী বিস্তারিত খোঁজ খবর না নিয়ে দালালের খপ্পরে পরে চলে এসেছে। না জেনে আসার কারনেই তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে।মূলত নারী গৃহকর্মীদের ভিসাগুলো সৌদীদের কাছ থেকে বিনা খরচে নিলেও দালাল চক্র নারী গৃহকর্মীদের কাছ থেকে মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়ে সৌদিতে পাঠাচ্ছে। এক সময় বাংলাদেশ থেকে নারী শ্রমিক না পাঠালে পুরুষ শ্রমিক না নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।

একজন পুরুষের সাথে একজন নারী শ্রমিক পাঠানোর ঘোষনা দেওয়া হয় ভিসার অফিসগুলো থেকে।নারীদের গৃহ পরিচর্চার কাজের কথা বলে এনে বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য করছে। সৌদিতে আসার পর তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে, তখন আর কিছু করার থাকেনা। বেশীর ভাগ নারী গৃহকর্মী আশার পর পরই মানসিক, শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে।

সৌদি আরবের বেশিরভাগ বাড়ি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, এখানে যদি কোন মানুষ মেরে রেখে দেওয়া হয় পাশের বিল্ডিং এর কোনো লোক জানতে পারবেনা। বিনা অনুমতিতে কেউ প্রবেশ করতে পারেনা তাদের বাড়িতে ।

আপন ভাই, বাবা, নিকট আত্মীয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা করার অনুমতি পায়না তাদের সাথে। যদিও দেখা করার সুযোগ মিলে অল্প সময়ের জন্যে সৌদিদের সামনে কথা বলে চলে আসতে হয়। তাই সৌদিআরবে বেশিরভাগ নারী গৃহকর্মীর নির্যাতনের কথা অজানা থেকে যায়। যতটুকু জানা যায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃত পক্ষে সৌদিতে আসা অধিকাংশ নারী গৃহকর্মী কোননা কোনভাবে শারীরিক, মানসিক এবং যৌন নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। অনেক গৃহকর্মী আছে সপ্তাহে একদিন মোবাইল ব্যবহার করার সুযোগ পায়। সারা সপ্তাহ মোবাইল দেওয়া হয়না তাদের।

নরমাল মোবাইল ছাড়া এন্ড্রয়েড মোবাইল তাদেরকে চালাতে দেওয়া হয়না। ভোর সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত তাদের কাজ করতে হয় প্রতিদিন, তাদের কোনো সাপ্তাহিক ছুটি নেই। অনেক গৃহকর্মী আছে মাসে একবারও ভাত চোখে দেখেনা, কারন সৌদিরা বেশিরভাগ সময় খবুজ বা রুটি এবং খেপসা খায়, ভাত ছাড়া থাকা নতুন অবস্থায় একটা বিশাল কষ্টের কারন হয়ে দাঁড়ায় নতুনদের জন্যে।

সৌদিদের বাড়িতে একবার প্রবেশ করার পর তাদের অনুমতি ছাড়া এখান থেকে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই, তাই সৌদির কফিল বা মালিক যখন যা বলবে তা করতে বাধ্য বাড়ির গৃহকর্মীরা। তাদের কোনো কথার অবাধ্য হলেই তাদের উপর নেমে আসে অমানবিক, অসহনীয় শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন। অনেক সৌদির নাগরিক তাদের বাড়ির গৃহকর্মীদের যৌন দাসী হিসেবে ব্যবহার করছে।

সকালে ছেলে আর বিকালে বাবা, যখন মন চাচ্ছে তখনই তাদের বিকৃত যৌন বাসনা পূরণ করছে তারা। কেউ নিরুপায় হয়ে মুখ বুঝে এই নির্যাতন সহ্য করছে মাসের পর মাস, কেউ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছে বাড়ি থেকে। আবার অনেকে একবার ছুটি নিয়ে বাড়িতে যেতে পারলে পরবর্তীতে আর ফিরে আসছেনা।

মালিকের বাসায় আকামা, পাসপোর্ট সব রেখে যখন একটি মেয়ে পালিয়ে যায় তখন সে পড়ে আরেক মহা বিপদে, তখন সে ইচ্ছে করলেও দেশে আসতে পারেনা, আর সৌদির বাসায়ও ফিরে যেতে চায়না।বাধ্য হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘোরতে হয়। তখন তাদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু স্বার্থন্বেষী পুরুষ তাদের সহযোগিতা করার কথা বলে ব্ল্যাকমেইল করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করছে। এভাবে বাংলাদেশী শত শত নারী গৃহকর্মীরা পতিতা বৃত্তিতে জড়িয়ে পড়ছে।

সৌদি আরবে অনেক নারী -পুরুষ লীভ টু গেদার করছে, বিয়ে না করে, স্বামী- স্ত্রী না হওয়া সত্বেও তারা স্বামী -স্ত্রী পরিচয় দিয়ে এক সাথে বসবাস করছে বছরের পর বছর।


একদল দালাল চক্র আছে যাদের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে বাংলাদেশ থেকে যুবতী, সুশ্রী মেয়েদের ভালো কাজ এবং ভালো বেতন দেওয়ার কথা বলে এনে পতিতাবৃত্তি করাচ্ছে। সৌদি আরবের প্রশাসনের চোঁখ ফাকি দিয়ে অবৈধ উপায়ে মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে। আকামা, পাসপোর্ট না থাকার কারনে অনেক নারী গৃহকর্মী ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়িতে যেতে পারছেনা।

তবে এটা ঠিক কিছু কিছু নারী গৃহকর্মী প্রকৃত পক্ষে ভালো আছে, তাদের চিত্র ভিন্ন। সৌদি আরবে বেশীরভাগ নারী শ্রমিক ভালো নেই।বিভিন্ন অজ্ঞতা এবং ভয়ভীতির কারনে তারা এম্বাসির সহায়তা নিতে পারছেনা। এম্বিসির সাথে তাদের যোগাযোগ না থাকার কারনে এম্বাসির কর্মকর্তারাও তাদের সহযোগিতা করতে পারচ্ছেনা। বাংলাদেশ সরকারের এখনই উচিত বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *