চট্টগ্রাম, , বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

Alauddin Lohagara

শীতে ঘোরাঘুরি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবান

প্রকাশ: ২০১৮-০১-০৭ ২১:৩৬:০৭ || আপডেট: ২০১৮-০১-০৭ ২১:৩৬:০৭

বি.কে বিচিত্র,  বান্দরবান জেলা প্রতিনিধিঃ

শীত মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে ভ্রমণপিপাসু মানুষদের বাড়তি চাপ। শীতে কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বান্দরবানে বেড়ানোর জন্য অনেকে ছুটে আসেন দূর পাহাড়ে। আর শীত মৌসুমই হলো পাহাড়ের অরণ্যের জেলা বান্দরবানের দুর্গমাঞ্চলগুলোর দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের উপযুক্ত সময়। ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে প্রকৃতি এ সময় নিজেকে মেলে ধরে আপন সাজে।

বান্দরবানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের খ্যাতি ছড়িয়েছে এরই মধ্যে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশেও। আর তাই এবারের পর্যটন মৌসুম শুরু হতে না হতেই নানা হোটেল-মোটেল আর গেস্ট হাউসে শুরু হয়েছে পর্যটকদের আনাগোনা।

প্রতিবছরের মতো এবারও শীতকে সামনে রেখে বান্দরবানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। বিদেশি পর্যটকদের ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে নীলাচল, মেঘলা, শৈলপ্রপাত ঝরনাসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে।

এ জেলাতেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চূড়া তাজিং ডং এবং কেওক্রাডং পাহাড় অবস্থিত।

চলুন জেনে নেওয়া যাক বান্দরবান সম্পর্কে কিছু তথ্য-

• ইতিহাস

বান্দরবান পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ। এই অঞ্চলটি ১৫৫০ সালের দিকে প্রণীত বাংলার প্রথম মানচিত্রে বিদ্যমান ছিল। তবে এর প্রায় ৬০০ বছর আগে ৯৫৩ সালে আরাকানের রাজা এই অঞ্চল অধিকার করেন। ১২৪০ সালের দিকে ত্রিপুরার রাজা এই এলাকা দখল করেন। ১৫৭৫ সালে আরাকানের রাজা এই এলাকা পুণর্দখল করেন, এবং ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকারে রাখেন। মুঘল সাম্রাজ্য ১৬৬৬ হতে ১৭৬০ সাল পর্যন্ত এলাকাটি সুবা বাংলার অধীনে শাসন করে। ১৭৬০ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই এলাকা নিজেদের আয়ত্তে আনে। ১৮৬০ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হিসাবে যুক্ত হয়। ব্রিটিশরা এই এলাকার নাম দেয় চিটাগাং হিল ট্র্যাক্ট্‌স বা পার্বত্য চট্টগ্রাম। এটি চট্টগ্রাম জেলার অংশ হিসাবে বাংলা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল। ১৯৪৭ সালে এই এলাকা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশের জেলা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়। আশির দশকের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রামকে তিনটি জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান, ও খাগড়াছড়ি-তে বিভক্ত করা হয়।

• ভাষা ও সংস্কৃতি

সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলা প্রচলিত। এ ছাড়াও অন্যান্য ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষা হিসেবে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, লুসাই, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, খেয়াং, খুমী, পাংখুয়া ইত্যাদি প্রচলিত।

• প্রধান উৎসব

বান্দরবানের মারমাদের বর্ষবরণ উৎসবের নাম সাংগ্রাই। এ ছাড়া বড় উৎসবের মধ্যে রয়েছে ওয়াগ্যোয়াই পোয়ে বা প্রবারণা পূর্ণিমা। এ ছাড়া ঈদ-উল ফিতর, ঈদ-উল আজহা, দুর্গা পূজাও সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়।

• বান্দরবানের দর্শনীয় স্থান

বান্দরবান শহরের আশে পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি স্পট। পাহাড়ের চূড়ায় বৌদ্ধ মন্দির (স্বর্ণ মন্দির), মেঘলা পর্যটন কেন্দ্র, শৈলপ্রপাত, রিঝুক ঝর্ণা, নীলাচল, নীলগিরি পাহাড়, তিনাপ সাইতার,নীল দিগন্ত,  রামজাদী, ঘুরে দেখতে পারেন।

• প্রাকৃতিক জলাশয় বগালেক

পাহাড় চূড়ায় সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচুতে প্রাকৃতিক লেক- বগালেক মোহিত করবে আপনাকে। প্রাকৃতিক এ লেকের স্বচ্ছ পানি, দৃষ্টি নন্দন প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার পথের ক্লান্তিকে দূর করবে।

• নীলাচল

জেলা শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রের অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দু্ই হাজার ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চূড়ায় নীলাচল অবস্থিত। গাড়ি এবং পায়ে হেঁটেও সহজে নীলাচলে যাওয়া যায়। পর্যটকের সুবিধার জন্য নীলাচলে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় ওয়াচ টাওয়ার। রাত্রিযাপনের জন্য তৈরি করা হয়েছে মনোমুগ্ধতর কয়েকটি কটেজও।

• নীলগিরি

মেঘের স্পর্শ পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে নীলাচল অথবা নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্রে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্যটন কেন্দ্র নীলগিরি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন হাজার পাঁচশ ফুট এর উচ্চতা। পর্যটকের হাতের মুঠোর ফাঁক দিয়ে ঘুরে বেড়ায় মেঘদল। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এটি তত্ববধান করেন। এখানে রাত্রি যাপন ব্যয়বহুল। রাত্রিযাপনের জন্য আপনাকে তিন-চার মাস আগে থেকেই বুকিং দিতে হবে।

• যেভাবে যাবেন বান্দরবানে

ঢাকা থেকে বান্দরবান যেতে আপিন ২/৩ টি রুট ব্যবহার করতে পারেন। ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে প্রথমে চট্টগ্রাম তারপর চট্টগ্রাম থেকে সোজা বান্দরবান।

ঢাকা থেকে বান্দরবানের উদ্দেশে শ্যামলী, হানিফ, ঈগল, সৌদিয়াসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের গাড়ি রাজধানীর কলাবাগান, ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ থেকে ছেড়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *