চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

admin

মিয়ানমার কি তাহলে চীন ও ভারতের চেয়েও শক্তিশালী? 

প্রকাশ: ২০১৭-০৯-০২ ০৯:৫০:২২ || আপডেট: ২০১৭-০৯-০২ ০৯:৫০:২২

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অমানবিক হামলা চালিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী। ভারত ও চীনের মতো শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশ থাকার পরও দেশটি বিতর্কিত সামরিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে বেশ আলোচিত হচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে, সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমার কি তাহলে চীন ও ভারতের চেয়েও শক্তিশালী? এর উত্তর খুঁজতে গেলে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী সম্পর্কে জানতে হবে।

 

আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের চেয়ে আয়তনে প্রায় পাঁচ গুণ বড় মিয়ানমার। ছয় লাখ ৭৬ হাজার ৫৫২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশে জনসংখ্যা বাংলাদেশের অর্ধেক। তবে সশস্ত্র বাহিনীর সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে তাদের সাফল্য ঈর্ষণীয়।

 

মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর অফিসিয়াল নাম টাটমাডো। তবে কাগজে-কলমে ‘দ্য মিলিটারি অব মিয়ানমার’ বলেই ডাকা হয়। টাটমাডো বা দ্য মিলিটারি অব মিয়ানমার পুরোপুরি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ন্ত্রিত হয়।

 

এই সশস্ত্র বাহিনীর সহযোগী বাহিনী আবার দুটি। একটির নাম মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স। অন্যটি পিপলস মিলিশিয়া ইউনিটস অ্যান্ড ফ্রন্টিয়ার ফোর্স, স্থানীয়ভাবে যেটি ‘নাসাকা’ নামেই পরিচিত। পুলিশ ফোর্স দেশের ভেতরের আইনশৃঙ্খলা দেখা-শোনা করলেও নাসাকা মিয়ানমারের সীমান্ত প্রহরার কাজে নিয়োজিত।

 

সব বাহিনী মিলিয়ে মিয়ানমারের মোট সৈন্য সংখ্যা পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার। এর মধ্যে চার লাখ ৯২ হাজারই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। বিশ্বে এর চেয়ে বড় সশস্ত্র বাহিনী আছে মাত্র আটটি দেশের। সে হিসেবে মিয়ানমার বিশ্বে নবম।

 

বিশাল এই বাহিনীর পেছনে খরচও কম নয় দেশটির সরকারের। কোনো তথ্য-উপাত্তেই টাটমাডোর পেছনে সরকারের বার্ষিক খরচ জানা না গেলেও ধারনা করা হয় সংখ্যাটি ৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। কারণ ২০০৫ সালেই এই বাহিনীর জন্য সরকারের বাজেট এই পরিমাণ ছিলো। দিনে দিনে তা আরও বেড়েছে বলাই বাহুল্য।

 

একনজরে যদি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শক্তি-সামর্থ্য নির্ণয় করতে চাই, তাহলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের ওপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যান্তর নেই। সব মিলিয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর শক্তি-সক্ষমতার যে চিত্র ফুটে ওঠে তা অনেকটা এ রকম-

 

দ্য মিলিটারি অব মিয়ানমার

 

এর তিনটি শাখা রয়েছে। যথাক্রমে মিয়ানমার আর্মি, মিয়ানমার নেভি, মিয়ানমার এয়ার ফোর্স। এছাড়া সহযোগী শাখা রয়েছে আরও দুটি। মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স ও পিপলস মিলিশিয়া ইউনিটস অ্যান্ড ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (নাসাকা)।

 

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা চার লক্ষ ৯২ হাজার। এদের প্রত্যেকেই সক্রিয়। মিয়ানমার পুলিশ ফোর্স ও পিপলস মিলিশিয়া ইউনিটস অ্যান্ড ফ্রন্টিয়ার ফোর্স –এই দুই আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৭২ হাজার।

 

সামরিক বাহিনীর হাতে এলটি ট্যাঙ্ক আছে ১০৫টি। ব্যাটের ট্যাঙ্ক আছে ১৫০টি। আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার বা এপিসি আছে ৩২৫টি। যা প্রতিপক্ষের জন্য সত্যিই ভয়ের কারণ। এছাড়া টুয়ার্ড আর্টিলারি আছে ২৭৮ ও মর্টার আছে ৮০টি। এএ গান ৪৬টি।

 

শত্রুপক্ষের সাথে আকাশপথে যুদ্ধ করার জন্য কমব্যাট এয়ারক্র্যাফট আছে ১২৫টি। আকাশ থেকেই শত্রপক্ষের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা করার জন্য ফাইটার গ্র্যাউন্ড অ্যাটাক রয়েছে ২২টি। এছাড়া আরও বিভিন্ন ফাইটার আছে ৫৮টি।

 

রণাঙ্গনে সামরিক সরঞ্জাম বহন করার জন্য ১৫টি পরিবহন বিমানও রয়েছে। সাথে আছে ৬৬টি হেলিকপ্টার। সামরিক বাহিনীর হাতে মিসাইল আছে ১১টি এবং টর্পেডো ১৩টি। ইনসোর রিভারইন ৪৭টি ও ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ১১টি।

 

একইসাথে পাল্লা দিয়ে ব্রিটিশ আমলে তৈরি করা বিভিন্ন রাজ্যের পরিত্যাক্ত বিমানবন্দরগুলোও সম্প্রসারণ করা শুরু করেছে মিয়ানমার সরকার। এর মধ্যে রয়েছে রাখাইন রাজ্যের সর্বপশ্চিমে সিটওয়ে বেসামরিক বিমানবন্দরকে দেশের অন্যতম বড় বিমানবন্দরে পরিণত করা। বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এ বিমানবন্দরটিকে মিয়ানমারের অন্যতম বড় এয়ারফোর্স ঘাঁটি বলেও বিবেচনা করা হয়।

 

সিটওয়ে বিমানবন্দরে মিগ-২৯সহ অন্যান্য আধুনিক জঙ্গি ও বৃহৎ আকারের বোমারু বিমান রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সামরিক গোপন সূত্র মতে, সিটওয়ে বিমান ঘাঁটিতে ২৪টি মিগ-২৯ জঙ্গি বিমান রয়েছে। সাথে আছে সামরিক হেলিপ্যাড।

 

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর তথ্যটি হচ্ছে, এই সিটওয়ে বিমানবন্দরেই একটি শক্তিশালী রাডার স্থাপন করা হয়েছে। বলা হয়, রাডারটি এতোই শক্তিশালী যে, বাংলাদেশের কুমিল্লা অথবা বরিশাল থেকে কোনো বিমান উড্ডয়ন করলেই সেটা মিয়ানমারের এ রাডারে ধরা পড়বে।

 

এছাড়া মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর পক্ষ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়ায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়া দেশটির দুই সামরিক কর্মকর্তার জবান অনুযায়ী, মিলিটারি অব মিয়ানমারের ‘নিউক্লিয়ার ব্যাটালিয়ন’ রয়েছে। দেশটির উত্তরাঞ্চলের সেত পাহাড়ের নোং লেইং পাহাড়ি এলাকায় পরমাণু কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হচ্ছে। যার দায়িত্বে রয়েছে এই নিউক্লিয়ার ব্যাটালিয়ন।

 

ধারনা করা হয়, মিয়ানমারকে পরমাণু প্রকল্পে সাহায্য করছে উত্তর কোরিয়া। গত জুলাই মাসে উত্তর কোরিয়ার সমুদ্র বন্দর থেকে অজ্ঞাত বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে একটি জাহাজ। রহস্যজনক গতিবিধির কারণে প্রথম থেকেই জাহাজটিকে অনুসরণ করে একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ। মার্কিন যুদ্ধজাহাজের পর্যবেক্ষণের কারণে পাঁচ দিন পর কোনো কারণ ছাড়াই আচমকা দিক পরিবর্তন করে উত্তর কোরিয়া ফিরে যায় জাহাজটি। বলা হয়, জাহাজটিতে মিয়ানমারের জন্য পারমাণবিক সরঞ্জাম বহন করা হচ্ছিলো। মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর এই সক্ষমতা চীন ও ভারতের জন্য ততোটা মাথাব্যথার কারণ না হলেও আরেক প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের জন্য বেশ উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের ২৭১ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে অবশ্য ৬৩ কিলোমিটারই জলসীমা। বাকি ২০৮ কিলোমিটার জুড়ে রয়েছে দুর্গম পাহাড়ি অরণ্য ও বিচ্ছিন্ন জনপদ। এর অনেক স্থানে বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর যাতায়াত ততোটা হয় না বললেই চলে। এর ফলে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত যে মোটামুটি অরক্ষিত তা একেবারে দিবালোকের মতোই পরিষ্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *