চট্টগ্রাম, , শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪

admin

প্রবাসে বসে ভোটার হওয়া যাবে যেভাবে

প্রকাশ: ২০১৭-১০-২৯ ২২:৩৯:০৮ || আপডেট: ২০১৭-১০-২৯ ২২:৩৯:০৮

 

এস ডি স্বপন, দুবাই প্রতিনিধি , বীরকন্ঠ :   

প্রবাসে বসবাসরত প্রায় এক কোটি বাংলাদেশিকে ভোটার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে ডেস্ক খোলার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

এসব ডেস্কের মাধ্যমে দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করে প্রবাসীরা সরাসরি ভোটার হতে পারবেন। এর জন্য দূতাবাসে স্থাপন করা হবে লোকাল সার্ভার স্টেশন।

 

এছাড়া সুবিধাজনক স্থানে থাকবে অস্থায়ী নিবন্ধন কেন্দ্র। সেখানে সর্বোচ্চ ২ সপ্তাহের জন্য অবস্থান করে প্রবাসীদের ভোটার করা হবে। দেশের ভোটারদেরর মতো প্রবাসীরাও পাবেন স্মার্ট কার্ড। মধ্য-প্রাচ্যেসহ দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোতে প্রাথমিক পর্যায়ে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও মালয়েশিয়া। প্রবাসীদের ভোটার করা সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবনা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন উইংয়ের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, অতি দ্রুত আমরা প্রবাসীদের ভোটার করার ব্যাপারে কাজ শুরু করব। এ সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবনা কমিশনাররা পর্যালোচনা করছেন। এটা সামনের মাসে কমিশন সভায় উপস্থাপন করা হবে। পরবর্তীতে আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব আকারে পাঠাবো। এটা খুব বড় পদক্ষেপ হবে।

 

ইসি সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রস্তাবে প্রবাসীদের সংখ্যা বিবেচনায় জেলা/প্রদেশ অনুযায়ী ভোটার করার কথা বলা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ লোকার গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে তাদের ভোটার হতে উদ্বুদ্ধ করবে ইসি। দূতাবাসে বৈদেশিক অফিস খুলে লোকার সার্ভার স্থাপন করা। যাতে প্রবাসীরা ছুটির দিনে কিংবা অফ-টাইমে এসে ভোটার হতে পারেন। পাশাপাশি কর্মদিবসে প্রতিনিধি টিমকে সপ্তাহে ২ দিন ছুটি রাখা যেতে পারে।

 

প্রথম পর্যায়ে প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন ফরম পূরণ এবং সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য সংযোজন সাপেক্ষে নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে তথ্য দেয়া যাবে। বাংলাদেশের স্থায়ী ঠিকানা ও পাসপোর্টের স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী নাগরিকরা ভোটার হবেন। দালিলিক প্রমাণ হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি/বিদেশী পাসপোর্টধারী দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ অথবা শনাক্তকারী হিসেবে বাংলাদেশের নাগরিকের পাসপোর্টের ফটোকপি সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি আবেদনকারীর স্থায়ী ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট উপজেলা/থানার নির্বাচন অফিসারকে রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।

 

আর যেসব এলাকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশি সেখানে কয়েকদিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। অনলাইনে আবেদনকারীর আবেদন এন্ট্রির পর একাউন্টে ছবি ও বায়োমেট্রিক ডাটা (১০ আঙ্গুলের ছোট ও চোখের আইরিশ) নির্দিষ্ট স্থান ও তারিখ অবহিত করে গ্রহণ করা হবে। তবে যারা অনলাইনে আবেদনে অক্ষম তাদের তথ্য সংগ্রহের পর একটি প্রিন্ট কপি সংরক্ষণে রাখা হবে।

 

এরপর ভিপিএন সংযোগের মাধ্যমে ছবি ও বায়োমেট্রিক সম্বলিত ডাটা সাময়িকভাবে সার্ভারে আপলোড করা হবে এবং রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে থাকা অনলাইন রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত অফিসিয়াল একাউন্টের মাধ্যমে প্রবাসী নিবন্ধনের ডাটা জমা হয়েছে কি না তা যাচাই করা হবে।

 

সূত্র আরা জানায়, অনলাইন আবেদন ফরম সঠিক থাকলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসার বা রেজিস্ট্রেশন অফিসারের একাউন্টে জমা হবে। সংশ্লিষ্ট অফিসার ভোটারের আবেদন যাচাই ও তদন্ত করে তথ্য প্রদান করবেন, যাতে প্রবাসী শাখা তার ডাটাটি (সংশ্লিষ্ট ভোটারের) মূল সার্ভারে আপলোড করে এবং দ্রুত পরিচয়পত্রটি সংগ্রহ করতে পারেন। পাশাপাশি আবেদনকারী নিবন্ধনে অযোগ্য হলে সে বিষয়টি দ্রুত জানানো হবে।

 

খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভোটার রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম (বিভিআরএস) ও আইটি অভিজ্ঞ ১ জন, টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ১ জন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ৪ জনসহ মোট ৬ সদস্যের টিম গঠন করা হবে। তবে ৪টির বেশি টিম কোন দেশে পাঠানো হলে সুপারভিশন হিসেবে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানোর সুপারিশ থাকছে প্রস্তাবে।

 

উল্লেখ্য, সর্বপ্রথম ইসির ডাটাবেজ ব্যবহার করে প্রবাসীদের ভোটার করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব কমিশনে আসে। কমিশন তাদের এই প্রস্তাবটি সরাসরি নাকচ করে। এর আগে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্যোগটি নিয়েছিল বিদায়ী কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ।

 

তাদের প্রস্তাবে, এনআইডির মাধ্যমে প্রবাসীদের জন্য অনলাইনে বায়োমেট্রিক সংগ্রহের সিদ্ধান্ত ছিল। আগের প্রস্তাব বাদ দিয়ে প্রবাসীদের প্রবাসে থাকাবস্থায় ভোটার করার প্রস্তাব প্রস্তুত করেছে, যা পর্যালোচনার পর শিগগিরই কমিশনে উপস্থাপন করা হবে।

 

এছাড়া ১৯৯৮ সালে দেশের উচ্চ আদালত প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটাধিকার সংবিধান স্বীকৃত বলে ঘোষণা দিলেও দীর্ঘ ১৮ বছরে তাদের সে অধিকার বাস্তবায়ন করা হয়নি। বিশ্বের ১৫৭টি দেশে কোটির উপরে প্রবাসী অবস্থান করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *